Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:২৪, ১৩ এপ্রিল ২০২৫

জাতিসংঘ বলছে—৩৬টি হামলায় নিহত শুধু নারী ও শিশু

গাজা পরিস্থিতি নরকতুল্য: রেডক্রস

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ৩৬টি হাসপাতালের মধ্যে মাত্র ২২টি সীমিত পরিসরে কাজ করছে। ওষুধ, অ্যান্টিবায়োটিক ও ব্লাডব্যাগের সংকট ভয়াবহ। প্রতিনিধি ড. রিক পেপারকর্ন বলেন, ত্রাণ না পৌঁছালে হাসপাতালগুলো কার্যত মৃত্যুপুরীতে পরিণত হবে।

গাজা পরিস্থিতি নরকতুল্য: রেডক্রস
ছবি: সংগৃহীত

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসন এখন যে কোনো মানবিক বিপর্যয়ের চেয়েও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। পরিস্থিতিকে ‘নরকতুল্য’ বলে আখ্যা দিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা রেডক্রস।

একইসাথে জাতিসংঘ জানাচ্ছে, ইসরায়েলের ৩৬টি হামলায় হতাহতদের মধ্যে কেবল নারী ও শিশুরাই নিহত হয়েছেন। মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়া এ জনপদে খাবার, পানি, বিদ্যুৎ এমনকি হাসপাতালের মৌলিক ওষুধের অভাব চরম আকার ধারণ করেছে।

রেডক্রস প্রেসিডেন্টের সতর্কবার্তা: সামনের সপ্তাহে রসদ ফুরিয়ে যাবে

রেডক্রসের প্রেসিডেন্ট মিরজানা স্পোলজারিক শুক্রবার জেনেভায় এক সাক্ষাৎকারে বলেন, গাজার অনেক এলাকায় এখন খাবার, পানি ও বিদ্যুৎ নেই। হাসপাতালগুলোতে সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে রসদ শেষ হয়ে যাবে। এটা একটা নরক, যেখানে চলাফেরা করাও প্রাণনাশের শামিল।

তিনি আরও জানান, গত ৬ সপ্তাহ ধরে গাজায় কোনো আন্তর্জাতিক সহায়তা পৌঁছায়নি। ২ মার্চের পর থেকে ত্রাণবাহী ট্রাক ঢুকতে না দেয়ায় সংকট তীব্রতর হয়েছে। তার ভাষায়, চিকিৎসা সেবা দেয়ার মতো এখন হাতে কিছুই নেই। সহায়তা পৌঁছানো না গেলে হাজারো প্রাণ ঝুঁকিতে পড়বে।

জাতিসংঘের তদন্তে ভয়াবহ চিত্র: ৩৬টি হামলায় নিহত শুধুই নারী-শিশু

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় ১৮ মার্চ থেকে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত গাজায় চালানো ২২৪টি হামলার তথ্য বিশ্লেষণ করেছে। এদের মধ্যে ৩৬টি হামলায় নিহতদের সবাই নারী ও শিশু।

জাতিসংঘের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি জানান, ইসরায়েল যেসব এলাকাকে নিরাপদ ঘোষণা করে সেখানে স্থানান্তরের নির্দেশ দিয়েছে, সেগুলোতেও হামলা চালানো হয়েছে। এ অবরোধ আদেশ আদতে একধরনের জোরপূর্বক স্থানান্তর।

তিনি আরও বলেন, কান ইউনিসের আল-মাওয়াসি এলাকার আশ্রয়কেন্দ্রেও বোমা বর্ষণ চালানো হয়েছে, যেখানে ফিলিস্তিনিদের নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছিলো। অবরোধ ও দখলের মাধ্যমে গাজাকে টুকরো টুকরো করে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হচ্ছে।

চলমান হামলায় ফিলিস্তিনি নারীদের ওপর টার্গেটেড সহিংসতা?

৬ এপ্রিল দেইর আল বালাহতে আবু ইসা পরিবারের বাড়িতে চালানো বোমা হামলায় নিহত হন এক তরুণী, চার নারী ও চার বছর বয়সী এক শিশু। এমনই আরও অসংখ্য ঘটনায় ইসরায়েলি বাহিনীর লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছে নারী ও শিশুরা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ৩৬টি হাসপাতালের মধ্যে মাত্র ২২টি সীমিত পরিসরে কাজ করছে। ওষুধ, অ্যান্টিবায়োটিক ও ব্লাডব্যাগের সংকট ভয়াবহ। প্রতিনিধি ড. রিক পেপারকর্ন বলেন, ত্রাণ না পৌঁছালে হাসপাতালগুলো কার্যত মৃত্যুপুরীতে পরিণত হবে।

বিক্ষোভকারী সেনাদের বরখাস্তের ঘোষণা

গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতার প্রতিবাদ করে প্রকাশিত এক খোলা চিঠিতে সই করা রিজার্ভ সেনাদের সবাইকে বরখাস্ত করার ঘোষণা দিয়েছে আইডিএফ। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা এপি-কে দেয়া বিবৃতিতে বলেন, সামরিক অবস্থানে থেকে প্রকাশ্য বিবৃতি দেয়া শৃঙ্খলা লঙ্ঘনের সামিল। এতে বাহিনীর আভ্যন্তরীণ আস্থা ও কমান্ড ভেঙে পড়ে।

ফিলিস্তিন এখন এক চিৎকারহীন গণকবরে পরিণত

গাজায় যেভাবে নারী ও শিশুদের নিশানা করা হচ্ছে, তা শুধু যুদ্ধাপরাধ নয়—এ এক গণহত্যার পূর্বাভাস। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যর্থতা, সহযোগী রাষ্ট্রগুলোর নীরবতা এবং নিরাপত্তা পরিষদের পক্ষপাতমূলক ভূমিকা—সব মিলিয়ে গাজাবাসী এখন চিৎকার করলেও, শোনার কেউ নেই।

এখন প্রশ্ন—এ নরক থেকে ফিলিস্তিনিদের মুক্তির পথ কোথায়? আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কি শুধুই পৃষ্ঠার শিরোনাম হয়ে থাকবে?

সবার দেশ/এমকেজে