ভারতের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা
বাংলাদেশের মন্তব্য অপ্রয়োজনীয়: ভারত

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে নতুন ওয়াকফ (সংশোধনী) আইনকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় বাংলাদেশকে জড়ানোর অভিযোগে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। একই সঙ্গে ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিমদের ‘পূর্ণ নিরাপত্তা’ নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়।
এর জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের এ মন্তব্যকে ‘অপ্রয়োজনীয়’ ও ‘লোক দেখানো’ বলে উল্লেখ করেছেন।
জয়সওয়াল বলেন, বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর চলমান নির্যাতনের বিষয়ে ভারতের উদ্বেগের সঙ্গে তুলনা করার জন্য এটি একটি ছদ্মবেশী ও ছলনাপূর্ণ প্রচেষ্টা। সেখানে এ ধরনের অপরাধের দায়ীরা এখনও মুক্তভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অযৌক্তিক মন্তব্যের পরিবর্তে বাংলাদেশ যদি নিজেদের সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষায় মনোযোগ দেয়, তবে তা আরও ফলপ্রসূ হবে।
আরও পড়ুন <<>> ভারতের মুসলিমদের নিরাপত্তার আহ্বান
গত সপ্তাহে মুসলিম-অধ্যুষিত মুর্শিদাবাদ জেলায় ওয়াকফ সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বিক্ষোভের সময় সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এ বিক্ষোভ মালদা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, এবং হুগলি জেলায়ও বিস্তৃত হয়, যেখানে আগুন লাগানো, ইটপাটকেল নিক্ষেপ, এবং রাস্তা অবরোধের ঘটনা ঘটে। বিক্ষোভকারীরা এ আইনকে সংখ্যালঘুদের অধিকার খর্ব করার প্রচেষ্টা হিসেবে অভিহিত করে, যার বিরুদ্ধে অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের নেতৃত্বে দেশজুড়ে প্রতিবাদ হয়েছে।
বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বৃহস্পতিবার বলেন, মুর্শিদাবাদের সহিংসতায় বাংলাদেশকে জড়ানোর যেকোনো চেষ্টাকে আমরা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করি। ভারত সরকার ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রতি সংখ্যালঘু মুসলিম জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানাই।
ওয়াকফ সংশোধনী আইন নিয়ে বিতর্ক তীব্র হয়েছে, যেখানে বিরোধী দলগুলো এটিকে অসাংবিধানিক ও সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনকারী হিসেবে অভিহিত করেছে। ভারতের সুপ্রিম কোর্টে এ আইনের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে চারটি পিটিশন দায়ের করা হয়েছে।
এদিকে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের বিভিন্ন জেলায় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, মন্দির, এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে, যার প্রতিবাদে সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলন শুরু হয়।
উভয় দেশের মধ্যে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে এ পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দুই দেশের সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
সবার দেশ/কেএম