Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:৪৬, ২০ এপ্রিল ২০২৫

স্বাধীনতার নতুন লড়াই

ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভে ফের উত্তাল যুক্তরাষ্ট্র

ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভে ফের উত্তাল যুক্তরাষ্ট্র
ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিক্ষোভের ঢেউ উঠেছে। শনিবার (১৯ এপ্রিল, ২০২৫) দেশটির ৫০টি অঙ্গরাজ্যে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির বিরোধিতা করেছেন। এ বিক্ষোভকে আমেরিকানরা ‘স্বাধীনতার জন্য নতুন লড়াই’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। বিক্ষোভের নাম দেয়া হয়েছে ‘৫০৫০১’, যার অর্থ ৫০টি অঙ্গরাজ্যে ৫০টি বিক্ষোভের এক অভিন্ন আন্দোলন।

এ কর্মসূচি আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধের ২৫০তম বার্ষিকীর সঙ্গে মিলিয়ে আয়োজিত হয়েছে।

বিক্ষোভের চিত্র ও কারণ

শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে ট্রাম্পবিরোধী স্লোগানে মুখরিত ছিলো রাজপথ। হোয়াইট হাউস, টেসলার কার্যালয়সহ দেশের কেন্দ্রীয় শহরগুলোতে বিক্ষোভকারীরা জমায়েত হয়। তারা ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি, বিশেষ করে অভিবাসন, চাকরি হ্রাস এবং রাজনৈতিক সহিংসতার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অনেকে এল সালভাদরের নাগরিক কিলমার আব্রেগো গার্সিয়ার নির্বাসনের প্রতিবাদে তাকে ফিরিয়ে আনার দাবি জানান। গত ১৫ মার্চ ট্রাম্প প্রশাসন তাকে এল সালভাদরে নির্বাসিত করে।

বিক্ষোভকারীরা ট্রাম্পের ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি (ডিওজিই)-এর সাম্প্রতিক পদক্ষেপেরও তীব্র নিন্দা করেছেন, যার ফলে হাজার হাজার কর্মী চাকরি হারিয়েছেন। এছাড়া, ট্রাম্পের নীতিকে ‘অভিবাসীবিরোধী’ ও ‘আইনের শাসনবিরোধী’ বলে অভিহিত করা হয়েছে।

প্রতীকী স্লোগান ও শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ

বিক্ষোভ সাধারণত শান্তিপূর্ণ ছিলো, যদিও কিছু উত্তেজনার ঘটনা লক্ষ্য করা গেছে। ডেমোক্রেট দলের প্রতিনিধি সুহাস সুব্রহ্মণ্যম এক্স-এ একটি ভিডিও পোস্ট করেন, যেখানে একজন ট্রাম্প সমর্থক রাগান্বিতভাবে বিক্ষোভকারীদের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। বিক্ষোভে অনেকে ‘নো কিংস’ লেখা পোস্টার প্রদর্শন করেন, যা আমেরিকান বিপ্লবের সময় ইংরেজ রাজতন্ত্রবিরোধী প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল। এটি ট্রাম্পের নীতিকে ‘স্বৈরাচারী’ হিসেবে চিহ্নিত করার প্রতীকী প্রয়াস।

ট্রাম্পের ক্রমহ্রাসমান জনপ্রিয়তা

গ্যালাপের সর্বশেষ জনমত জরিপ অনুযায়ী, ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা কমে ৪৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে দ্বিতীয় দফায় দায়িত্ব গ্রহণের সময় এ হার ছিলো ৪৭ শতাংশ। তুলনামূলকভাবে, ১৯৫২ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত মার্কিন প্রেসিডেন্টদের প্রথম কোয়ার্টারের গড় জনপ্রিয়তা ছিল ৬০ শতাংশ। জনমত জরিপের এ তথ্য ট্রাম্পের প্রতি ক্রমবর্ধমান অসন্তোষের ইঙ্গিত দেয়।

প্রেক্ষাপট ও তাৎপর্য

এপ্রিলের শুরুতে ‘হ্যান্ডস অফ’ নামে আরেকটি বিক্ষোভে বিপুলসংখ্যক মানুষ অংশ নিয়েছিলো, যা ট্রাম্পের নীতির বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান জনরোষের প্রতিফলন। বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক সহিংসতা ক্রমশ স্বাভাবিক হয়ে উঠছে। ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি, অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত এবং প্রশাসনিক পদক্ষেপের কারণে অনেক আমেরিকান তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।

বিক্ষোভকারীরা এ আন্দোলনকে আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধের ২৫০তম বার্ষিকীর সঙ্গে তুলনা করেছেন। তারা বলছেন, ট্রাম্পের নীতি আমেরিকার গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিপন্থী। এ বিক্ষোভ কেবল ট্রাম্পের বিরুদ্ধে নয়, বরং তার প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত ধনকুবের ইলন মাস্কের প্রভাবের বিরুদ্ধেও ছিলো।

যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভ ক্রমশ তীব্র হচ্ছে। ‘৫০৫০১’ বিক্ষোভের মাধ্যমে আমেরিকানরা তাদের অসন্তোষ ও গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার দাবি জানাচ্ছেন। শান্তিপূর্ণ হলেও এ আন্দোলন রাজনৈতিক মেরুকরণ ও উত্তেজনার ইঙ্গিত দেয়। ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা হ্রাস এবং জনমতের পরিবর্তন আগামী দিনে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।

সবার দেশ/কেএম