কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলা: দু’দেশের উত্তেজনা চরমে
পাকিস্তানের পাল্টা প্রস্তুতি ভারতের বিরুদ্ধে

ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে ২২ এপ্রিল, ২০২৫-এ সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন পর্যটক নিহত ও ১৭ জন আহত হওয়ার ঘটনায় ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। ভারত এ হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত, পাকিস্তানি নাগরিকদের ভারত ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা, প্রধান সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ, এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক হ্রাস।
এ পদক্ষেপগুলোকে পাকিস্তান আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন ও অপরিণত তাড়াহুড়োর সিদ্ধান্ত হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। পাকিস্তান অভিযোগ করেছে, ভারত কোনও প্রমাণ ছাড়াই তাদের দোষারোপ করছে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল, ২০২৫) জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির সঙ্গে বৈঠকের পর ভারতের পদক্ষেপের পাল্টা প্রতিক্রিয়া ঘোষণা করবেন। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার ভারতের প্রতিক্রিয়াকে ‘অপরিণত’ ও ‘তাড়াহুড়ো’ বলে সমালোচনা করেছেন, উল্লেখ করে যে ভারত কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করেনি। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হামলায় নিহতদের প্রতি শোক প্রকাশ করেছে এবং ঘটনার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছে।
হামলার দায় স্বীকার করেছে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ) নামে একটি জঙ্গি গোষ্ঠী, যাকে ভারত পাকিস্তান-ভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়বার শাখা বলে দাবি করে। গোষ্ঠীটি জানিয়েছে, কাশ্মীরে বহিরাগত বসতি স্থাপনের প্রতিবাদে এ হামলা চালানো হয়েছে। ভারতীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলো টিআরএফ-কে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর সমর্থনপুষ্ট বলে অভিযোগ করেছে, যদিও পাকিস্তান এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, ভারতের এ পদক্ষেপ, বিশেষ করে ১৯৬০ সালের সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতকরণ, পারমাণবিক অস্ত্রধারী দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলবে। এ চুক্তি দীর্ঘদিন ধরে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা সত্ত্বেও টিকে ছিল। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ এ সিদ্ধান্তকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেছেন এবং জানিয়েছেন, পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদের শিকার, এর উদ্ভাবক নয়।
কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরোধ রয়েছে, যা ১৯৪৭ সালের ভারত বিভাজনের পর থেকে দুটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ ও একটি সীমিত সংঘাতের কারণ হয়েছে। সাম্প্রতিক এ হামলা ভারতের দাবিকে—যে কাশ্মীরে সন্ত্রাসী সহিংসতা কমে এসেছে—বড় ধরনের ধাক্কা দিয়েছে। বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন, ভারতের কঠোর পদক্ষেপ এবং পাকিস্তানের সম্ভাব্য পাল্টা ব্যবস্থা উপমহাদেশে সংঘাতের আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলতে পারে।
সবার দেশ/কেএম