Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:৫৬, ২৪ এপ্রিল ২০২৫

আপডেট: ১২:০১, ২৪ এপ্রিল ২০২৫

ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি, নেতানিয়াহুর জরুরি বৈঠক

দাবানলে পুড়ছে ইসরায়েল

দাবানলে পুড়ছে ইসরায়েল
ছবি: সংগৃহীত

ইসরায়েলে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং প্রবল বাতাসের কারণে ছড়িয়ে পড়া ভয়াবহ দাবানল দেশটির মধ্যাঞ্চলের একাধিক শহরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে। 

মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল, ২০২৫) মোশাভ তারুমের কাছে শুরু হওয়া এ আগুন দ্রুত ছড়িয়ে বেইত শেমেশ, এশতাওল, বেইত মেইর, মেসিলাত জিওন, পেতাহিয়া এবং পেদায়া শহরে পৌঁছে যায়। আগুনের তীব্রতা এতটাই বেশি যে এটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে, ফলে হাজার হাজার বাসিন্দাকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। 

জেরুজালেমের দিকে যাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক (রুট ১) এবং রুট ৬ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। রেললাইনে আগুন লাগায় ট্রেন চলাচলও স্থগিত রয়েছে। জেরুজালেম, যা দাবানলের কেন্দ্র থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে, সেখানেও ধোঁয়ায় আকাশ আচ্ছন্ন এবং বাতাসের মান উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।

আগুনের বিস্তার ও ক্ষয়ক্ষতি

আনাদোলু এজেন্সির প্রতিবেদন অনুসারে, তীব্র বাতাস এবং শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। বেইত শেমেশের উত্তরাঞ্চলে আগুন সবচেয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বাসিন্দারা তাদের যানবাহন ফেলে রেখে শহর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত ফুটেজে দেখা গেছে, রেহোভোটের কাছে মহাসড়কে মানুষ ধোঁয়ার মধ্যে পায়ে হেঁটে নিরাপদ স্থানের দিকে যাচ্ছে। আগুনের কারণে শত শত হেক্টর বনভূমি, কৃষিজমি এবং আবাসিক এলাকা ধ্বংস হয়েছে। প্রাথমিক হিসেবে বেশ কয়েকটি বাড়ি এবং অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যদিও সঠিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও নির্ধারণ করা হয়নি।

আগুন নিয়ন্ত্রণে প্রচেষ্টা

ইসরায়েলের ফায়ার অ্যান্ড রেসকিউ অথরিটি জানিয়েছে, আগুন নেভাতে ছয়টি জেলা থেকে প্রায় ১১০টি অগ্নিনির্বাপক দল, ১১টি অগ্নিনির্বাপক বিমান এবং একটি হেলিকপ্টার মোতায়েন করা হয়েছে। ইসরাইল ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ), ইসরাইলি বিমান বাহিনী, পুলিশ এবং উদ্ধার সংস্থাগুলোও এ প্রচেষ্টায় যোগ দিয়েছে। আগুন নেভানোর কাজে জড়িত সাতজন দমকলকর্মী এবং দুজন বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর বলে জানা গেছে।

পুলিশ দাবানলপ্রবণ এলাকায় পর্বতারোহী এবং ভ্রমণকারীদের খুঁজে বের করতে তল্লাশি চালাচ্ছে। জনসাধারণকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা থেকে দূরে থাকার এবং সরকারি নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানানো হয়েছে।

নেতানিয়াহুর জরুরি বৈঠক

বুধবার (২৩ এপ্রিল, ২০২৫) রাতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু অ্যাডহক কমান্ড সেন্টারে জরুরি বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠকে দাবানল মোকাবিলা, উদ্ধার কার্যক্রম, এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। নেতানিয়াহু স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন এবং জনগণের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়ার কথা বলেছেন। তিনি আগুন নিয়ন্ত্রণে আন্তর্জাতিক সহায়তার সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখার কথা জানিয়েছেন।

পরিবেশগত ও সামাজিক প্রভাব

ফায়ার অ্যান্ড রেসকিউ অথরিটির মুখপাত্র জানিয়েছেন, জেরুজালেমে ধোঁয়ার কারণে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা বাড়ছে। স্থানীয় হাসপাতালগুলো আহতদের চিকিৎসা ও সম্ভাব্য নতুন রোগীদের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। দীর্ঘ শুষ্ক গ্রীষ্ম এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ইসরায়েলে দাবানলের ঝুঁকি বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এ ঘটনা দেশটির দাবানল প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনা কৌশল পুনর্বিবেচনার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে।

ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি

ইসরায়েলে এর আগেও একাধিকবার দাবানলের ঘটনা ঘটেছে। ২০১০ সালে কারমেল ফরেস্টের দাবানলে ৪৪ জন নিহত হয়েছিলো, যা দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে মারাত্মক দাবানল হিসেবে বিবেচিত। ২০১৬ সালেও হাইফা শহরে ব্যাপক দাবানল ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুষ্ক গ্রীষ্ম এবং ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার কারণে এ ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে আরও ঘন ঘন হতে পারে।

চলমান পরিস্থিতি

বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল, ২০২৫) সকাল পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি। বেইত শেমেশের উত্তরাঞ্চল এবং রুট ১-এর কাছে আগুন এখনও সক্রিয় রয়েছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগামী কয়েক দিন আবহাওয়ার পূর্বাভাস পর্যালোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। এদিকে, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বাসিন্দাদের জন্য অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। 

এ দাবানল ইসরায়েলের জন্য একটি জাতীয় জরুরি অবস্থা সৃষ্টি করেছে। সরকার এবং স্থানীয় সংস্থাগুলো পরিস্থিতি সামাল দিতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে, তবে প্রকৃতির এ তাণ্ডব কবে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসবে, তা এখনও অনিশ্চিত।

সবার দেশ/কেএম