Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৩:৩৭, ২৪ এপ্রিল ২০২৫

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার নতুন মোড়

পাকিস্তান ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণে প্রস্তুত, সতর্ক ভারত 

পাকিস্তান ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণে প্রস্তুত, সতর্ক ভারত 
ছবি: সংগৃহীত

কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে ২২ এপ্রিল, ২০২৫-এ সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক চরমভাবে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। এ হামলার জেরে দুই দেশই কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। এর মধ্যেই পাকিস্তান করাচি উপকূল থেকে সারফেস-টু-সারফেস ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার নোটিশ জারি করেছে। 

ভারতীয় সংবাদসংস্থা এএনআই প্রতিরক্ষা সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, এ পরীক্ষা ২৪-২৫ এপ্রিল, ২০২৫-এ পাকিস্তানের এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোনে (ইইজেড) অনুষ্ঠিত হবে। ভারতীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলো এ উন্নয়নের উপর কড়া নজর রাখছে।

ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার বিস্তারিত

এএনআই-এর প্রতিবেদন অনুসারে, পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ ২৩ এপ্রিল রাত ৯:৩০ টায় (ভারতীয় সময়) এ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার নোটিশ জারি করে, যখন ভারতের ক্যাবিনেট কমিটি অন সিকিউরিটি (সিসিএস) পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে জরুরি বৈঠকে বসেছিলো। এ সময়ের মিল উত্তেজনার তীব্রতা আরও বাড়িয়ে তুলেছে। পাকিস্তান এ পরীক্ষা সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি, তবে ভারতীয় প্রতিরক্ষা সূত্রগুলো জানিয়েছে, এটি পাকিস্তানের শক্তি প্রদর্শনের একটি কৌশল হতে পারে।

আরও পড়ুন <<>> পাকিস্তানের পাল্টা প্রস্তুতি ভারতের বিরুদ্ধে

পাকিস্তানের ক্ষেপণাস্ত্র প্রোগ্রামে সাম্প্রতিক অগ্রগতির মধ্যে শাহিন-৩ ক্ষেপণাস্ত্র উল্লেখযোগ্য, যার আনুমানিক পরিসর ২,৭৫০ কিলোমিটার। এ ক্ষেপণাস্ত্র ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ পর্যন্ত আঘাত হানতে সক্ষম। যদিও এ পরীক্ষার জন্য নির্দিষ্ট ক্ষেপণাস্ত্রের ধরন প্রকাশ করা হয়নি, তবে এটি পাকিস্তানের কৌশলগত সক্ষমতা প্রদর্শনের অংশ হতে পারে।

পহেলগাঁও হামলা ও ভারতের প্রতিক্রিয়া

পহেলগাঁওয়ের বাইসারান মেডোতে সংঘটিত এ হামলার দায় স্বীকার করেছে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ), যাকে ভারত পাকিস্তান-ভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়বার একটি শাখা বলে মনে করে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষের দাবি, টিআরএফ পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর সমর্থনে কাজ করে। এ হামলায় ২৫ জন ভারতীয় এবং একজন নেপালি নাগরিক নিহত হন, যা ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর কাশ্মীরের সবচেয়ে মারাত্মক হামলাগুলির একটি।

আরও পড়ুন <<>> পাকিস্তানিদের ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ভারত ছাড়ার নির্দেশ

হামলার পর ২৩ এপ্রিল ভারতের সিসিএস, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে, জরুরি বৈঠকে বসে এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পাঁচটি কঠোর পদক্ষেপ ঘোষণা করে। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, এ হামলা জম্মু-কাশ্মীরে সফল নির্বাচন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের সময়ে অঞ্চলটিকে অস্থিতিশীল করার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিত ছিল। ঘোষিত পদক্ষেপগুলি হলো:

  • সিন্ধু জলবন্টন চুক্তি স্থগিত: ১৯৬০ সালের এই চুক্তি ততক্ষণ স্থগিত থাকবে, যতক্ষণ না পাকিস্তান সীমান্ত পারের সন্ত্রাসবাদের সমর্থন সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার করে।
  • আটারি চেকপোস্ট বন্ধ: পাঞ্জাবের সমন্বিত আটারি চেকপোস্ট অবিলম্বে বন্ধ করা হয়েছে। বৈধ অনুমোদন নিয়ে পারাপারকারীরা ১ মে, ২০২৫-এর আগে ফিরতে পারবেন।
  • সার্ক ভিসা সুবিধা বাতিল: পাকিস্তানি নাগরিকদের সার্ক ভিসা ছাড়পত্র (এসভিইএস) সুবিধা বাতিল করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ইস্যুকৃত ভিসা বাতিল করা হয়েছে, এবং ভারতে অবস্থানরত পাকিস্তানি নাগরিকদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেশ ছাড়তে হবে।
  • পাকিস্তানি সামরিক উপদেষ্টাদের বহিষ্কার: দিল্লিতে পাকিস্তানি হাইকমিশনে কর্মরত প্রতিরক্ষা, সেনা, বিমান ও নৌবাহিনীর উপদেষ্টাদের ‘পার্সোনা নন গ্রাটা’ ঘোষণা করা হয়েছে। তাদের এক সপ্তাহের মধ্যে ভারত ছাড়তে হবে। ভারতও ইসলামাবাদ থেকে তার সামরিক উপদেষ্টাদের ফিরিয়ে আনবে।
  • দূতাবাসের কর্মী সংখ্যা হ্রাস: দুই দেশের দূতাবাসে কর্মী সংখ্যা ৫৫ থেকে কমিয়ে ৩০-এ নামিয়ে আনা হবে, যা ১ মে, ২০২৫ থেকে কার্যকর হবে।

এছাড়া, ভারত পাকিস্তানের শীর্ষ কূটনীতিক সাদ আহমদ ওয়াররাইচকে তলব করে সামরিক উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক ‘পার্সোনা নন গ্রাটা’ নোট হস্তান্তর করে।

পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া

ভারতের এ পদক্ষেপের জবাবে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ ২৪ এপ্রিল জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির (এনএসসি) জরুরি বৈঠক ডাকেন। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ এ বৈঠকের প্রস্তুতি নিচ্ছেন, যেখানে ভারতের ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন পদক্ষেপ’ এবং পহেলগাঁও হামলাকে ‘মিথ্যা ফ্ল্যাগ অপারেশন’ হিসেবে উল্লেখ করে পাল্টা পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা হবে। জিও নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, এ বৈঠকে ইসলামাবাদ ভারতের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কঠোর জবাব দেয়ার পরিকল্পনা করছে।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হামলার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছে এবং ভারতের অভিযোগকে ‘প্রমাণহীন’ ও ‘তাড়াহুড়ো’ বলে সমালোচনা করেছে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার ভারতের প্রতিক্রিয়াকে ‘অপরিণত’ ও ‘শিশুসুলভ’ বলে উল্লেখ করেন।

আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট

পহেলগাঁও হামলা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যাপক নিন্দা কুড়িয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভারতের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছে। তবে পাকিস্তানের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার ঘোষণা এ উত্তেজনাকে আরও জটিল করে তুলেছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এ পরীক্ষা পাকিস্তানের পক্ষ থেকে ভারতের কঠোর পদক্ষেপের জবাবে একটি ‘শক্তি প্রদর্শন’ হতে পারে, যা দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক গতিশীলতাকে আরও অস্থিতিশীল করতে পারে।

বিশ্লেষণ ও সম্ভাব্য প্রভাব

পাকিস্তানের এ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার ঘোষণা এমন এক সময়ে এসেছে, যখন ভারত সিন্ধু জলবন্টন চুক্তি স্থগিত করার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের একটি স্থিতিশীল চুক্তি ছিলো। এ পরীক্ষা ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ককে আরও তিক্ত করতে পারে এবং সীমান্তে সামরিক উত্তেজনা বাড়াতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, পারমাণবিক অস্ত্রধারী দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে এ পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপ উপমহাদেশে সংঘাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। পাকিস্তানের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার প্রকৃতি এবং উদ্দেশ্য সম্পর্কে আরও তথ্য প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত ভারতীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলো উচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকবে।

এ ঘটনা দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতির উপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষ করে কাশ্মীর ইস্যুতে দুই দেশের মধ্যে চলমান বিরোধের প্রেক্ষাপটে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি এখন ভারত ও পাকিস্তানের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে নিবদ্ধ রয়েছে।

সবার দেশ/কেএম