বাণিজ্য বন্ধ ঘোষণা
পাকিস্তানের আকাশ ও স্থলপথে ভারতীয়দের নিষেধাজ্ঞা

ভারত-নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) সশস্ত্র হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনার পর ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্কে নতুন করে টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। ভারত এ হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে বুধবার (২৩ এপ্রিল) একাধিক কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নেয়া ভারতের পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত, আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ, পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য সার্ক ভিসা বাতিল এবং ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভারত ছাড়ার নির্দেশ।
পাকিস্তানও এর জবাবে বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ভারতের বিরুদ্ধে কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফের নেতৃত্বে জরুরি বৈঠকে নিম্নলিখিত সিদ্ধান্ত নিয়েছে:
- সিমলা চুক্তি বাতিল: ১৯৭২ সালের এই চুক্তি ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হতো। এটি বাতিলের ঘোষণা দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কে গভীর সংকটের ইঙ্গিত দেয়।
- ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ: পাকিস্তান তাৎক্ষণিকভাবে ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ করেছে, যা দুই দেশের মধ্যে প্রধান স্থল যোগাযোগ পথ।
- ভারতীয় বিমানের উপর নিষেধাজ্ঞা: পাকিস্তান তার আকাশসীমায় ভারতীয় মালিকানাধীন বা ভারত পরিচালিত সকল বিমানের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে।
- বাণিজ্য বন্ধ: ভারতের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য স্থগিত করা হয়েছে। পাকিস্তানের মাধ্যমে তৃতীয় দেশের পণ্য ভারতে প্রবেশ বা বের হওয়াও নিষিদ্ধ।
- ভিসা বাতিল: সার্কের আওতায় ভারতীয় নাগরিকদের জন্য বিশেষ ভিসা সুবিধা বাতিল করা হয়েছে। এ ভিসাধারী ভারতীয়দের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তান ছাড়তে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
- কূটনৈতিক পদক্ষেপ: ইসলামাবাদে ভারতীয় হাইকমিশনের সামরিক উপদেষ্টাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে এবং কূটনীতিকদের সংখ্যা ৫৫ থেকে ৩০-এ নামিয়ে আনার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যা ৩০ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে।
- সিন্ধু পানি চুক্তি নিয়ে সতর্কতা: ভারতের সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়ে পাকিস্তান হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে, সিন্ধু নদের পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করা হলে তা ‘যুদ্ধের কাজ’ হিসেবে বিবেচিত হবে এবং সে অনুযায়ী জবাব দেয়া হবে।
ভারত দাবি করেছে, পেহেলগাম হামলার সঙ্গে পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তাইয়েবার শাখা ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (আরটিএফ) জড়িত, এবং এতে পাকিস্তানের পরোক্ষ সমর্থন রয়েছে। তবে পাকিস্তান এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে এবং হামলার নিন্দা জানিয়েছে।
এ পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপ দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলেছে। সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতের ফলে পাকিস্তানের কৃষি ও জনজীবনে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে। একইভাবে, বাণিজ্য বন্ধ ও আকাশসীমা নিষেধাজ্ঞা ভারতের বাণিজ্যিক ও ভ্রমণ খাতে প্রভাব ফেলবে। দুই পক্ষের এ কঠোর অবস্থান আঞ্চলিক উত্তেজনা বাড়াচ্ছে, এবং পরিস্থিতি যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছানোর আশঙ্কা তৈরি করেছে।
সূত্র: আলজাজিরা
সবার দেশ/কেএম