Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ০১:০৮, ২৬ এপ্রিল ২০২৫

সাবেক মুখ্যমন্ত্রীর সাক্ষাৎকারে উঠে এলো নির্মম বাস্তবতা

কাশ্মীর: বিশ্বের উন্মুক্ত কারাগার

কাশ্মীর: বিশ্বের উন্মুক্ত কারাগার
ছবি: সংগৃহীত

জম্মু ও কাশ্মীর, যেখানে স্বাধীনতা কেবল একটি শব্দ, বাস্তবে নয়। সীমাহীন সেনা চৌকি, কঠোর কারফিউ, মতপ্রকাশের অধিকারহীনতা এবং নজরদারির মধ্যে কাশ্মীরের মানুষের জীবন একটি ‘উন্মুক্ত কারাগারে’ পরিণত হয়েছে। 

২০১৯ সালে ভারতের বিজেপি সরকার কর্তৃক ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের পর এ অঞ্চল আরও গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত। এ প্রেক্ষাপটে কাশ্মীরকে ‘দ্বিতীয় গাজা’র সঙ্গে তুলনা করা যেন বাস্তবতার নির্মম প্রতিচ্ছবি। 

কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির (পিডিপি) নেত্রী মেহবুবা মুফতি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, কাশ্মীর একটি উন্মুক্ত কারাগার, যেখানে সবকিছু নজরদারির মধ্যে রাখা হয়। ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের পর জনগণ তাদের মৌলিক অধিকার হারিয়েছে। নিরাপত্তার অজুহাতে পুরো অঞ্চলকে বন্দি করা হয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন কাশ্মীরের মানুষ আক্রমণের মুখোমুখি। এটি এমন এক কারাগার, যেখানে খোলা আকাশের নিচেও মানুষ শ্বাস নিতে পারে না। তিনি সরকারের দমনমূলক নীতিকে ‘অস্বাভাবিক’ ও ‘নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের’ প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করেন।

কাশ্মীরের ঐতিহাসিক পটভূমি 

কাশ্মীর সমস্যার শিকড় ১৯৪৭ সালের ভারত-পাকিস্তান বিভাজনের সময়ে। মহারাজা হরি সিংয়ের ভারতীয় ইউনিয়নে যোগদানের সিদ্ধান্তের পর থেকে এ অঞ্চল ভূ-রাজনৈতিক ও সামরিক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে। ভারতের সংবিধানে ৩৭০ অনুচ্ছেদের মাধ্যমে কাশ্মীরকে বিশেষ স্বায়ত্তশাসন দেওয়া হয়েছিল, যা ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট বাতিল করা হয়। এর ফলে জম্মু ও কাশ্মীর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত হয়, এবং এখানকার রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার সংকুচিত হয়। 

মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভয়াবহ চিত্র
  
স্থানীয় মানবাধিকার সংগঠনের তথ্য অনুযায়ী, গত সাত দশকে কাশ্মীরে ১,৬৫,৪০০ বেসামরিক নাগরিক গ্রেফতার, ১,১০,৪৯৮ কাঠামো ধ্বংস, ১,০৭,৮৮০ শিশু এতিম, ৯৬,১৪৮ জনের বিচারবহির্ভূত হত্যা, ২২,৯৫০ নারী বিধবা, ১০,১২৫ জন গুম, ৭,২৭৪ জন জেল হেফাজতে হত্যা এবং ১১,২৫৬ গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এ পরিসংখ্যান কাশ্মীরের মানুষের দীর্ঘ দুর্দশার ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরে। 

মেহবুবা মুফতির অবস্থান  

মেহবুবা মুফতি ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলকে ‘অসাংবিধানিক ও অবৈধ’ আখ্যা দিয়ে এর পুনর্বহালের জন্য সংগ্রামের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, এটি কেবল কাশ্মীরের পরিচয় নয়, ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের সেতু ছিলো। ২০১৯ সালে তাকে গৃহবন্দি করা হয়, এবং ২০২০ সালে সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপে মুক্তি পান। তিনি শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিকভাবে কাশ্মীরের অধিকার ফিরিয়ে আনার পক্ষে কথা বলেন।

বর্তমান পরিস্থিতি

প্রায় ৭-৮ লাখ সেনা সদস্য, পুলিশ, আধাসামরিক বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার উপস্থিতিতে কাশ্মীর একটি সামরিক বেষ্টনীতে পরিণত হয়েছে। মুফতি অভিযোগ করেন, সরকারের দাবি সত্ত্বেও কাশ্মীরে স্বাভাবিকতা নেই। তিনি বলেন, যদি সবকিছু ঠিক থাকে, তাহলে কেনো এত নজরদারি? কেনো হাজার হাজার মানুষ জেলে? তিনি কাশ্মীর সমস্যার সমাধানে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংলাপ এবং স্থানীয় জনগণের মর্যাদার সঙ্গে বেঁচে থাকার অধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।

কাশ্মীরের এ বাস্তবতা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও, সমাধানের পথ এখনো দূরবর্তী। মেহবুবা মুফতির কণ্ঠ কাশ্মীরিদের অধিকার ও পরিচয়ের জন্য লড়াইয়ের প্রতীক হিসেবে রয়ে গেছে। 

সবার দেশ/কেএম