বাংলাদেশে পানি বন্ধের দাবি বিজেপি এমপির

ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে গত ২২ এপ্রিল সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন পর্যটক নিহত হওয়ার পর ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে ১৯৬০ সালের সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করেছে।
এ সিদ্ধান্তকে পাকিস্তান ‘যুদ্ধ ঘোষণার’ সমতুল্য বলে আখ্যা দিয়েছে। এ উত্তেজনার মধ্যে ভারতের ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সাংসদ নিশিকান্ত দুবে বাংলাদেশে গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তা নদীর পানিপ্রবাহ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।
দুবে বলেন, ১৯৯৬ সালে কংগ্রেস সরকারের স্বাক্ষরিত গঙ্গা পানি চুক্তি ভুল ছিলো। সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে যুক্ত বলে অভিযোগ রয়েছে, এমন দেশগুলোর সঙ্গে কত দিন পানি ভাগাভাগি করবো? সময় এসেছে এদের গুঁড়িয়ে দেয়ার।
তিনি এক্স পোস্টে লিখেছেন, বাংলাদেশ ছটফট করছে। তাদের গঙ্গার পানি বন্ধ করার সময় এসেছে। আমাদের পানি খেয়ে তারা পাকিস্তানের গান গাইবে?
তিনি ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, লস্কর-ই-তৈবা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। সন্ত্রাসী অনুপ্রবেশ ঠেকাতে দুই দেশের সীমান্ত সুরক্ষিত করতে হবে।
দুবে আরও উল্লেখ করেন, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নিতীশ কুমার বাংলাদেশের সঙ্গে পানি ভাগাভাগির বিরোধিতা করেছেন, এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তিস্তা চুক্তির বিরোধিতা করছেন। তিনি দাবি করেন, বাংলাদেশ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন বন্ধ না করলে তাদের পানি দেয়া বন্ধ করা উচিত।
দুবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রশংসা করে বলেন, পেহেলগাম হামলার পর প্রধানমন্ত্রীর ক্ষোভ স্পষ্ট। ১৪০ কোটি ভারতীয়ের সমর্থন তার সঙ্গে। তিনি সন্ত্রাসীদের বিচারের আওতায় আনতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। মোদি বিহারের এক জনসভায় বলেছেন, হামলার পেছনের সন্ত্রাসী ও ষড়যন্ত্রকারীদের কল্পনাতীত শাস্তি দেয়া হবে।
পেহেলগাম হামলার জবাবে ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সিন্ধু চুক্তি স্থগিত, পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা বাতিল, ভারতীয় দূতাবাসের কর্মী সংখ্যা কমানোসহ সাতটি পদক্ষেপ নিয়েছে। পাকিস্তানও ভারতীয় বিমানের জন্য আকাশপথ বন্ধ, বাণিজ্য স্থগিত এবং ভারতীয় কূটনীতিকদের বহিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, ভারত ও বাংলাদেশ ৫৪টি নদী ভাগ করে, যার মধ্যে গঙ্গা ও তিস্তা অন্যতম। ১৯৯৬ সালের গঙ্গা পানি চুক্তি ২০২৬ সালে মেয়াদোত্তীর্ণ হবে। তিস্তা চুক্তি ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিরোধিতার কারণে বাস্তবায়িত হয়নি। বাংলাদেশের পানি সমস্যা জটিল, কারণ দেশটির ৯০% নদীপ্রবাহ ভারত, মিয়ানমার ও চীন থেকে আসে।
দুবের এ দাবি ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে পানি বণ্টনের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এর আগে ভারতের সঙ্গে পানি ব্যবস্থাপনায় উচ্চ পর্যায়ের সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
সবার দেশ/কেএম