পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধ
যুক্তরাষ্ট্র-ভারত ফ্লাইটে সময় বাড়ছে ৪ ঘণ্টা

ভারতশাসিত জম্মু ও কাশ্মিরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা চরমে উঠেছে। এ হামলার জবাবে ভারত কূটনৈতিকভাবে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে, যার প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান ২৪ এপ্রিল ২০২৫ থেকে ভারতীয় এয়ারলাইন্সের জন্য আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে।
এ ফলে ভারত থেকে উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ, যুক্তরাজ্য ও মধ্যপ্রাচ্যগামী ফ্লাইটগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, বিশেষ করে দিল্লি থেকে যাত্রা শুরু করা ফ্লাইটগুলো। ফ্লাইটের সময় গড়ে ২ থেকে ৪ ঘণ্টা বেড়েছে এবং কিছু ক্ষেত্রে জ্বালানি সংগ্রহের জন্য ইউরোপে অতিরিক্ত থামতে হচ্ছে।
ফ্লাইটরাডার২৪-এর তথ্য অনুযায়ী, পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধ থাকায় দিল্লি থেকে শিকাগোগামী এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট (AI127) আগে ১২,৫০০ কিলোমিটার পথ ১৪ ঘণ্টা ৪৭ মিনিটে অতিক্রম করতো। এখন এটি ১৫,০০০ কিলোমিটার পথে ১৯ ঘণ্টারও বেশি সময় নিচ্ছে, কারণ ফ্লাইটটি ভিয়েনা বা কোপেনহেগেনে জ্বালানির জন্য থামছে। একইভাবে, সান ফ্রান্সিসকো থেকে দিল্লিগামী ফ্লাইট (AI174) আগে ১৫ ঘণ্টা ২৫ মিনিটে গন্তব্যে পৌঁছাত, কিন্তু এখন ভিয়েনায় রিফুয়েলিং থামার কারণে ২০ ঘণ্টার বেশি সময় লাগছে।
আঞ্চলিক রুটেও প্রভাব পড়েছে। ইন্ডিগোর দিল্লি-তাসখন্দ ফ্লাইট (6E1806) আগে ২ ঘণ্টা ১৮ মিনিটে পৌঁছাতো, কিন্তু এখন ইরান ও তুর্কমেনিস্তান হয়ে ঘুরপথে ৫ ঘণ্টা ৩০ মিনিট সময় নিচ্ছে। ইন্ডিগো দিল্লি-আলমাটি ও দিল্লি-তাসখন্দ ফ্লাইট ২৭ এপ্রিল থেকে ৭ মে পর্যন্ত বাতিল করেছে, কারণ তাদের ন্যারো-বডি এয়ারবাস বিমানের জন্য নতুন রুটগুলো অপারেশনালভাবে সম্ভব নয়।
এয়ার ইন্ডিয়া ২৪ এপ্রিল এক্স পোস্টে জানিয়েছে, পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধের কারণে যাত্রীদের অসুবিধার জন্য আমরা দুঃখিত। আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার যাত্রী ও ক্রুদের নিরাপত্তা। ইন্ডিগোও একইভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং যাত্রীদের ফ্লাইট স্ট্যাটাস চেক করার পরামর্শ দিয়েছে।
এ বন্ধের ফলে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৮০০টি ভারতীয় ফ্লাইট ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, যার মধ্যে দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৬৪০টি ফ্লাইট সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। দীর্ঘ রুটের কারণে জ্বালানি খরচ বাড়ছে, যা এয়ারলাইন্সের অপারেশনাল খরচ ৩০-৪০% বাড়িয়ে দিতে পারে। ফলে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের ভাড়া ৮-১২% বাড়তে পারে, এবং দীর্ঘমেয়াদে এ বৃদ্ধি আরও বেশি হতে পারে।
পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধের ফলে ভারতীয় এয়ারলাইন্স আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি। ২০১৯ সালে পুলওয়ামা হামলার পর পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধের সময় ভারতীয় এয়ারলাইন্স প্রায় ৭০০ কোটি রুপি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল। এবারও এক মাসের বন্ধে ১৫ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে, পাকিস্তানের এ পদক্ষেপ তাদের নিজেদেরও ক্ষতি করতে পারে। ভারতীয় ফ্লাইট থেকে প্রতিদিন ওভারফ্লাই ফি হিসেবে পাকিস্তান প্রায় ২,৩২,০০০ ডলার আয় করে। ২০১৯ সালে পাঁচ মাসের বন্ধে তারা প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার হারিয়েছিলো।
রাজনৈতিক উত্তেজনা ও সম্ভাব্য সংঘাতের আশঙ্কা
পেহেলগাম হামলার পর ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে ইন্দাস জলচুক্তি স্থগিত, পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা বাতিল এবং ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। পাকিস্তান এর জবাবে শিমলা চুক্তিসহ দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্থগিত করার হুমকি দিয়েছে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে ফোনালাপে বলেছেন, ভারতের যেকোনও আগ্রাসী পদক্ষেপের জবাবে পাকিস্তান পূর্ণ শক্তি দিয়ে প্রতিরোধ করবে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মুহাম্মদ আসিফ সোমবার হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় প্রয়োজনে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করা হবে।
গোয়েন্দা তথ্যের বরাতে পাকিস্তান দাবি করেছে, ভারত আগামী ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে সামরিক হামলা চালাতে পারে। এ পরিস্থিতিতে দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে সংঘাতের আশঙ্কা বাড়ছে, যা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।
সূত্র: এনডিটিভি, ফ্লাইটরাডার২৪, এয়ার ইন্ডিয়া ও ইন্ডিগোর এক্স পোস্ট, রয়টার্স, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ইন্ডিয়া টুডে।
সবার দেশ/কেএম