অভিযোগ স্টারমার তার ব্যক্তিগত বন্ধুকে মন্ত্রী নিয়োগ করেছেন
টিউলিপকে বরখাস্তের দাবি বিরোধীদলের
টিউলিপ সিদ্দিককে মন্ত্রিত্ব থেকে সরিয়ে দেয়ার কথা ভাবছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার। এ লক্ষ্যে টিউলিপকে তার পদ থেকে সরিয়ে ওই পদে দায়িত্ব পালনের জন্য সম্ভাব্য ব্যক্তিদের শর্টলিস্টও করা হয়েছে।
দিন যত যাচ্ছে বৃটেনের সিটি এবং অর্থমন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে অপসারণের দাবি তত জোরালো হচ্ছে। বিশেষ করে দেশটির বিরোধী শিবির বার বার দাবি তুলছে যেন টিউলিপকে তার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। টোরি নেতা বার্গাহার্টের পর এবার টিউলিপকে তার দায়িত্ব থেকে বরখাস্তের আবেদন জানিয়েছেন কনজারভেটিভ দলের আরেক জ্যেষ্ঠ নেতা কেমি ব্যাডেনোচ।
বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমারের কাছে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে ৩ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার আত্মসাতে পরিবারের সঙ্গে টিউলিপের নাম আসায় তাকে তার পদ থেকে বরখাস্ত করতে হবে। নিজের এক্স হ্যান্ডেলের পোস্টে এ আহ্বান জানান টোরি নেতা কেমি ব্যাডেনোচে। খবর বিবিসির।
ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন লেবার মন্ত্রিসভার সদস্য টিউলিপ সিদ্দিক। তিনি ইকনোমিক সেক্রেটারি টু দি ট্রেজারি অ্যান্ড সিটি মিনিস্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার কাজ যুক্তরাজ্যের অর্থবাজারের ভেতরের দুর্নীতি সামাল দেয়া। কিন্তু তার জন্মভূমি বাংলাদেশেই এখন তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে, যেখানে তিনি এবং পরিবারের চার সদস্যের বিরুদ্ধে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে প্রায় ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের কাছে ট্রেজারি মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিককে বরখাস্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা কেমি ব্যাডেনোচ।
সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেয়া পোস্টে কনজারভেটিভ পার্টির এ নেতা বলেছেন, কেয়ার স্টারমার, টিউলিপ সিদ্দিককে বরখাস্ত করার সময় এসেছে।
তিনি আরও বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার তার ব্যক্তিগত বন্ধুকে দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করেছেন এবং তিনি নিজেকেই দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন।
ব্যাডেনোচ বলেন, সরকার যে আর্থিক সমস্যাগুলো তৈরি করেছে তা মোকাবিলায় মনোনিবেশ করা উচিত হলেও টিউলিপ সিদ্দিক সে কাজে মনোনিবেশের জন্য সমস্যা হয়ে উঠেছেন। তিনি আরও বলেছেন, এখন বাংলাদেশ সরকারও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের সাথে তার (টিউলিপের) যোগসূত্র নিয়েও গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করছে।
বিবিসি বলছে, টিউলিপের দুর্নীতি নিয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মন্তব্যের পরই কনজারভেটিভ পার্টির নেতা কেমি ব্যাডেনোচ এ মন্তব্য করেন।
ড. ইউনূস সানডে টাইমসকে বলেছিলেন, টিউলিপ সিদ্দিককে তার খালা শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠদের দেয়া লন্ডনের সম্পত্তিতে বসবাস করার বিষয়ে ক্ষমা চাওয়া উচিত। এছাড়া সম্প্রতি টোরি এমপিরাও টিউলিপের পদত্যাগ দাবি করেছেন।
ব্রিটেনের বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টির এমপিরা টিউলিপের উদ্দেশে বলেছেন, ফ্ল্যাট উপহার পাওয়ার বিষয়ে গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা দিতে না পারলে তিনি যেন ট্রেজারি মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
টোরি এমপি বব ব্ল্যাকম্যান বলেছেন, টিউলিপ সিদ্দিককে তার সম্পত্তির লেনদেনের বিষয়ে অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে এবং ব্যাখ্যা করতে হবে আসলে কী ঘটেছে এবং কেন। যদি তিনি তা না করেন তবে মন্ত্রী হিসেবে তিনি তার কাজ চালিয়ে যেতে পারেন না।
টিউলিপ সিদ্দিক অবশ্য কোনও ধরনের দুর্নীতিতে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন এবং যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর মিনিস্ট্রিয়াল স্ট্যান্ডার্ডসের ইন্ডিপেনডেন্ট অ্যাডভাইজার লাউরি ম্যাগনাসের কাছে নিজের বিরুদ্ধে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন।
স্যার লরি ম্যাগনাসের কাছে লেখা একটি চিঠিতে তিনি দাবি করেন, আমি কোনও ভুল করিনি। এমন অবস্থায় সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিককে মন্ত্রিত্ব থেকে সরিয়ে দেয়ার কথা ভাবছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার। এ লক্ষ্যে টিউলিপকে তার পদ থেকে সরিয়ে ওই পদে দায়িত্ব পালনের জন্য সম্ভাব্য ব্যক্তিদের শর্টলিস্টও করা হয়েছে।
সবার দেশ/কেএম