হাসিনার প্রাসাদে টিউলিপের লিফলেট
বৃটেনের দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের লেবার পার্টির পোস্টার এবং রাজনৈতিক প্রচার পত্রগুলি বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিধস্ত সরকারি বাসভবনের ধ্বংসাবশেষের মধ্যে পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে।
ট্রেজারি মন্ত্রী টিউলিপ, যার বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে তিনি এখন স্ট্যান্ডার্ড ওয়াচডগ স্যার লরি ম্যাগনাসের তদন্তাধীন। ভারতে পলাতক তার খালা শেখ হাসিনাকে নিয়ে একাধিক প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছেন তিনি, যাকে গত ছর গণঅভ্যুথানের পর ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত করা হয়।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ফ্যসিস্ট হাসিনা বাংলাদেশে একটি দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তের মুখোমুখি হচ্ছেন। টিউলিপ সিদ্দিকের নামও সে মামলায় এসেছে। সিদ্দিক বাংলাদেশে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য রাশিয়ার সাথে ২০১৩ সালের একটি চুক্তিতে দালালি করেছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে, যেটিতে বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
সিদ্দিক তার খালার ঘনিষ্ঠ মিত্রদের বিনামূল্যে দেয়া লন্ডনের ফ্ল্যাটে বসবাস করতেন বলে জানা গেছে। টিউলিপ কোনও ভুল করেননি বলে দাবি করে বৃটেনের দুর্নীতি মন্ত্রী গত সপ্তাহে স্যার লরির কাছে একটি চিঠিতে তদন্ত শুরু করার জন্য অনুরোধ করেন।
টাইমসের তথ্য মোতাবেক, সিদ্দিকের লেবার পার্টির পোস্টার তার খালার ভাংচুর করা সরকারি বাসভবনে বিলাসবহুল আইটেম এবং নথিপত্রের মধ্যে পাওয়া গেছে। সংবাদপত্রটি ধ্বংসস্তূপের মধ্যে পাওয়া সে প্রচারপত্রের ছবি শেয়ার করেছে।
টাইমস যোগ করেছে, বাংলাদেশের ঢাকাতে অবস্থিত হাসিনার সরকারি বাসভবনটিতে একটি দামি চ্যানেল এবং স্বরোভস্কি কোম্পানির ব্যাগ, একটি হীরার শংসাপত্র এবং ১৫০০ ডলারের সোনার মন্টব্ল্যাঙ্ক কলম মিলেছে। যদিও সোমবার (১৩ জানুয়ারি) সকাল পর্যন্ত বৃটেনের মন্ত্রিপরিষদের মন্ত্রী প্যাট ম্যাকফ্যাডেন জোর দিয়ে বলেছেন যে তার টিউলিপ সিদ্দিকের উপর পূর্ণ আস্থা রয়েছে। টিউলিপ স্বাধীন তদন্তের পথ বেছে নিয়ে সঠিক কাজ করেছেন।
টাইমস রেডিও তার কাছে জানতে চেয়েছিলো তিনি তার সহকর্মীর প্রতি পূর্ণ আস্থা রাখেন কিনা, উত্তরে ম্যাকফ্যাডেন জানান- হ্যাঁ। সেসঙ্গে ম্যাকফ্যাডেন যোগ করেছেন- তিনি (টিউলিপ সিদ্দিক) সঠিক কাজ করেছেন। যে সমস্ত অভিযোগ উঠেছে , তিনি সেগুলি স্বাধীন উপদেষ্টার কাছে তুলে ধরেছেন।
ম্যাকফ্যাডেন আরও বলেন, আমরা যখন ছয় মাস আগে নির্বাচনে জিতেছিলাম, তখন আমরা নতুন মন্ত্রীমহল গঠনের সময় স্বাধীন উপদেষ্টার ক্ষমতা বাড়িয়েছিলাম। যাতে তিনি এ ধরনের অভিযোগের তদন্ত শুরু করার এবং পরিচালনা করার ক্ষমতা রাখেন। এটাই তিনি (টিউলিপ) করছেন এবং এ ধরণের অভিযোগ মোকাবেলা করার এটিই সঠিক উপায়।
বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমারের ওপর টিউলিপ সিদ্দিককে মন্ত্রিত্ব থেকে বরখাস্ত করার চাপ আসছে। রক্ষণশীল নেতা কেমি ব্যাডেনোচ বলেছেন- তিনি (স্টারমার) তার ব্যক্তিগত বন্ধুকে দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করেছিলেন এবং সে বন্ধু আজ নিজেই দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত। এখন বাংলাদেশ সরকার শেখ হাসিনার সরকারের সাথে তার যোগসূত্র নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। আমার মনে হয় কেয়ার স্টারমারের টিউলিপ সিদ্দিককে বরখাস্ত করার সময় এসে গেছে।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন যে, সিদ্দিকের ব্যবহৃত লন্ডনের সম্পত্তিগুলি ডাকাতির মাধ্যমে অধিগ্রহণ করা হলে তা সরাসরি তদন্ত করে সে দেশের সরকারের কাছে হস্তান্তর করা উচিত। সানডে টাইমসের সাথে কথা বলার সময়, তিনি টিউলিপ সিদ্দিককে ক্ষমা চাওয়ার এবং পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন- আপনি দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রী হয়ে এখন নিজেকে রক্ষা করতে চাইছেন। জনগণের সামনে নিজের ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়ে আপনার অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত।
সবার দেশ/কেএম