Advertisement

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৩:৫১, ২১ জানুয়ারি ২০২৫

ভারতীয় বংশোদ্ভূত ‘সেকেন্ড লেডি’ কে এ উষা?

ভারতীয় বংশোদ্ভূত ‘সেকেন্ড লেডি’ কে এ উষা?

গত বছরের জুলাইতে ডোনাল্ড ট্রাম্প আনুষ্ঠানিকভাবে নভেম্বরের নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পাবার সময়, ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে তার সঙ্গী হিসেবে জেডি ভ্যান্সের নাম ঘোষণা করেন। ওহাইও রাজ্যের সিনেটর ৩৯ বছর বয়সী ভ্যান্স রিপাবলিকান দলের তৃণমূল সমর্থকদের কাছে পরিচিত নাম হলেও, অনেকের মনোযোগ আকর্ষণ করেন তার স্ত্রী উষা চুলুকুরি ভ্যান্স।

নভেম্বরের নির্বাচনে ট্রাম্প-ভ্যান্স টিকেট জয়ী হওয়ার ফলে, ৩৮ বছর বয়সী উষা ভ্যান্স হচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত সেকেন্ড লেডি। সোমবার (২০ জানুয়ারি) জেডি ভ্যান্স ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেয়ার পর উষা ভ্যান্স আনুষ্ঠানিকভাবে সেকেন্ড লেডি হিসেবে তার স্থান গ্রহণ করলেন।

কে এই উষা ভ্যান্স?

যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম সাড়ির গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ভারতীয় বংশোদ্ভূত বাবা-মার সন্তান উষা চিলুকুরির জন্ম যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৮৬ সালের ৬ জানুয়ারি, ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের সান ডিয়েগো শহরে। তার তেলুগুভাষী বাবা এবং মা ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের চিলাকালুরিপেতা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছিলেন। 

উষা চিলুকুরির বাবা ক্রিশ সান ডিয়েগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে একজন শিক্ষক এবং তার মা লাক্সমি, যিনি একজন মেরিন মোলকিউলার বায়োলজিস্ট, বর্তমানে ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া সান ডিয়েগোর সিক্সথ কলেজের প্রভোস্ট।

উষার অ্যাকাডেমিক সাফল্য তার বাবা-মার চেয়ে কম না, কিন্তু তিনি তাদের পথ অনুসরণ করে বিজ্ঞানের দিকে ঝোঁকেন নাই। বরং তার আগ্রহ ছিল হিউম্যানিটিএস-এর দিকে।

স্থানীয় পত্রিকা দ্য সান ডিয়েগো টাইমসের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, উষা ২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অন্যতম ইয়েল ইউনিভারসিটি থেকে ইতিহাসে ব্যাচেলর’স ডিগ্রি লাভ করেন।

এরপর উষা ব্রিটেনের শীর্ষ স্থানীয় বিদ্যাপীঠ কেমব্রিজ ইউনিভারসিটি থেকে আধুনিক যুগের শুরুর দিকের ইতিহাসে এমফিল ডিগ্রি অর্জন করেন। তার বিদ্যা অন্বেষণ সেখানেই থেমে যায়নি। তিনি নজর দেন আইন পেশায় ক্যারিয়ার গড়ে তোলার দিকে।

উষা ফিরে যান ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে, যার ল’ স্কুল থেকে তিনি ২০১৩ সালে ডক্টর অফ ল’ ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। যুক্তরাষ্ট্রের টেলিভিশন নেটওয়ার্ক এবিসি’র এক রিপোর্ট অনুযায়ী, একই সময় তিনি চীনের গুয়াংজুর সান ইয়াত সেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ইয়েল-চীন টিচিং ফেলও হিসেবে আমেরিকান ইতিহাস পড়ান।

ইয়েল ল’ স্কুলে পড়াশোনার সময়ই উষার পরিচয় হয় জেডি ভ্যান্সের সঙ্গে। পরের বছর, অর্থাৎ ২০১৪ সালে তাদের বিয়ে হয়। তাদের তিনটি সন্তান রয়েছে।

টেলিভিশন চ্যানেল সিএনএনের এক রিপোর্ট অনুযায়ী, জেডি ভ্যান্স ২০১৯ সালে ক্যাথলিক ক্রিস্টিয়ান ধর্ম গ্রহণ করেন। তবে উষা ভ্যান্স তার পারিবারিক সূত্রে পাওয়া হিন্দু ধর্ম পালন অব্যাহত রাখেন।

হিন্দু ধর্মে বিশ্বাসী

টেলিভিশন চ্যানেল ফক্সে দেওয়া সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে উষা বলেন, হিন্দু ধর্মে তার বাবা-মার বিশ্বাসই তাদের এতো ভালো মানুষ করেছে। একই সাক্ষাৎকারে জেডি ভ্যান্স জানান, তিনি যখন তার ক্রিস্টিয়ান বিশ্বাসে ফিরে যান, তখন ভিন্ন ধর্মাবলম্বী হওয়া সত্ত্বেও তার স্ত্রী তাকে সমর্থন করেছেন।

দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জেডি ভ্যান্স বেশ কয়েকটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন যেখানে তিনি তার স্ত্রীকে এক ‘শক্তিশালী কণ্ঠ’ এবং ‘অসাধারণ’ বলে বর্ণনা করেছেন।

‘ঊষা আমাকে বাস্তবতায় ফিরিয়ে নিয়ে আসে। আমি যদি কখনো একটু অহংকারী বা দম্ভী হয়ে যাই, তখন আমি নিজেকে মনে করিয়ে দেই সে আমার চেয়ে কত বেশি সুদক্ষ,’ ভ্যান্স ২০২০ সালে ‘মেগান কেলি শো’ পডকাস্টে বলেন। 

তিনি আরও বলেছেন, আমি সেরকম একজন পুরুষ যার বাম কাঁধে বসে একটি শক্তিশালী নারী কণ্ঠ বলছে, এটা করো না, এটা অবশ্যই করো – এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

উষা ভ্যান্স ল’ স্কুল থেকে পাস করার পর ২০১৫ সালে একটি ল’ চেম্বারে কাজ শুরু করেন যাদের লস অ্যাঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিস্কো এবং ওয়াশিংটন ডিসিতে অফিস আছে। চেম্বারের কাজের ফাঁকে তিনি প্রধান বিচারপতির দফতরে লিগাল ক্লার্কের কাজ করেছেন। 

গত ১৫ জুলাই ট্রাম্প ভাইস প্রেসিডেন্ট পদের জন্য তার সঙ্গী হিসেবে জেডি ভ্যান্সের নাম ঘোষণার পর উষা ভ্যান্স চেম্বার থেকে ইস্তফা দেন। তথ্যসূত্র: ভয়েস অফ আমেরিকা 

সবার দেশ/কেএম