Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ ক্রীড়া প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০০:৪৪, ১৯ এপ্রিল ২০২৫

হাইব্রিড মডেলে বেকায়দায় বিসিসিআই

পাকিস্তান নারী ক্রিকেটাররা ভারতে বিশ্বকাপ খেলবে না

পাকিস্তান নারী ক্রিকেটাররা ভারতে বিশ্বকাপ খেলবে না
ছবি: সংগৃহীত

পাকিস্তান নারী ক্রিকেট দল ২০২৫ সালের আইসিসি নারী বিশ্বকাপের জন্য যোগ্যতা অর্জন করেছে। লাহোরে চলমান বাছাইপর্বে থাইল্যান্ডের বিপক্ষে ৮৭ রানের বিশাল জয়ের মাধ্যমে ফাতিমা সানার নেতৃত্বাধীন দল টানা চার জয়ে বিশ্বকাপের মূল পর্বে জায়গা নিশ্চিত করেছে। 

তবে, এ যোগ্যতা অর্জন ভারতীয় ক্রিকেট নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (বিসিসিআই)-এর জন্য লজিস্টিক্যাল চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে, কারণ ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে আইসিসি’র হাইব্রিড মডেল চুক্তির কারণে পাকিস্তানের ম্যাচগুলো ভারতের বাইরে নিরপেক্ষ ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে।

হাইব্রিড মডেলের পটভূমি

২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ভারত ও পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) মধ্যে একটি চুক্তির মাধ্যমে আইসিসি ঘোষণা করে যে, ২০২৪-২০২৭ চক্রের আইসিসি ইভেন্টে ভারত বা পাকিস্তানের আয়োজিত টুর্নামেন্টে দুই দেশের ম্যাচ নিরপেক্ষ ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে। এ চুক্তির ফলে ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ভারতীয় দল পাকিস্তানে না গিয়ে দুবাইয়ে তাদের ম্যাচ খেলে। ফাইনালে ভারতের উপস্থিতির কারণে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচটিও লাহোরের পরিবর্তে দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত হয়।

এ চুক্তির প্রতিশোধ হিসেবে, পাকিস্তান নারী দল ২০২৫ সালের নারী বিশ্বকাপে ভারতে তাদের ম্যাচ খেলবে না। ভারত একক আয়োজক হওয়া সত্ত্বেও পাকিস্তানের ম্যাচগুলো নিরপেক্ষ ভেন্যুতে, সম্ভবত শ্রীলঙ্কা বা সংযুক্ত আরব আমিরাতে, অনুষ্ঠিত হবে। এ সিদ্ধান্ত বিসিসিআই-এর জন্য আর্থিক ও লজিস্টিক্যাল চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।

পাকিস্তানের যোগ্যতা অর্জন

পাকিস্তান নারী ক্রিকেট দল লাহোরে আয়োজিত বাছাইপর্বে অপরাজিত থেকে বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করে। আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, এবং থাইল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের মাধ্যমে তারা শীর্ষে অবস্থান করে। ১৭ এপ্রিল থাইল্যান্ডের বিপক্ষে ৮৭ রানের জয়ে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বকাপে জায়গা পায়। দলের অধিনায়ক ফাতিমা সানা এবং সিদ্রা আমিনের নেতৃত্বে পাকিস্তান দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়েছে।

বিশ্বকাপে ইতোমধ্যে ভারত (আয়োজক), অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, এবং পাকিস্তান যোগ্যতা অর্জন করেছে। বাছাইপর্ব থেকে আরও একটি দল চূড়ান্ত হবে, যেখানে বাংলাদেশ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, এবং স্কটল্যান্ড প্রতিযোগিতায় রয়েছে।

বিসিসিআই-এর চ্যালেঞ্জ

পাকিস্তানের যোগ্যতা অর্জনের ফলে বিসিসিআই-এর সামনে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ উঠে এসেছে। ভারতের পাঁচটি ভেন্যু—মুল্লানপুর, রায়পুর, ইন্দোর, তিরুবনন্তপুরম, এবং বিশাখাপট্টনমে বিশ্বকাপের ম্যাচগুলো অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। ফাইনাল ২৬ অক্টোবর মুল্লানপুরের মহারাজা যাদবীন্দ্র সিং আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে হবে। তবে, পাকিস্তান যদি সেমিফাইনাল বা ফাইনালে পৌঁছায়, তবে এ ম্যাচগুলোও নিরপেক্ষ ভেন্যুতে সরিয়ে নিতে হবে, যা বিসিসিআই-এর জন্য বড় মাথাব্যথার কারণ।

নিরপেক্ষ ভেন্যুতে ম্যাচ আয়োজনের জন্য বিসিসিআই-এর বাড়তি খরচ বহন করতে হবে, যার মধ্যে রয়েছে যাতায়াত, আবাসন, নিরাপত্তা, এবং সম্প্রচার ব্যবস্থা। এছাড়া, ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ, যা রাউন্ড রবিন পর্বে অনুষ্ঠিত হবে, তাও নিরপেক্ষ ভেন্যুতে খেলতে হবে। এ ম্যাচটি ক্রিকেট বিশ্বের সবচেয়ে আকর্ষণীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ায় ভারতের মাটিতে এটি না হওয়া ভক্তদের জন্য হতাশার কারণ হতে পারে।

পিসিবি’র অবস্থান

পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সময় ভারতের পাকিস্তানে না আসার সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্ট ছিলো। পিসিবি চেয়ারম্যান মহসিন নকভি আইসিসি’র কাছে স্পষ্ট জানিয়েছিলেন যে, তারা ভারতকে কোনো ছাড় দেবেন না। ফলে, হাইব্রিড মডেল চুক্তির মাধ্যমে পাকিস্তান নিশ্চিত করেছে যে ভারতের আয়োজিত ২০২৫ নারী বিশ্বকাপ এবং ২০২৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তাদের দল ভারতে খেলবে না।

এ চুক্তি ভঙ্গ করলে পিসিবি আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আদালতে (Court of Arbitration for Sport) বিসিসিআই-এর বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে, যা আইসিসি এবং বিসিসিআই-এর জন্য আর্থিক ও প্রতিষ্ঠানগত ক্ষতির কারণ হতে পারে।

সম্ভাব্য নিরপেক্ষ ভেন্যু

সংযুক্ত আরব আমিরাত (দুবাই বা শারজাহ) এবং শ্রীলঙ্কা নিরপেক্ষ ভেন্যু হিসেবে শীর্ষে রয়েছে। শ্রীলঙ্কা ২০২৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের যৌথ আয়োজক হওয়ায় পাকিস্তানের ম্যাচ সেখানে সহজেই আয়োজন করা সম্ভব। তবে, নারী বিশ্বকাপের জন্য দুবাই একটি সম্ভাব্য বিকল্প, কারণ সেখানে পূর্বে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ম্যাচ সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ভক্ত ও সম্প্রচারকারীদের উপর প্রভাব

ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ ক্রিকেট বিশ্বের সবচেয়ে বড় দর্শকপ্রিয় ঘটনা। এ ম্যাচ নিরপেক্ষ ভেন্যুতে সরে গেলে ভারতীয় ভক্তরা তাদের দেশে এ আইকনিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখার সুযোগ হারাবেন। সম্প্রচারকারীদের জন্যও ভেন্যু পরিবর্তনের ফলে সময়সূচী এবং লজিস্টিক্যাল পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে, যা আর্থিকভাবে প্রভাব ফেলতে পারে।

পাকিস্তান নারী ক্রিকেট দলের ২০২৫ নারী বিশ্বকাপে যোগ্যতা অর্জন ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট সম্পর্কের জটিলতাকে নতুন করে সামনে এনেছে। হাইব্রিড মডেল চুক্তির কারণে পাকিস্তানের ম্যাচগুলো নিরপেক্ষ ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে, যা বিসিসিআই-এর জন্য আর্থিক ও লজিস্টিক্যাল চাপ সৃষ্টি করবে। এ পরিস্থিতি ভারত-পাকিস্তানের রাজনৈতিক বৈরিতার ক্রিকেটের উপর প্রভাবের একটি সুস্পষ্ট উদাহরণ। পিসিবি’র দৃঢ় অবস্থান এবং আইসিসি’র মধ্যস্থতায় এ চুক্তি বাস্তবায়িত হলেও, ভক্ত এবং সম্প্রচারকারীদের জন্য এটি একটি হতাশাজনক সমাধান হতে পারে। বিসিসিআই এখন দ্রুত পরিকল্পনা করে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে, যাতে টুর্নামেন্ট সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়।

সবার দেশ/কেএম