’পরাধীন জাতি হয় যদি ভয়হারা, হোক নিরস্ত্র, অস্ত্রের রণে বিজয়ী হইবে তারা’
আমার দেখা ৩৬ জুলাই ২০২৪। পৃথিবীর আর কোন দেশে এমনটা হয়েছে কিনা জানা নেই; যে সরকার প্রধান নিজ দেশের নিরস্ত্র নিরাপরাধ মানুষকে হত্যা বা খুনের নেশায় মেতে ওঠে! কতো বড় সাইকো হলেই কেবলমাত্র সম্ভব এ ধরনের ঘৃণ্য কাজ করতে পারা! তাই তো সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনের চাপা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে ৩৬ জুলাই ছাত্র আন্দোলনের গণঅভ্যুত্থানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সকলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে।
সেদিন দলমত নির্বিশেষে সকল সাধারণ জনগণ এক মত এক পথে এসে মিলিত হতে পেরেছিলেন। তাই তো ফ্যাসিস্ট পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। আর বাঙালি জাতি আরেকবার বিশ্ব ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে বিপ্লব ঘটিয়ে বিজয় ছিনিয়ে আনতে!
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ আমরা দেখিনি কিন্তু ২০২৪ সালের বিপ্লব স্বচক্ষে দেখেছি! সমস্ত জাতি,সমগ্র বিশ্ববাসী দেখেছেন বর্বর জালিম খুনি ফ্যাসিস্ট হাসিনার নির্মমতা! যার থেকে শিশুরাও পায়নি নিস্তার! গুলিতে ঝাঁঝরা করে দিয়েছে শিশুদের বুক, মাথা! কোন শিশু নিজ বাড়ির ছাদে খেলতে লাশ হয়েছে, কেউ মায়ের কোলে কেউ বা আবার নিজের বাসার রুমে নির্মম ভাবে প্রাণ দিয়েছে!
প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা থেকে শুনেছি, জেনেছি এক মা বাচ্চকে বুকের দুধ পান করিয়ে কেবল তার বাসার বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছেন। অমনি বাইরে থেকে এক গুলি এসে তার প্রাণ কেড়ে নিয়েছে! এরকম শত শত ঘটনা আছে!
এমন কি আমার বাসায় যে কাজের সাহায্যকারী বুয়া আসেন, তিনিও নিয়মিত প্রতিদিন তখন কাজে আসতে পারেননি। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সকল কিছু বন্ধ করে মানুষকে বন্দী করে রাখেছিলো ঘরের মধ্যে! চিন্তা করা যায় কতো বড় এক সাইকো ফ্যাসিস্ট বাংলাদেশের জনগণের উপর চেপে বসেছিল দীর্ঘ প্রায় ষোল বছর!
আমার সে সাহায্যকারী বুয়া একদিন হাঁফাতে হাঁফাতে আমার বাসায় এসে কেঁদে কেঁদে বলছেন, আপু আমার বাসার ওখানে একটা ছেলে বেরিবাঁধের রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল তখন আকাশে হেলিকপ্টারে থেকে অনেক গুলি বা এরকম কিছু ছোঁড়া হয়েছে! ছেলেটির বুক,গলা থেকে সমস্ত শরীরে শুধু আঘাতের চিহ্ন। হসপিটালে নিয়ে গেছে বেঁচে আছে কিনা জানি না!
এ রকম হাজারো ঘটনা আছে সে বিভীষিকাময় দিনগুলোর!
আমাদের বাড়ির ছাদে ও আমি নিজ চোখে দেখেছি! হেলিকপ্টার থেকে কিছু একটা ছুড়ে মারছে! ভয়ে দৌড়ে এসে বাসায় ড্রইং রুমে বসেছি। তখন দেখলাম উপর থেকে জানালার পাশে দিয়ে আগুন পড়ছে! শুধু আমি একা নই, তখন বিকেল বেলা সন্ধ্যার ঠিক আগে আরও অনেকেই তখন ছাদে ছিলেন তারাও দেখেছেন। সকলেই ছাঁদ থেকে দৌঁড়ে ভেতরে চলে গেছেন। এমন কি রাস্তায় যারা ছিলেন তারাও দেখেছেন। কারো চোখ জ্বলে পুড়ে যাচ্ছিল। তা থেকে নিরাময়ে তখন চোখে পানি ঢেলেছেন অনেকে।
ঐ অবরুদ্ধ করে রাখা বেশ কয়েকদিন কি এক ভয়াবহ সময় পার করছেন দেশবাসী। তবে সকলেই দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলেন যে ফ্যাসিস্ট হটাতে হবেই হবে, আর বিজয় ছিনিয়ে আনতে হবে।
শেষ পর্যন্ত ছাত্র আন্দোলন ৩৬ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে জাতি বিজয় ছিনিয়ে এনেছে। পৃথিবীর ইতিহাসে নেই যে কোন দেশের ছাত্র আন্দোলন বৃথা গেছে। তেমনি আমাদের ছাত্র আন্দোলনও বৃথা যায়নি। সে ইতিহাস লিপিবদ্ধ হয়েছে স্বর্ণাক্ষরে! এ বিপ্লবের বিজয়ী ইতিহাস থেকে যাবে মহাকাল ধরে! কোন ভাবেই এতো তাজা রক্তের বিনিময়ে এ অর্জিত বিজয় বৃথা যেতে দেয়া যাবে না। সকলকে এক হয়ে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে কাজ করতে হবে।
লেখকঃ কবি ও সাহিত্যিক