গল্প
আকাশের চোখ
(৬ষ্ঠ পর্ব)
বাসায় এসে বৃষ্টি মায়ের দেয়া খাবারগুলো কিছু ডিপে কিছু নরমালে রেখে ফ্রেস হয়ে এসে বসার রুমে আকাশের পাশের সোফায় বসলো। আকাশ টিভিতে খবর দেখছিলো মনোযোগ দিয়ে। বৃষ্টি একটু সময় নিলো,,,সুযোগ বুঝে বললো,,,
ভালোই হলো,, মা অনেকগুলো খাবার দেয়াতে রান্নাবান্নার প্যারাটা আর থাকলোনা। আমি নিশ্চিন্তে আগামীকাল সারাদিন চাকরির সন্ধানে ছুটতে পারবো।
আকাশ টিভিতে চোখ রেখেই জিজ্ঞেস করলো,,
কিসের চাকরি??কোথায় ছুটতে হবে?
বাহরে,,,আমি কি আম্মার বাসায় এমনি এমনি গিয়েছি নাকি? গিয়েছিতো সার্টিফিকেটগুলো আনতে।
তা হঠাৎ চাকরি করার শখ হলো কেনো?
অবাক হলো বৃষ্টি,,,, এতো দেখি ভালোই পল্টিবাজ! নিজেই কালকে ঘরে থাকা নিয়ে বিদ্রুপ করলো, আর আজকে বলছে কিসের চাকরি? মানুষ বলে নারীর মন বুঝা দায়, কিন্তু কিছু কিছু পুরুষেরও মন অন্তর বুঝা দায়। তিন চার বছরে আকাশকেও বৃষ্টি একেবারেই বুঝতে পারেনা। আজকে একটা বলে, পরের দিন অস্বীকার করে। আবার একেকদিন একেকরকম আচরণ,,,, বৃষ্টি এসব নিয়ে ভেবে ভেবে হয়রান হয় একেকবার।
আকাশের কথাবার্তা শুনে বুঝতে পারছেনা কি জবাব দিবে। কোন প্রশ্নের জবাব দিবে। জবাব দিতে গেলে গতকালের কিছু অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ের পুনরাবৃত্তিই হবে শুধু। তারচেয়ে ভালো মা ভাইবোনদের সাথে কাটানো সময়ের চমৎকার অনুভূতিটুকু নিয়েই আজ রাতটা কাটুক। আকাশের চোখ টিভির দিকে থাকলেও বৃষ্টির চলে যাওয়া অনুধাবন করতে পারলো।নিজেও টিভি বন্ধ করে উঠে পরলো।
সকালে আকাশকে বিদায় করে, বুয়াকে বিদায় করে নিজে ও পরিপাটি হয়ে বের হলো নিজের কিছু অবলম্বন হাতে করে। আকাশ যেহেতু ভুলে গেছে, তাই আর তাকে স্মরণ করিয়ে দেয়নি যে, বৃষ্টিও ইচ্ছে করলেই ঘরের বাইরে বেরুতে পারে। আজকে একটা কিছু ব্যবস্থা করেই আকাশকে জানাবে। সময় এলে বুঝিয়ে দিবে বৃষ্টি ও পারে আর দশটা কর্মজীবি নারীর মতো জীবন কাটাতে। শুধু মাঝখানের কিছু অপ্রত্যাশিত ঘটনার কারণে থমকে ছিলো সে,তবে থেমে ত যায়নি।
পিছিয়ে থাকার মেয়েও সে নয়।
বেশিরভাগ নারীরাই পিছিয়ে থাকে কিছু সাংসারিক, সামাজিক প্রতিবন্ধকতার কারণে। একটা পুরুষ মানুষ যখন বাইরে বের হয়, ফিটফাট হয়ে বের হওয়ার অফুরন্ত সময় পায়। কিন্তু মেয়েমানুষকে কোথাও বের হতে হলে পুরো সংসারের সেটাপ গেটাপ ঠিক করে তবে বের হতে হয়। আর যদি দু একটা ছেলেমেয়ে থাকে, তবে ত হিসাব মেলানোই দায়। সারারাত সারাদিন সন্তানের পেছনে সময় দিয়ে অনেক নারীরাই বাইরের কাজকর্ম করায় পেরে ওঠেনা।যারা পারে, তারা গৃহপরিচারিকার উপর নির্ভরশীল হয়েই চালিয়ে যায় জীবন যুদ্ধ। বাইরে থেকে কর্মজীবি নারীদেরকে দেখে অনেক পরিপাটি আর গোছানো মনে হলেও অনেকের সংসারজীবনই অগোছালো আর সমস্যায় ভরপুর। তবুও কারও সাথে দেখা হলে একগাল হেসে বলে,বেশ আছি,,,,।
বৃষ্টির চোখের উপর ভেসে উঠলো মেঘলার মুখটা। একদিন ওর বাসায় হুট করেই যাবে,আগাম সংবাদ না দিয়ে। অনেকদিন পর যোগাযোগ হলো, কিন্তু অনেককিছুই জানা হয়নাই।।সেটা জানার কৌতুহল বৃষ্টিকে পেয়ে বসলো।।আজ বাসায় গিয়েই ফোন দিবে মেঘলাকে। এখন বড় মামার এখানে গিয়ে যেভাবেই হউক একটা ব্যবস্থা করেই ফিরতে হবে তাকে। অবশ্য গতরাতে মামা যেভাবে দেখা করতে বললেন, তাতে মনের মধ্যে একটু জোর পাচ্ছে বৃষ্টি। বড়মামা অনেক আগে থেকেই চাকরি বাকরির দিকে আকৃষ্ট করতেন,শুধু বাবাইইই অনিহা করতেন। মামা যদি বলতেন, লেখাপড়া জানা মেয়ে ঘরে বসে থাকবে কেনো? বাবা বলতেন, লেখাপড়া জানলেই বাইরে চাকরি করতে হবে কেনো? ঘরেও একজন শিক্ষিত মায়ের খুব প্রয়োজন। কথায় আছে না,,
আমায় একজন শিক্ষিত মা দাও আমি তোমায় একটি শিক্ষিত জাতি উপহার দিবো।
তারপর থেকে মামা আর এই বিষয়ে কথা বলতেননা। গতরাতে বৃষ্টির ফোন পেয়ে আর ইচ্ছার কথা শুনে মামা অনেক খুশি হয়েই আজকে কাগজপত্র নিয়ে দেখা করতে বললেন।
বাবা বড় মামার চেয়ে ছোট হয়েও অল্প বয়সেই মারা গেলেন। ভাগ্যিস,মামা বেঁচে আছেন।
উপরে আল্লাহ,নিচে মামার ভরসায় বড়মামার অফিসের সামনে এসে রিকশা থেকে নামলো বৃষ্টি।
নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য যেনো মরিয়া হয়েছে আজ।
তবে, নিজের পায়ে দাঁড়াতে গেলেও অন্যের কাঁধে যে হাতটা রাখতেই হয়!এটাই বাস্তবতা। (চলবে,,,)
লেখক: কবি ও কথাসাহিত্যিক