গল্প
জলমগ্ন অন্ধকারে
প্রাত্যহিকতার ছকে বাঁধা জীবনের বাইরে এক অধরা স্বপ্নের জগৎ, যেখানে কিছু কিছু মানুষ খুঁজে পায় বৈচিত্র্যময় এক অধ্যায়, সেখানে রয়েছে বিচিত্র জীবনের আস্বাদ। নতুনকে জানার এক অদম্য আকাঙ্ক্ষা রয়েছে রায়হানের মনে। পেশায় সাংবাদিক হলেও সমাজের প্রচলিত বন্ধন থেকে পালিয়ে বেড়ায় সে। ছন্নছাড়া এক বন্ধনহীন সময়ের সন্ধানে ভেসে বেড়ায় এখানে-ওখানে।
রায়হান কিছুটা বোহেমিয়ান ধাঁচের মানুষ। এক জায়গায় বেশিদিন স্থায়ী বসতি গড়া হয় না তার। তাই তো গৎবাঁধা আটটা-পাঁচটা চাকরি তার দ্বারা সম্ভব নয়। স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়ায় এখানে-সেখানে। ইচ্ছে হলো টুপ করে হাওয়া হয়ে যায়। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে তার বিচরণ। বিচিত্র মানুষের সাথে ওঠাবসা। মানুষের ভিতরের নানান রঙ তাকে প্রবলভাবে আকৃষ্ট করে।
স্থায়ীভাবে চাকরি না করলে কী হবে, বিভিন্ন পত্রিকার সাথেই রয়েছে তার দারুণ সম্পর্ক। অনেকগুলো জাতীয় পত্রিকায় নিয়মিতভাবেই তার লেখা ছাপা হয়। রায়হান যেখানেই যায়, তার লেখার বিষয়বস্তু যেন তৈরিই থাকে। সে শুধু সেগুলোকে সাজিয়ে পত্রিকার সম্পাদকের হাতে তুলে দেয়। তার সে লেখাগুলোয় যেমন থাকে প্রান্তিক জনপদের কথা, তেমনি উঠে আসে যাপিত জীবনের নানাবিধ জটিল সমীকরণ। তাইতো পত্রিকাগুলোও সেগুলো লুফে নেয়।
লঞ্চ জার্নি রায়হানের জন্য নতুন নয়। প্রায়ই সে লঞ্চে চড়ে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে ঘুরে বেড়ায়। আর এই বাহনটা তার বিশেষ পছন্দ। একসাথে বহু সংখ্যক মানুষ যাতায়াত করে। এদের মধ্যে রয়েছে শ্রেণি-পেশা-ধর্ম নির্বিশেষে নানান ধরণের মানুষ। রায়হানের আগ্রহটা ঠিক এখানেই। লঞ্চে চড়লে বেশির ভাগ সময়ই সে লঞ্চের নিচতলায় ভাসমান মানুষের মধ্যে ঘুরে বেড়ায়। সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে, তখন সে তার কেবিনের সামনের করিডোরে বসে রাত্রির সৌন্দর্য দেখে, নীরব নিস্তব্ধ রাতে জলমগ্ন নদীর ভিন্ন রূপের মধ্যে ডুবে যায়।
ভদ্রমহিলাকে দেখে অদ্ভুত এক অনুভূতি হলো রায়হানের। প্রায় আধঘণ্টা ধরে ভদ্রমহিলা নদীর দিকে মুখ করে গভীর চিন্তায় নিমগ্ন। তার দৃষ্টি অনেক দূরে, উন্মুক্ত নদীর দিকে, যেখানে ঘোলাটে কুয়াশার মতো বিবর্ণ-নিষ্প্রাণ ক্রন্দনরত একটা জলের ধারা বহুদূর পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে। ভদ্রমহিলার পরনের ছাইরঙা তাঁতের সুতি শাড়িটা বাইরের আবহাওয়ার সাথে আশ্চর্যজনকভাবে মানিয়ে গেছে। দু’চোখ ভরা গভীর শূন্য দৃষ্টি আর মুখখানায় এক বিদায়ী সন্ধ্যার বিষণœতা স্থান করে নিয়েছে যেন। একটি হাতের ’পরে আরেকটি হাত আড়াআড়িভাবে তার কোলের উপর রাখা। আশেপাশে আর কেউ নেই।
ভদ্রমহিলার ঠিক পরের জানালার সামনে তার দিকে সেট করা মুখোমুখি চেয়ারে বসেছিল রায়হান। সে ভদ্রমহিলার প্রতি বেশ উৎসাহী হয়ে উঠল। খুব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছিল তাকে। মহিলার বয়স আনুমানিক চল্লিশ থেকে বিয়াল্লিশের মধ্যে হবে। পোশাকআশাক ও বেশভূষায় মার্জিত রুচির পরিচয় পাওয়া যায়। তবে একটা উদ্বেগের ছাপ তার সারা মুখমন্ডলে ছড়িয়ে আছে। একটা না পাওয়ার বেদনাক্লিষ্ট মুখচ্ছবি। ভদ্রমহিলা যতক্ষণ ধরে বসে আছে এই সময়ের মধ্যে তার কাছে আর কাউকেই আসতে দেখা গেল না। বোধহয় সে একাই ভ্রমণ করছে। রায়হান লক্ষ করল জানালার পাশের চেয়ারগুলো সব ফাঁকা। এই মুহূর্তে করিডোরে কেবল সে আর ঐ ভদ্রমহিলা।
বিকেল থেকে একনাগাড়ে ঝরছে। যতদূর চোখ যায় বিরামহীন বৃষ্টির ধারা। নদীর পানিতে বড় বড় বৃষ্টির ফোঁটা পড়ছে। দূরে ঘোলাটে আকাশ। রায়হান বসে আছে লঞ্চের কেবিনের সামনের করিডোরে। কেবিনগুলোর সামনে লম্বা করিডোর এবং করিডোর থেকে নদীর দিকে বড় বড় খোলা জানালা। প্রতিটি জানালার পাশে মুখোমুখি চেয়ার পাতা রয়েছে। তারই একটাতে বসে বৃষ্টি উপভোগ করছে রায়হান। সমস্যা শুধু একটা- বুড়িগঙ্গার পানি কালচে রঙের, আর সেখান থেকে উৎকট গন্ধটা সহ্য করতে হচ্ছে।
ত্রিতলবিশিষ্ট এই লঞ্চটির দোতলা ও তিনতলার সবগুলোই কেবিন। নিচতলায় ডেকে বসে ও শুয়ে অসংখ্য মানুষ চলাচল করে। রায়হান বসে আছে নদীর দিকে মুখ করে। তার মুখোমুখি বসানো চেয়ারটি খালি। মাঝে মাঝে বৃষ্টির ছাট এসে লাগছে তার গায়। তবুও সরে যাচ্ছে না সে। ভালোই লাগছে। এমন উন্মুক্ত জায়গায় বসে বৃষ্টি দেখেনি অনেকদিন। নদীতে বসে বৃষ্টি দেখার সৌভাগ্য এর আগে হয়নি রায়হানের। অবশ্য বুড়িগঙ্গার দূষিত ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি সে আনন্দ অনেকটাই ম্লান করে দিচ্ছে।
সন্ধ্যা হতে এখনও কিছুটা সময় বাকি। মেঘলা আবহাওয়ার জন্য চারিদিকে একটা অন্ধকারের আবহ লক্ষ করা যাচ্ছে। লঞ্চের করিডোরে এই মুহূর্তে লোকজনের আনাগোনা নেই তেমন। তবে সন্ধ্যার পরে পরিস্থিতি বদলে যাবে পুরোপুরি। তখন লোকজনে ভরে উঠবে প্রতিটি লঞ্চ। হৈ-হুল্লোড়, চিৎকার-চেঁচামেচিতে কান ঝালাপালা হয়ে উঠবে। তারপর লঞ্চ ছেড়ে দেয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই সব থেমে যাবে। রাতের নিমগ্ন অন্ধকার এসে ভর করবে সর্বত্র। যতবার লঞ্চে ভ্রমণ করে এই দৃশ্যপট সবসময়ই প্রত্যক্ষ করে সে। আশেপাশে আরও বেশকিছু লঞ্চ ঘাটে নোঙর করে আছে।
রাত আটটা। লঞ্চ টার্মিনালে গিজগিজ করছে লোকজন। কেবিন ব্লকে লোকজনের ভিড়ভাট্টা কিছুটা কম হলেও প্রতিটা লঞ্চের নিচতলায় প্রচুর মানুষের সমাগম। এরা সবাই যে যাত্রী তা নয়, অনেকে এসেছে আত্মীয়-প্রিয়জনদের বিদায় জানাতে কিংবা লঞ্চে পৌঁছে দিতে। আর আধ ঘণ্টার মধ্যেই এরা সবাই বিদায় নেবে। লঞ্চ ছাড়বে রাত ন’টায়।
এই মুহূর্তে ঘাটের সবগুলো লঞ্চ আলোর বন্যায় ভাসছে যেন। চারিদিকে ঝলমলে আলো। তবে লঞ্চগুলো ছাড়িয়ে একটু দূরে তাকালেই জমাট অন্ধকার। বৃষ্টি থেমে গেছে অনেকক্ষণ। ভদ্রমহিলা আবার ফিরে এসে ঠিক আগের চেয়ারটায় বসল। ঘণ্টাখানেক আগে তার কেবিনে চলে গিয়েছিল। তার কেবিনটা রায়হানের একটা কেবিন পরে। মাঝখানের কেবিন থেকে একটি মেয়ে বেরিয়ে এসে ভদ্রমহিলার পাশে জানালার গ্রিল ধরে দাঁড়াল। ভদ্রমহিলার সেদিকে খেয়াল নেই, সে বাইরে অন্ধকারেরর দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটির বয়স বিশ-একুশ হবে। ফর্সা, ছিপছিপে গড়নের। মেয়েটি হঠাৎ ঘুরে রায়হানকে দেখল একবার। নির্লিপ্ত চাহনি। রায়হান কিছুটা আশ্চর্যান্বিত হলো। মেয়েটির চেহারার সাথে ভদ্রমহিলার চেহারার হালকা একটা মিল আছে। আচমকা তাকালে দু’জনকে মা-মেয়ে বলে ভ্রম হতে পারে, অথচ তাদের আচরণে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে তারা কেউ কাউকে চেনে না।
বেশ কিছুক্ষণ পর মেয়েটি বলে উঠল, ‘বসতে পারি?’
নদীর দিক থেকে ঘুরে মেয়েটির দিকে তাকাল ভদ্রমহিলা। তারপর ঘাড় নেড়ে ইশারায় বসতে বলল। মেয়েটি বসার পর ভদ্রমহিলা বারবার ঘুরে ফিরে মেয়েটিকে দেখছিল। এতক্ষণ যেমন একাগ্রচিত্তে নদীর বুকে অন্ধকারে নিমগ্ন ছিল সে, এখন তাতে কিছুটা হলেও ব্যত্যয় ঘটছে। মেয়েটি কিছুটা হলেও তার মনোযোগ কেড়ে নিয়েছে।
ওখানে আবছা অন্ধকার। রায়হানের অবস্থান থেকে মহিলাকে স্পষ্ট দেখা যায়। সে লঞ্চের যে জানালার সামনে বসেছে, সেখানকার করিডোর থেকে অনেকটা আলো চুঁইয়ে এসে তার অবয়বকে স্পষ্ট করে দিয়েছে। সেই আলোয় রায়হান স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে ভদ্রমহিলার চেহারায় এক আশ্চর্য পরিবর্তন এসেছে। মনে হলো সে মেয়েটিকে দেখে কিছুটা হলেও অবাক হয়েছে। মেয়েটি বসেছে রায়হানের দিকে পেছন ফিরে, তাই তার অভিব্যক্তি ঠিক বোঝা গেল না। ভদ্রমহিলা মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করল,
‘তোমার নাম কী মা?’
‘খুরশিদ জাহান। সবাই ডাকে নীলা।’
‘তোমার এই নীলা নামটা কে রেখেছে?’ মহিলার মুখে স্মিত হাসি।
“আমি ঠিক জানি না। তবে আমার ছোট চাচির মুখে কয়েকবার শুনেছি- আমার মায়ের খুব পছন্দের নাম ছিল ‘নীলা’। তাই মায়ের পছন্দ অনুযায়ী এই নামটা ছোটচাচি রেখেছে।”
ভদ্রমহিলা কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। তারপর নিচু কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল,
‘বললে তোমার মায়ের পছন্দের নাম ছিল। তোমার মা কি বেঁচে নেই?’
‘জানি না। বড় হবার পর থেকে মাকে দেখিনি। ঘরে সৎ মাকেই পেয়েছি। বাবাকে অনেকবার জিজ্ঞেস করেছি। সে বলে মা নাকি জন্মের পর আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। দাদিও তাই বলেছে তবে ছোট চাচি একবার বলেছিল তারা মিথ্যা কথা বলেছে। অবশ্য ছোট চাচিকে এই কথার বলার জন্য অনেক বকা শুনতে হয়েছে। তারপর থেকে আমি আর কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করতাম না।’
ভদ্রমহিলা আনমনে বলে উঠল, ‘ও।’
‘তোমাদের বাড়ি কোথায়?’
‘ফুলেশ্বরী নদীর পাড়ে।’
ভদ্রমহিলার মধ্যে এক ধরণের অস্থিরতা লক্ষ করা গেল। বেশ কিছুক্ষণ মেয়েটিকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখল। মনে হলো একবার হাত বাড়িয়ে যেন মেয়েটিকে ছুঁতে চাইল। তৎক্ষণাৎ আবার নিজেকে গুটিয়ে নিলো। অনেকক্ষণ থম মেরে বসে রইল নদীর দিকে চেয়ে। তারপর ছোট করে জানতে চাইল,
‘কোন গ্রামে তোমাদের বাড়ি?’
‘গ্রামের নাম পদ্মবাগ।’
চমকে উঠল ভদ্রমহিলা। মেয়েটির মুখের দিকে অপলক তাকিয়ে রইল অনেকক্ষণ। তারপর ঘুরে নদীর গহীনে কী যেন খুঁজে ফিরছিল। লঞ্চের ঝলমলে আলোর বাইরে বিশাল জলাধারের বুকে জমাট অন্ধকার। সেই অন্ধকারের মাঝেই যেন ভদ্রমহিলা হাতড়ে ফেরে নিজের জীবনের বর্তমান আর অতীতের পাওয়া না পাওয়া হাসি-আনন্দ আর সুখের মুহূর্তগুলো।
রাত সাড়ে এগারোটা। রায়হান একটা সিগারেট ধরিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ লঞ্চটি ভেপু বাজিয়ে আশেপাশে কোনো ছোট লঞ্চ কিংবা নৌকাকে নিজের উপস্থিতি জানান দিলো। এরই মধ্যে চারপাশে নীরব হয়ে পড়েছে। লঞ্চের বারান্দার দিকে মুখ করে থাকা কেবিনগুলোর দরোজা সব এখন বন্ধ। যাত্রীদের বেশির ভাগই হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে। মাঝে মাঝে দু’একজন রুম থেকে বেরিয়ে করিডোরের শেষ মাথায় যাওয়া আসা করছে, প্রাকৃতিক ক্রিয়া সারার জন্য। যাত্রাপথে রায়হানের সাধারণত ঘুম হয় না। লঞ্চ জার্নিতে সে এই রাতগুলো জেগেই কাটায়। বেশির ভাগ সময় এই বারান্দায় বসে থাকে। সামনে অন্ধকারের রাজ্যে বিশাল শূন্যতা। লঞ্চের ইঞ্জিনের একটা মৃদু গুঞ্জন বেজেই চলেছে। তবে নিচে ডেকে ইঞ্জিনরুমের কাছাকাছি যারা থাকে সেখানে ইঞ্জিনের অনেক শব্দ। ওখানে মুখোমুখি থাকা একজন আরেকজনের কথাও ঠিকমতো শুনতে পায় না। চলন্ত লঞ্চের গায়ে পানি আছড়ে পড়ার ছপাৎ- ছপাৎ পানির শব্দ আসছে বাইরে থেকে। এই শব্দে ভদ্রমহিলা ও নীলার মধ্যকার মৃদুস্বরে কথোপকথন মাঝেমধ্যে চাপা পড়ে যাচ্ছে।
নীলা আবার কথা বলে উঠল। ‘আপনার বাড়ি কোথায়?’
নীলার কথায় সম্বিৎ ফিরে পেল ভদ্রমহিলা। নদীর দিক থেকে ঘুরে কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইল। তারপর বলল,
‘মেয়েদের আসলে নিজের বাড়ি বলে কিছু নেই। বিয়ের পর বাবার বাড়িতে সে মেহমান, স্বামীর বাড়িই সব। আর স্বামী তাড়িয়ে দিলে সে হয়ে যায় ভাসমান কচুরিপানা। আমি সেই দলেরই একজন, মা।’
নীলা থম মেরে বসে রইল অনেকক্ষণ। কী বলবে সে? মহিলার মনে হয়তো অনেক বড় কষ্ট লুকিয়ে আছে যা সে প্রকাশ করতে পারছে না। আর কিছু জিজ্ঞেস করা সমীচীন হবে কি? দ্বিধায় পড়ে যায় সে। একসময় ইতস্ততা ভেঙে জিজ্ঞেস করল,
‘তবুও আপনার একটা ঠিকানা তো আছে।’
‘একটা এনজিওতে কাজ করছি। নিজের বাবার গ্রামেই। অফিসের কাজেই এবার ঢাকায় আসা।’ ঈষৎ হেসে বলল ভদ্রমহিলা।
‘গ্রামের নামটা কী?’
‘সাহেবপুর। তুমি কি চেনো?’
‘চিনি না। তবে ছোট চাচির মুখে শুনেছি আমার নানা বাড়িও নাকি সাহেবপুর।’
ভদ্রমহিলা হাসল। তারপর ছোট্ট করে বলল, ‘তাই!’
‘আপনার বাবা নেই?’
‘না রে মা। বাবা মারা গেছে অনেক বছর হলো। মা-ও আর বেঁচে নেই। একটা ভাই আছে। তবে সেখানে যে আমার থাকতেই হবে এমন তো কোনো কথা নেই। আমার অফিস এরিয়াতেই থাকার ব্যবস্থা আছে। সেখানেই থাকি।’
‘ওহ সরি। আপনাকে মনে হয় কষ্ট দিলাম।’
‘না না, কষ্ট কেন হবে। এসব আমার সয়ে গেছে।’
‘আচ্ছা! এতক্ষণ কথা বলছি, আপনার নামটা কিন্তু জানা হলো না।’
ভদ্রমহিলা এবার অনিচ্ছা সত্ত্বেও হেসে ফেলল। একটু থেমে মৃদু হেসে বলল, ‘আমার নাম নীলিমা’।
‘নীলিমা! আনমনে কয়েকবার নামটি আওড়াল নীলা। তারপর হঠাৎ বলল, কোথায় যেন এই নামটা শুনেছি, এই মুহূর্তে ঠিক মনে করতে পারছি না।’
‘তাই?’ ভদ্রমহিমার কণ্ঠটা ভিজে উঠল যেন।
নীলা কিছুটা চমকে উঠল। ‘আপনাকে আবার কষ্ট দিয়ে ফেললাম বোধহয়।’ কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বলল নীলা।
‘আরে না না। তোমাকে এসব নিয়ে ভাবতে হবে না। আমি ঠিক আছি।’
দু’জনেই অনেকক্ষণ চুপ। শুধু নীলিমা কিছুক্ষণ পর পর নীলাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিল। কখনও দেখা যায় এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আবার নদীর দিকে ঘুরে আবার ফিরে তাকাচ্ছে। নীলিমা হঠাৎ জিজ্ঞেস করল,
‘তোমার মায়ের কথা মনে পড়ে না?’
নীলা নদীর দিক থেকে ঘুরে নীলিমার দিকে তাকাল। তারপর ম্লান হেসে বলল,
‘পড়বে কী করে! আমি তো আমার মাকে দেখিইনি। তাইতো তার কোনো ছবিও নেই স্মৃতিতে।’
‘মায়ের প্রতি অনেক রাগ, তাই না?’
‘নাহ! আমি জানি না আসলে কী ঘটেছিল। তবে এটা জানি সত্যটা আমার জানা হবে না কোনোদিন। তবে চাই যেখানেই থাক, মা যেন ভালো থাকে।’
‘তোমার কী ধারণা, নিজের সন্তানকে দূরে রেখে কোনো মা কি ভালো থাকতে পারে? মন পোড়ে না?’ অনেকটা ধরা গলায় বলল নীলিমা।
‘জানি না। আসলে এভাবে কোনোদিন ভাবিনি।’ নীলা বলল।
আবার দু’জনে চুপচাপ। এভাবেই থেমে থেমে কথা চলছিল দু’জনের মধ্যে। কেবিন-বয় করিডোরে এলে নীলিমা কাছে ডাকল।
‘আমাদের জন্য দু’কাপ চা দাও।’
ওদের চায়ের কথা শুনে রায়হানেরও তেষ্টা পেয়ে গেল। সে-ও এক কাপ চায়ের অর্ডার করল। নীলা তখনই পেছনে ঘুরল। রায়হান খুব ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করল তাকে। পাশ থেকে দেখতে মেয়েটিকে অনেকটা ওই ভদ্রমহিলার মতোই লাগছিল। অল্পক্ষণের মধ্যেই কেবিন-বয় চা দিয়ে গেল। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে নীলা জিজ্ঞেস করল,
‘আপনার কথা তো কিছুই বললেন না। শুধু বললেন একটা এনজিওতে কাজ করছেন। আপনার স্বামী-সন্তান নেই?’
নীলিমা আনমনে নদীর দিকে তাকিয়ে রইল। যেন নীলার কথা শুনতেই পায়নি। নীলা আবার বলল,
‘কিছু বলছেন না যে!’
এবার নীলার দিকে ফিরে তাকাল সে। তারপর ম্লান মুখে বলল,
‘ঐ যে বললাম স্বামী তাড়িয়ে দিলে কচুরিপানা। আমি তেমনই এক কচুরিপানা। নিজস্ব কোনো ঠিকানা নেই।’
‘তার মানে আপনার স্বামী আপনাকে তাড়িয়ে দিয়েছে?’ নীলার কণ্ঠে এক ধরণের ক্ষোভ।
‘সংসার করার ভাগ্য না থাকলে যা হয়।’
‘তিনি কেন এমন করলেন? আপনাকে দেখে তো মনে হয় আপনি শিক্ষিত একজন মানুষ। দেখতে শুনতেও কারো চেয়ে কম নন। তবে আপনার ক্ষেত্রে কেন এমনটা ঘটবে?’
‘দেখো মা, তোমার বয়স কম। মানুষের ভেতরের কুৎসিত চিত্রটা তোমার হয়তো দেখা হয়নি। আমি দোয়া করি কোনোদিন যেন দেখতে না হয়। আসলে মানুষের লোভ আর হীন মানসিকতা অনেকের জীবনে বড় বড় সমস্যার জন্ম দেয়। আমার বাবার আর্থিক অবস্থা ততটা সচ্ছল ছিল না, তাই সে তার মেয়ে জামাইয়ের চাহিদা পূরণ করতে পারেনি। সে কারণেই আমার সংসারটা আর টিকল না।’
‘তার মানে যৌতুক! আপনি যৌতুকের বলি হয়েছিলেন?’ ক্ষোভের সাথে বলে উঠল নীলা।
একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নীলিমা বলল, ‘ব্যাপারটা তেমনই।’
‘আপনার কোনো সন্তান ছিল না?’
‘আছে।’
‘সে কি ছেলে নাকি মেয়ে।’
‘মেয়ে। তোমারই বয়সী।’ বলে নীলার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল নীলিমা।
নীলা চুপ করে রইল। আবার নীরবতা নেমে এলো সেখানে। দু’জনেই জানালার বাইরে চুপচাপ তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর নীলিমার দিকে ফিরল নীলা। মনে মনে ভাবল- প্রকৃতির কী অদ্ভুত খেলা! কত বিচিত্র এই জগৎ। কোথাও আলোর নিচে নিরেট অন্ধকার, আবার কারো কারো ক্ষেত্রে দুর্বিষহ অন্ধকারে ঢেকে যাওয়া জীবনের গাঢ় আবরণটা সরে গেলেই বেরিয়ে আসে এক উজ্জ্বল আলো। নীলা এক পরম বিস্ময় নিয়ে নীলিমার দিকে তাকিয়ে রইল। তার দ্যুতিময় মুখচ্ছবি থেকে যেন অদ্ভুত কোমল, স্নিগ্ধ সেই আলোকছটা বেরিয়ে আসছে। নীলা আলতো করে তার একটি হাত ধরল। নীলার বুকের ভিতর এতদিনের জমানো আবেগ, মাকে কাছে না পাওয়ার কষ্ট, হাহাকার সব পুঞ্জিভূত হয়ে বাইরে বেরিয়ে আসতে চায়। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে সে।
রায়হান গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এই দু’জন মানুষকে। রাতে সারা লঞ্চময় ঘুরে বেড়ানো একটা স্বভাব আছে রায়হানের। বিচিত্র মানুষের আনাগোনা হয় এখানে। সারা লঞ্চে অসংখ্য মানুষ পাশাপাশি বিছানা পেতে যাত্রা করে। কেউ কেউ সপরিবারে। পাশাপাশি বসা সমবয়সী লোকদের কেউ কেউ তাস খেলায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আবার কেউ কেউ নিজেদের মধ্যে গল্পে মশগুল। প্রতিটি মানুষের নিজস্ব কিছু গল্প থাকে। একজন আরেকজনের সাথে তাদের জীবনের নানা গল্প, নানা অভিজ্ঞতা শেয়ার করে। রায়হান সেখানে গিয়ে চায়ের দোকানে চা খায় আর মানুষের জীবনের বিচিত্র রূপ প্রত্যক্ষ করে।
আজ আর নিচের ডেকে গেল না রায়হান। এই দু’জন মহিলা তার মনোযোগ কেড়ে নিয়েছে। কেন্টিনের ছেলেটা আবার করিডোরে এলে তাকে দিয়ে চা আনিয়ে এখানে বসেই খেয়ে নিলো। নদীর বুকে নিরেট অন্ধকার। দূরে মাঝেমধ্যে কিছু টিমটিমে আলোকছটা চোখে পড়ছে থেমে থেমে, আবার কোনো কোনোটা মিলিয়েও যাচ্ছে। লঞ্চটি এখন তীরের বেশ কাছে দিয়ে চলছে। বাইরে থেকে হু-হু বাতাস এসে গায়ে লাগছে। এখন গ্রীষ্মকাল। দিনের বেলায় প্রচ- দাবদাহে প্রাণ অস্থির হলেও এখন এই নদীর বুকে রাত্রিকালে চমৎকার ঠান্ডা বাতাসে মনপ্রাণ শান্ত হয়ে এসেছে।
হঠাৎ নীলা কোমল কণ্ঠে নীলিমাকে জিজ্ঞেস করল,
‘আপনার মেয়ে এখন কোথায়?’
একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নীলিমা বলে, ‘ওর বাবার কাছেই আছে’।
‘মেয়েকে দেখতে ইচ্ছে করে না?’
‘আমার কি আর সেই কপাল আছে, মাতৃত্বের স্বাদ পেলাম ঠিকই, কিন্তু মা হতে পারলাম কই? যে মেয়েকে জন্ম দিয়েই আমাকে চলে আসতে হলো, যাকে একদিনও আদর করে বুকে তুলে নিতে পারলাম না, ভয় হয় সেই মেয়ে কি আমাকে কোনোদিন মা বলে স্বীকার করবে?’
‘এখানে আপনার তো কোনো দোষ নেই। আপনাকে বঞ্চিত করা হয়েছে। অনেক বড় অন্যায় হয়েছে আপনার সাথে। মেয়ে কেন মেনে নিবে না?’
‘কিন্তু মা, আমার হয়ে কথা বলার কে আছে? তেমন মানুষ থাকলে তো এতগুলো বছর এভাবে এই কষ্টের ভার বইতে হতো না। তবে আমি আশা ছাড়িনি। আমার মনে হয়, একদিন না একদিন আমার মেয়ে আমার কাছে ফিরে আসবে।’
নীলা আর কিছু বলতে পারল না। নীলিমার ভেজা কণ্ঠস্বর আর মলিন মুখচ্ছবি তার ভাবনাগুলোকে এলোমেলো করে দিলো। অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে শেষে জিজ্ঞেস করল,
‘একটা কথা সত্য করে বলবেন?’
‘কী কথা মা? তোমাকে মিথ্যা কেন বলব?’
‘আপনার বিয়ে হয়েছিল কোথায়?’
নীলিমা নিরুত্তর। নীলা আবার বলে উঠল, ‘বলবেন না?’
‘বুঝতে পারছি না, তুমি জেনে কী করবে।’
‘কী আর করব! আমার খুব জানতে ইচ্ছে করছে।’
আরও কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থেকে নীলিমা বলল, ‘তোমাদের গ্রামেই।’
‘বলেন কী! আমাদের গ্রামে! কোন বাড়ি?’
‘থাক না মা। আমার মনে হচ্ছে তুমি হয়তো সেখানে গিয়ে একটা ঝামেলায় পড়বে। তারচেয়ে বরং আমার ভাগ্যটা আমাকেই বরণ করতে দাও।’
‘না না, কোনো ঝামেলা করব না। শুধু জানতে চাই আমাদের গ্রামে এমন লোভী মানুষটা কে।’
নীলিমা ইতস্তত করছে দেখে তার দু’টো হাত নিজের হাতে তুলে নিলো নীলা। তারপর শান্ত কণ্ঠে বলল,
‘প্লিজ!’
‘কথা দাও মা তুমি সেই বাড়িতে গিয়ে কোনো ঝামেলা করবে না। তাহলে আমার মেয়েটা হয়তো সমস্যায় পড়বে।’ নীলিমার কণ্ঠে অনুনয়।
‘আপনে বলেন। কথা দিলাম আমি কিছু বলব না।’
নীলার হাত দু’টি নিজের হাতের মধ্যে রেখেই নিচের দিকে তাকিয়ে নীলিমা বলল, ‘তোমাদের গ্রামের খন্দকার বাড়িতে বিয়ে হয়েছিল আমার।’
চমকে উঠল নীলা। ‘খন্দকার বাড়ি!’
‘কেন, তুমি ওদের চেনো?’
‘আপনার স্বামীর নাম কী?’ নীলিমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তার দিকে বিস্ময় যুক্ত চোখে তাকিয়ে জানতে চাইল নীলা।
‘খোকন খন্দকার। তখন তোমাদের গ্রামের একজন মেম্বর ছিল সে।’ কথাগুলো বলে জানালা দিয়ে অন্ধকার আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল নীলিমা।
চমকে উঠে নীলিমার দিকে তাকিয়ে রইল নীলা। তাকিয়েই থাকল অনেকক্ষণ। কখন যে দু’চোখ জলে ভিজে উঠেছে টেরই পায়নি সে। নীলিমা যখন তার দিকে ঘুরল, তখন সম্পুর্ণ অন্য এক মানুষ নীলা। মুহূর্তে নীলার জগৎটা আমূল বদলে গেছে। তার একুশ বছরের এই ছোট্ট জীবনে এতবড় চমক আর কখনও ঘটেনি। নীলিমা কী করবে বুঝে উঠতে পারল না। মেয়েটি এভাবে কাঁদছে কেন? হলো কী ওর! সে নীলার হাত ধরে জিজ্ঞেস করল,
‘তোমার কী হয়েছে মা, কাঁদছ কেন?’
নীলা তখনও নিশ্চুপ। অজান্তেই নীলিমার হাত দু’টি নিজের হাতের মধ্যে তুলে নিলো। বয়সী হাতের উপরে তার নিজের নরম হাতের পরশ বুলিয়ে দিচ্ছিল পরম ভালোবাসায়। তখন বাইরে জোর বৃষ্টি শুরু হয়েছে। জানালা গলে তার ছাঁট এসে লাগছে দু’জনের গায়েই। নীলিমা চেয়ারটা কিছুটা পিছিয়ে নিলেও নীলা স্থির হয়ে সেখানেই বসে রইল। নীলিমার হাত দু’টি তখন তার হাতের মধ্যে ধরা।
‘মা তুমি এমন করছ কেন, একটু বলবে?’ মৃদু হেসে বলল নীলিমা।
‘অনেক প্রতীক্ষার পর একজন মানুষ যখন তার বহু আকাক্সিক্ষত প্রিয় মানুষটির দেখা পায়, তখন তার মনের অবস্থা কেমন হতে পারে?’
নীলিমা স্তম্ভিত হয়ে নীলার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। মুহূর্তকাল পরেই সম্বিৎ ফিরল তার। কথাটার গূঢ অর্থ বুঝতে কিছুটা সময় লাগল।
‘তুমি...!’ কথা শেষ না করে গভীর দৃষ্টিতে নীলার দিকে তাকিয়ে রইল নীলিমা।
‘হ্যা আমিই। যার জন্য বুকে তীব্র হাহাকার নিয়ে এক মা দীর্ঘ একুশ বছর অপেক্ষার প্রহর গুনছিল।’
নীলিমার মুখে এক অপার্থিব হাসি ফুটে উঠল। ‘তুমিই আমার মেয়ে?’
‘হ্যা মা। আমিই তোমার মেয়ে। যাকে তোমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে তোমাকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছিল।’
সে এক আবেগমথিত মুহূর্ত। দু’জন মানুষ তাদের অতীত-বর্তমান ভুলে কখন যে নিজেদের মধ্যে হারিয়ে গেল, কেউ টেরই পেল না। অনেকক্ষণ পরে বাস্তবে ফিরল নীলিমা। তখন তার সারা মুখে ছড়িয়ে আছে এক অন্যরকম শুভ্র আলোকছটা। নীলিমার কোলে মুখ লুকিয়ে অঝোরে কাঁদছে নীলা। কাঁদছে নীলিমাও, আনন্দের কান্না। আজ এতগুলো বছর পর শূন্য বুকটা ভরিয়ে দিতে কাছে এসেছে তার আত্মজা, তাকে সে কোথায় রাখবে? মায়ের কোল থেকে মুখ তুলে সোজা হয়ে বসল নীলা।
‘আমি তোমার মেয়ে। আজ থেকে কেউ আর তোমার থেকে আমাকে আলাদা করতে পারবে না।’
নীলিমার মুখে দীপ্তিময় হাসি। সে হাসি থেকে ছড়িয়ে পড়েছে এক অপার্থিব আলো। যে আলোয় মুছে যাবে জগতের সব লোভ, হিংসা-বিদ্বেষ আর উঁচু-নিচুর ভেদাভেদ।
বাইরে নিঃসীম শূন্যতা। কোথাও কেউ নেই। সামনে বিশাল জলরাশি। যতদূর চোখ যায় কালচে জলের ধারা কলকল শব্দে বয়ে চলেছে। মাঝে মাঝে ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে লঞ্চের গায়। রায়হানের মনে নানা ভাবনা আসে। কত বিচিত্র মানুষের জীবন! মানুষের নিয়তি তাকে কোথা থেকে কোথায় নিয়ে যায়!
রায়হানের দৃষ্টি সামনের আদিগন্ত জলরাশির দিকে। ওখানে জলমগ্ন অন্ধকার। যেন ঘন কালো গভীর জলে অন্ধকারের স্নান। রায়হান মনে মনে ভাবে- সবকিছু ধুরে মুছে সাফ হয়ে যাক। পৃথিবীর তাবৎ মানুষের কষ্ট, যাপিত জীবনের যন্ত্রণা, সব। শুধু বেঁচে থাক ভালোবাসা, সম্পর্ক।
লেখক: কবি ও কথাসাহিত্যিক