উপন্যাস
বঞ্চিত কৃষক
(৬ষ্ঠ পর্ব)
ফজর আলী পরিশ্রমী। শ্রম দেয় অকাতরে। এই দেশে শ্রমজীবীরা অবহেলিত। কৃষক তাদের মধ্যে অন্যতম। সিজনের সময় শাকসবজী এতো সস্তা হয় যে কামলার খরচও উঠে না। অথচ, শহরে নাকি অনেক দাম। কী লাভ উৎপাদন করে? কৃষকের ভাগ্য কোন দিন ফিরে না! উৎপাদন বাড়লেও দাম এতোটাই কম পায় যে, দুর্ভাগ্য।
সবাই মুখে বড়বড় কথা বলে। কিন্তু কাজ আর করে না। নেতা মাইকে বহুকিছু বলে। বাস্তবে ঠনঠন। ফজর আলী অতো বড় কিছু বুঝে না। তবে গল্প শোনে। তার ছেলেমেয়ে শিক্ষিত। যুগ পাল্টাচ্ছে কিন্তু কৃষকের ভাগ্য পাল্টাচ্ছে না। অন্যকিছু শিখেনি ফজর আলী। তার কাছে জমিই ভগবান। ফসল এলে মুখে হাসি। দীর্ঘ হবে কি-না জানে না। ভাবেও না!
ফজর আলী রবিশস্য রোপণ করেছে। চারাগুলো চোখের সামনেই বড় হয়েছে। গিঁটে গিঁটে ফল। তা দেখেও ফজর আলীর মুখে হাসি নেই। দাম না পেলে ফসলগুলো গলার ফাঁস হবে। সরকারি বাবুগুলো গলগলিয়ে জিনিস কিনে। বেপারীদের কাছ থেকে। তাদের কাছে দাম বিষয় নয়। শুধু কৃষক চাইলেই দাম বেশি হয়ে যায়। ধমক দেয়!
ফজর আলী শুনেছে তারা খেতে গিয়ে টাকা বকশিস দেয়। শুধু কৃষকের বেলায় কৃপণ। তার ছেলেমেয়েও কি সাহেব হলে এমন হবে? চোখ দুটো ভিজে উঠে তার। কিন্তু লুকায় কষ্ট। জীবনে সে কেঁদেছে কম! সখিনা তাকে কাঁদার সুযোগ দেয় না। একজন পুরুষ নারীকে সাথে নিয়ে বলীয়ান। নারী হলো কোমল, নারী হলো কষ্ট সহিষ্ণু। নারী পুরুষকে শীতল রাখে। পুরুষকে ধৈর্যশীল করে। একজন নারী পুরুষকে স্বর্গ উপহার দিতে পারে, আবার চাইলে দোযখও উপহার দিতে পারে।
তবে নারী পুরুষকে সন্দেহ করে। এটা চিরন্তন হলেও গ্রাম্য সখিনা ফজর আলীকে সন্দেহ করে না! গ্রামে এসব কম। শহরের জীবনে বেশি। শিক্ষিত পরিবারে অনেক বেশি। ইদানিং মোবাইল পৃথিবীকে মুঠোয় এনে দিয়েছে। বিনিময়ে কেড়ে নিয়েছে সুখ। ভেঙে দিয়েছে পারিবারিক বন্ধন। ইদানিং ডিভোর্স সংখ্যা বেশি। ব্রোকেন ফ্যামিলির ছেলেমেয়ে ভুক্তভোগী। স্বামী-স্ত্রী হয়তো মুক্তি পায়। তবে মহা বিপদে পড়ে সন্তান। দুজনের হেয়ালির বলি এই সন্তান। কেউ কি মাথায় রাখে সন্তানের কথা। সন্তান তো দোষহীন। (চলবে,,,)
লেখক: কবি, কথাসাহিত্যিক ও গীতিকার