উপন্যাস
বঞ্চিত কৃষক

(৭ম পর্ব)
এই দেশের কৃষক হলো সাধক। সাধনা তার ধ্যানজ্ঞান। ফজর আলী সেই সাধকের প্রতিনিধি। তার জগৎ ছোট। সে বিশ্বের খবর জানে না। বিশ্ব এখন হাতের মুঠোতে হলেও, ফজর আলী তার ব্যতিক্রম। সখিনা, সুজন, পিপাস হলো তার ধ্যান; মেঘনার চর তার প্রাণ। লোকটা নিরক্ষর হলেও শিক্ষিত। ফসলের ভাষা পড়তে পারে, চাষের মনন বুঝতে পারে।
সখিনা তার, সে সখিনার। তবে যৌবনে সঙ্গীর চেয়ে, বৃদ্ধ বয়সে সঙ্গী থাকা অপরিহার্য। একে অপরের জন্য অপরিহার্য। অসহায় মানুষ উপেক্ষিত। মনুষ্য সমাজে তেলে মাথায় তেল দেয়ার মানুষের অভাব হয় না। প্রতিষ্ঠিত মানুষের গল্প সবাই শোনে, ব্যর্থ মানুষের কথা কেউ শুনতে চায় না। মানুষ মুখে যতটুকু বলে তার চেয়ে শতগুণ বলে মনে মনে, কল্পনায়। মানুষের কল্পজগত বিশাল। কল্পনা সমুদ্র, মুখের কথা খালের সমান। এই জগতে অপরের ভুল ধরার মানুষের অভাব হয় না।
গ্রাম্য পলিটিক্স খুব খারাপ। অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা। সূর্য ডুবার সাথে সাথে মানুষগুলো বেকার হয়ে যায়। তখনই পরচর্চায় মগ্ন হয়। চায়ের দোকানগুোলো যেন বিশেষজ্ঞদের কারখানা। কার বউ সুন্দরী, কার মেয়ের বিয়ে হচ্ছে না; কার নামাজ সহি নয়- এসব থেকে হাড়িতে গিয়ে থামে। এগুলো নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা।
ফজর আলী ঘরকুনো মানুষ। এক দুদিন বসেই সে আর যায় না। ধর্ম না জেনেই ধর্ম নিয়ে কথা বলে। কী যে বিচলিত সবাই অন্যকে নিয়ে। কী সুখ পায়? বুঝে না ফজর আলী। এক মুঠো উৎপাদনে নেই! পরচর্চায় মহাজ্ঞানী। ওরা পরকালের ভয় করে না! অথচ অন্যকে উপদেশ দেয়! (চলবে,,,)
লেখক: কবি, কথাসাহিত্যিক ও গীতিকার