গল্প
আকাশের চোখ

(৮ম পর্ব)
বড় মামার হাতে কাগজপত্রগুলো দিয়ে মনে মনে আশংকিত হয়ে অপেক্ষা করছে বৃষ্টি। কখন আবার কি বলে বসে বলা যায়না। বড় মামা বরাবরই অন্যের ভুল ধরায় ওস্তাদ। আর বোন ভাগ্নিদের বেলায় ত একেবারে মুখিয়ে থাকে। নানাবাড়ি বেড়াতে গেলে ছোট বেলা থেকেই ওরা বড় মামাকে যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতো। সামনে পরলেই কোনো না কোনো ভুল ধরবেনই।
এই চুলগুলো এমন উস্কুখুস্কু কেনো? কিরেএএএ আজ দাঁত মাজিসনাই? কিংবা, পড়ালেখার খবর নিয়ে মেতে উঠতেন। উফফ,,,
বড় মামা মাথা তুললেন, কিরেএএএ বিরক্ত হচ্ছিস?
তটস্থ হলো বৃষ্টি,,,
না না মামা, বিরক্ত হবো কেনো? এতো চমৎকার এসি রুমে বসে থাকা যায় অনির্দিষ্টকাল।
মামা বুঝলেন ভাগ্নী মামাকে খুশি করার জন্য একটু বাড়িয়েই অনির্দিষ্টকাল শব্দটি ব্যবহার করে ফেলেছে।
হাতের কাগজগুলো ডেস্কের ড্রয়ারে রেখে উঠলেন। বললেন, চল, বাসায় চল। অনেকদিন ত বাসায় আসিসনা।
বৃষ্টি কোনো আপত্তি করলোনা। আপত্তি করার প্রশ্নই আসেনা। যতক্ষণ মামার কাছাকাছি থাকা যায় ততই ভালো। কিছু একটা জুটাতে হলে খাটতেও হয়, আর এতো মামাবাড়ির আবদার। অনেকদিন পর বড় মামির হাতের রান্না খাবে ভাবতেই পেটের মধ্যে ক্ষিধে নামক শব্দটা মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো। সুর সুর করে মামার পিছুপিছু এগুতে লাগলো বৃষ্টি।
বড় মামা অনেক বছর ধরে কাওলার অফিসারস কোয়ার্টারে থাকেন। অফিস থেকে অল্প কিছু সময় লাগে গাড়িতে যেতে। তবুও দুপুরের লাঞ্চ নিয়ে আসেন। আজ আনেননি, বৃষ্টিকে বাসায় নিয়ে যাবেন, একসাথে বাসাতেই লাঞ্চ করবেন বলে। এয়ারপোর্ট থেকে কাওলা এলাকায় ঢুকলে মনেই হয়না এটা ঢাকা শহরের মধ্যে অবস্থিত। এ যেনো ইট পাথরের আড়ালে একখন্ড সবুজ গ্রাম। চারিদিকে অনেক বছরের পুরনো গাছপালা দিয়ে ঘেরাও দেয়া কাওলা এলাকায় ঢুকলেই মন আর চোখ একসাথে শীতল হয়ে যায়। তবে একটা পুকুর দেখলে বৃষ্টির গা ছমছম করে উঠে। বিশাল বিশাল আমগাছ দিয়ে ঘেরা পুকুর, এর নাম আবার আমবাগান। বাগানের যে সৌন্দর্য থাকার কথা তা এই বাগানের নেই। দেখলেই মনে হয় ভুত বাগান ভুত বাগান। এই পুকুরে নাকি প্রতিবছরই একজন না একজন ডুবে মরে।কি সাংঘাতিক! তবুও মানুষ এখানে গোছল করতে আসে।
হয়তো মৃত্যুই তাকে টেনে আনে, নয়তো পুকুরের ক্ষুধা নিবারনের জন্য প্রকৃতিই মানবসন্তান উপহার দেয় তার ভরা জলপেটে!
আমবাগান পার হয়ে বড়মামার বাসায় প্রবেশ করতে গিয়েও বৃষ্টি অন্যরকম সুখানুভূতি অনুভব করে। মনে হয় চাকচিক্যের বালাই না থাকলেও কেমন একটা শান্তি শান্তি ভাব আছে বাসাগুলোতে।শহরের অন্য এলাকার চেয়ে এসব এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে যোগাযোগ রীতিমতো আত্মিয়ের মতো।
বড় মামি মনে হয় দরজার পাশেই ছিলেন।কলিং বেল বাজতেই চিচিং ফাঁকের মতো দরজা খুলে গেলো।
স্বভাবমতো মামি জড়িয়ে ধরলেন বড়মামিকে। এখনো সেই ছোটবেলার মতো কপালে চুমু দিয়ে অনেকক্ষণ জড়িয়ে ধরে থাকেন।
মামা তাড়া দিলেন, আরে আদর আহলাদ পরে করো, আগে খাবার দাও, আমার আবার অফিসে যেতে হবে। তোমরা পরে গল্প সল্প করো।
টেবিলে খাবার সাজানোই ছিলো। মামি বৃষ্টিকে ফ্রেস হতে বলে সার্ভ করায় ব্যস্ত হলেন।
বাঙালির একটা চিরাচরিত অভ্যাস, খাবারের সময়ই চলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ আলাপ আলোচনা। কারণ, অন্যসময় যে বড়ই ব্যস্ত থাকা হয়, অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজে, তাই আলাপ আলোচনাটা চলে খাবারের মাঝে মাঝে। (চলবে,,,)
লেখক: কবি ও কথাসাহিত্যিক