গল্প
আকাশের চোখ

(৯ম পর্ব)
সবাই মিলে খাওয়ার টেবিলে বসার পর বড় মামিই কথা শুরু করলেন,
তা বৃষ্টিকে কি তোমাদের অফিসেই নিয়ে নিতে পারবা?
বড় মামা আমতা আমতা করলেন,
,,না,মানে,অফিসে তো তেমন নিয়োগ হচ্ছেনা এখন, তবে সিভিল অ্যাভিয়েশন হাই স্কুলে একটা পোস্ট খালি আছে। গত দুইমাস আগে নুরুল হক স্যার মারা গেলেন তাই। তিনি এইটের ক্লাস টিচার ছিলেন। সেই খালি পোস্টের জন্য দরখাস্ত আহবান করা হয়েছে। আরেববাপরে, একটা পোস্টের জন্য কয়েক শ দরখাস্ত জমা পড়েছে। চিন্তা করা যায়? চাকরির বাজার খুবই কঠিন।
মামি অনুযোগের সুরে বললেন, যতো কঠিনই হউক। মামা খালু চাচা ফুফা থাকলে অতো আবার কঠিন না। বৃষ্টির তো মামা আছে। ও তো তোমার বদৌলতে এয়ারপোর্টেই একটা চাকরি পেতে পারে। একটু চেষ্টা করলেই ত পারো।
মামা একটু কপাল কুঁচকে মামির দিকে তাকালেন,
আশ্চর্য? এটা স্বজনপ্রীতি হয়ে যাবেনা? তাছাড়া আমরা নিজেরাই যদি স্বজনপ্রীতির নামে দুর্নীতি করি, তবে দুর্নীতি দুর করা সম্ভব হবেনা কখনোই।
মামিও ছাড়বার নয়,
কেনো? কোটা পদ্ধতি অবলম্বন করেও তো ব্যবস্থা করা যায়! তোমার উছিলায় ত ও কোটা সিস্টেমে সহজেই চাকরি পেতে পারে। তুমি ইচ্ছে করলেই পারবে।
মামা মৃদু আপত্তি করলেন, আরে না লুনা, যেটা বুঝোনা সেটা নিয়ে কথা বলোনাতো।
বৃষ্টি এতোক্ষণ চুপচাপ খাচ্ছিলো। বড়মামার গলার স্বরে নিরবতা ভাঙলো,,
না মামি, আমিও চাইনা কোটা সিস্টেমে চাকরি। কেনো, আমি কি মেধা তালিকায় টিকবোনা? বলো!
মামি এবার বৃষ্টিকে মৃদু ধমক দিলেন, তুই চুপ থাক। তোর মামা ইচ্ছে করলেই পারে তোকে সিভিল অ্যাভিয়েশনেই একটা পোস্টে চাকরি পাইয়ে দিতে। যতই মেধাবী হোস, এই প্রতিযোগিতার বাজারে টেকাটা চ্যালেঞ্জিং কিন্তু। সহজ পথ থাকতে কেউ এতো বাঁকা পথে যায়? তারমধ্যে টেনশন ত আছেই।
আমার ছেলেটা কতো বলেছে, আম্মু আব্বুকে বলো আমাকে একটা যে কোনো পোস্টে যেনো চাকরির ব্যবস্থা করে। নাহ, ওনার এক কথা, পরীক্ষায় টিকে যদি পারে করবে। দুনিয়ার সব সততা নিয়ে বসে আছে তোর মামা। আবার অমুকের শালি, তমুকের ভাগ্নীকে কিন্তু ঠিকই চাকরি পেতে সাহায্য করেছে। আমার একটা মাত্র ছেলে শেষে কিনা দেশের বাইরেই চলে গেলো।
মামা খেই করে উঠলেন, আরে কিসের মধ্যে কি? তোমার ছেলেকে কতবার বলেছি অন্তত রিটেন পরীক্ষাটা দেখ, পরে ভাইবা টাইবা যা আছে সেটা আমি দেখবো। সেতো সেটাও পারলোনা। যতই সুপারিশ করে চাকরি পাক না কেনো, টিকে থাকতে হলে যে মেধার প্রয়োজন তা কি তোমার ছেলের আছে?
মামি পালটা অনুযোগ করলেন, হ্যা, সব মেধা শুধু তোমারই আছে। আর সব বকলম।
কথাবার্তার মোড় ঘুরাতে বৃষ্টি মামির রান্নার প্রশংসা শুরু করলো। ওহ মামি, তোমার হাতের এই চিংড়ি মাছ দিয়ে করল্লা চচ্চড়িটা অনেক মজা হয়। আমি যতই চেষ্টা করি এমন হয়না। একদম তিতা হয়ে যায়। মুখেই দেয়া যায়না। খুব মজা করে খেলাম। আলহামদুলিল্লাহ।
বড় মামাও মেধা আর কোটার প্রসঙ্গ রেখে খাবারের তালিকায় এলেন। বললেন, সিভিল অ্যাভিয়েশন স্কুলে যদি চাকরিটা করিস, তবে প্রতিদিন এমন করল্লা চচ্চড়ি খেতে পারবি।
তবে এয়ারপোর্টে একজন এনাউন্সার ও নেয়া হবে সাময়িক পদ্ধতিতে। যদি রাজি থাকিস সেখানেও চেষ্টা করা যাবে। তোর সামনে দুইটা পথ, একটা এনাউন্সার, আরেকটা শিক্ষকতা।
মামি এবার জোর দিলেন শিক্ষকতার দিকে। বললেন, শোন, আমাদের দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যে হারে প্রায়ই বন্ধ থাকে, তাতে মহিলাদের জন্য স্কুলের চাকরিই বেস্ট। আবার এয়ারপোর্টে এনাউন্সার হলেও খারাপ না। এখন ভেবে দেখ, কোন পথে যাবি?
খাওয়ার সাথে আড্ডা শেষে বড়মামা আবার অফিসে চলে গেলেন। মামি থালাবাসন গুছিয়ে রাখতে রান্নাঘরে গেলেন। আর বৃষ্টি বসার রুমের বিশাল বারান্দায় এসে বেতের চেয়ারটায় গা এলিয়ে দিয়ে দৃষ্টি প্রসারিত করলো সম্মুখে, যতদূর চোখ যায়। সে এখন দুই দিকের দুই দিগন্ত ছুঁয়ে দেখায় মগ্ন। কোনদিকে যাবে তা অদৃশ্য অদৃষ্টই জানে। (চলবে,,,)
লেখক: কবি ও কথাসাহিত্যিক