Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ জয়নুল আবেদীন


প্রকাশিত: ০৩:১১, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

প্রবন্ধ

হিজর বা হাতিম

হিজর বা হাতিম
ছবি: সবার দেশ

কা'বার উত্তর পাশে ধনুকের মতো ঘেরা যে অংশটুকু রয়েছে সে অংশটুকুর নাম হিজর বা হাতিম। হিজর কা'বা শরীফের অন্তর্ভুক্ত বিধায় হিজর কা'বার আওতার মধ্যে এসে যায়। কা'বা তওয়াফ করার সময় হিজরের তওয়াফও জরুরি হয়ে পড়ে। তাই কা'বা তওয়াফ করার সময় হিজরের তওয়াফ না করলে তওয়াফ শুদ্ধ হয় না। 

ইব্রাহীম (আ.) মক্কা ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় স্ত্রী হাজেরা ও পুত্র ইসমাইল (আ.)-কে হিজরের ভেতর রেখে গিয়েছিলেন। যাওয়ার সময় নিজ স্ত্রীকে সেখানে ছাউনী তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কুরাইশরা কাবা পুনঃনির্মাণের সময় অর্থ সংকটের কারণে মূল কা'বার কিছু অংশ হিজরের মধ্যে রেখে দিয়েছিল। আবদুল্লাহ বিন যুবায়ের মক্কা শাসন করা কালে কা’বা পুনঃনির্মাণের কাজ করেন। পুনঃনির্মাণের সময় হিজরের অংশটুকু কা'বার অন্তর্গত করে ফেলেন। ইবনে যুবায়ের শহীদ হওয়ার পর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এ অংশটুকু পুনরায় হিজরের আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দিয়ে কুরাইশদের পুরানো ভিত্তির উপর কা'বার দেয়াল তৈরি করেন, যার উপর আজও কা'বা শরীফ স্থাপিত। তাই ধরতে হবে কা'বার কিছু অংশ হিজরের মধ্যে এবং কিছু অংশ হিজরের বাইরে রয়েছে।

কারো কারো মতে ইসমাইল (আ.)-কে নিজ মাতার কবরের পাশে হিজরের মধ্যে কবরস্থ করা হয়েছে। আবার কারো কারো মতে, এ ধারণা মোটেও ঠিক নয়। কারণ, কা'বা পুনঃনির্মাণের সময় কবরের নাম নিশানাও কেউ দেখতে পাননি। এটি সত্যি হলে আমাদের চলাফেরা অবৈধ হতো। কারণ, রাসূল (স.) কবরের উপর চলতে ও বসতে নিষেধ করে গেছেন। 

অনেক হাদিসে এ বিষয়ে বর্ণিত আছে যে, যে ব্যক্তি হিজরে প্রবেশ করলো সে যেনো বায়তুল্লাহয় প্রবেশ করলো। আয়শা (রা.) কর্তৃক বর্ণিত আছে, ‘আমার ইচ্ছা হতো যে আমি কা’বায় প্রবেশ করি ও নামায আদায় করি, রাসূল (স.) আমাকে ধরে হিজরের মধ্যে প্রবেশ করান এবং বলেন, ‘যদি বায়তুল্লায় প্রবেশ ও নামায আদায় করার ইচ্ছা করো তা হলে এখানে হিজরে নামায আদায় কর। কেননা এটি বায়তুল্লারই অংশ। কারণ, কুরাইশরা যখন কা'বা নিৰ্মাণ করে তখন হিজরটি বাইরে রেখে দেয়।’ 

হিজর বা হাতিমের ভেতর নামায আদায় করা আর কা'বা শরীফের ভেতরে নামায আদায় করা এক ও অভিন্ন। তাই কা'বা তওয়াফকারীগণ অধিক আগ্রহের সাথে হাতিমের ভেতর নামায আদায় করার জন্যেও মরিয়া হয়ে ওঠে। বর্তমানের সাধারণ তওয়াফকারীদের সাধারণভাবে হাতিমে প্রবেশ করাও সহজ নয় ৷

কারো কারো মতে, হাতিমে নামায আদায় করার ফজিলতই আলাদা। কা'বার মিযাবের নিচে দাঁড়িয়ে যে দোয়া করবে সে দোয়া গৃহীত হবে ও এক দিনের নবজাত শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে যাবে। আবার কারো মতে, এটি দুর্বল বর্ণনা, এসব কথার পক্ষে কোনো শক্ত দলিল-প্রমাণ নেই।

তারপরেও আবেগপ্রবণ মানুষ অত্যধিক আবেগে গরম হয়ে পবিত্র পাথর হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন ও স্পর্শ করার জন্য যেভাবে মরিয়া হয়ে জট পাকায়, সেভাবে হাতিমের ভেতর নামায আদায় করার জন্যেও মরিয়া হয়ে জট পাকিয়ে পড়ে থাকে। ফলে সাধারণ ও দুর্বল তওয়াফকারীদের কা’বা প্রদক্ষিণ এবং অনুশাসনসহ ধর্মীয় রীতি-নীতি পালনে অনেক ব্যাঘাত হয়। অনেক সময় পাহাড়ের মতো উঁচু এবং পিলিকেন কালির মতো কালো বর্ণের কিছু কিছু (আফ্রিকান নিগ্রো) আবেগী তওয়াফকারীর ধাক্কায়- হাজরে আসওয়াদ ও হাতিমের পাশে পাহারারত পুলিশের পিঠ কা'বার দেয়ালে ঠেকে যায়। তাই কখনও কখনও দাঙ্গা পুলিশ ডান্ডা হাতে জট খুলে অতিরিক্ত আবেগ ঠান্ডা করে দিতে বাধ্য হয়।

লেখক: আইনজীবী ও কথাসাহিত্যিক