Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ ড. লিপন মুস্তাফিজ


প্রকাশিত: ০০:১৬, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

আপডেট: ০০:১৭, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

উপন্যাস

আকাশ মেঘলা হলেও হাসে

আকাশ মেঘলা হলেও হাসে
ছবি: সবার দেশ

(পর্ব পাঁচ)

---স্যার, আপনার বাসা থেকে তো এইখানে আসা অনেক কঠিন, আপনার তো অনেক জানাশোনা। দেখেন না স্যার বদলিটা করে ঢাকায় ফিরে যেতে পারেন কিনা। এছাড়াও আপনার শরীরটা ভালো না, প্রতিদিনের জার্নিতে আপনার শরীর আরো খারাপ করবে।

---আমি বললাম, মিরাজ তোমার বদলি হয়েছিলো এ শাখায়। আজ আমরা একই সাথে কাজ করবো। তুমি অনেক মন খারাপ করেছিলে, আমার সাথে দেখাও করেছিলে। তোমার ধারণা ছিলো আমি বললেই এমডি স্যার তোমার বদলি বাতিল করবেন। 
স্যার, স্যার।
আমি আবারো বললাম, আমি এইচআরডিতে নেই দুই বছরের কাছাকাছি। তুমি কি পেরেছো ঢাকায় ফিরতে?
না, স্যার, পারিনি।
তাহলে এবার বোঝ, আমার হাতে কি সব ক্ষমতা ছিলো বা আছে? তোমরা তো ভেবেছিলে আমি ব্যাংক চালাই। এটা ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তোমার বদলিটা হয়, এইখানে আমার বা আমাদের ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দ নেই।

অনেক ঘিঞ্জি এলাকা দিয়ে যাচ্ছি, পায়ে হেঁটে চলা মুশকিল। ঠেলায় মাল আনা নেয়া হচ্ছে, পাশেই আড়ত কাঁচা মালের গন্ধ পাচ্ছি। একটু পর পর গার্মেন্টস। ভবনের সামনে কাভার্ড ভ্যান সারি সারি দাঁড়িয়ে, রাস্তা গুলো আরো সরু হয়েছে। থানার সামনে দিয়ে যেতেই দেখতে পাই, টের পায় কী দারুণভাবে পুড়িয়েছিলো, ক্ষোভকে মেটাতে পেরে উল্লাস করেছিলো সেদিনের মানুষ। মনে মনে ভাবি মিরাজ আমাকে কতভাবে ট্যাগ দিলে তোমরা। আমার নামে কত আজে বাজে কথা তোমরা বলেছ। আজ এসেছ সহানুভূতি জানাতে। মানুষ পারেও। মানুষ এত বাজে কেন হয়? কী করে হয়? তখন যারা ম্যানেজমেন্ট এর আশে পাশে ছিল তারাই এখন নতুন ম্যানেজমেন্টের আশে পাশেই।

----আমারো কিছু করার ছিলো না, কারণ তুমি এ ব্যাংকে কাজে যোগদানের পর থেকেই ওইখানে কাজ ছিলো। তোমার মতো অনেকেই ছিলো তাদেরকে অফিসের নিয়মের কারণে বদলি করতে হয়েছিলো। মনে কষ্ট নিও না।চ

বলতে বলতে মেইন রাস্তায় চলে এলাম, দেখি সারি সারি গাড়ি, ঢাকা ঢাকা করছে। আমাদের আলাপ শেষ হবার আগেই একটা বাসের কাছে চলে এলাম, আমাকে তুলে দিয়ে সালাম দিয়ে চলে গেলো। হর্ণ আর রিকশার টুংটাং সহ্য করা যাচ্ছে না, দোকানের পাশে শরবত বিক্রি করছে। মাইক বেজেই চলেছে। ভেবে পাইনা সারাদিন ট্রাফিকেরা কী করে কাজ করে। যেখানে গাড়ি দাঁড়িয়ে এর ডান পাশে ট্রেন লাইনের ক্রসিং। উপরে সিএনজি, অটো রিকশা হাঁক দিচ্ছে ওই চাষাড়া, চাষাড়া।

বাসের জানালা দিয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছি সব দৃশ্য কিন্তু আমার মন পড়ে আছে মিরাজের কথার ভেতরে। আমার চোখের সামনে ভেসে এলো, কতটা অসহায় ছিলো মিরাজ সেদিন। তার স্ত্রী সন্তান সম্ভবা, তবুও আমাকে দিয়ে মিরাজ তার বলদি ঠেকাতে পারেনি। আর আসলে এক স্থানে টানা আট বছর কাজ করাটা কি আসলেই শোভন? আমার আগে যারা এ বিভাগে কাজ করতেন তারা যদি তিন চার বছর পর পর বদলি চালু রাখতেন তাহলে আজ এ অবস্থা হতো না।

অনেক অনেক বছর আগে আমি একবার চাষাড়া এসেছিলাম, না না আসলে একবার না মনে হয় দুই তিনবার। তখন চাকরী জীবনে নতুন না হলেও পুরাতন বলা যাবে না। তখনও আমি বিলেতে যাইনি। বাসে ওঠে চেনার চেষ্টা করলাম কোথায় এসেছিলাম, কিন্তু বুঝতে পারলাম না। বিলেত থেকে ফিরে এসে আমি যেখানে কাজ শুরু করেছিলাম সে অফিসের এক কলিগের বিয়ের দাওয়াতে এসেছিলাম, ওর নাম ছিলো চয়ন। শত চেষ্টা করেও বের করতে পারিনি কোথায় দাওয়াত খেয়েছি। 

খেলায় করছিলাম সদ্য সরকার পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাস্তা ফাঁকা রাখার চেষ্টা করছে আমার ছেলের বয়েসের ছেলেরা। এরাই ছাত্র, এরাই আমাদের শক্তি, এরাই আমাদের প্রেরণা। মাঝে মাঝে বাসে ওঠে চেক করছে টিকেটা ছাড়া কেউ আছে কিনা। কারও কারও ব্যাগ চেক করছে। সত্যি কথা বিরক্ত লাগছিলো। শুধু আমি একা না অন্যান্য যাত্রীরাও বিরক্তি প্রকাশ করছিলেন। রায়েরবাগ পর্যন্ত এভাবে আসা লাগলো। আমি মতিঝিল যখন এলাম তখন অফিস এর সময় শেষ প্রায়। ফোন দিলাম ইখতেদার ভাইকে। (চলবে,,,)

লেখক: কথাসাহিত্যিক ও ব্যাংকার