Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ আসমা সরকার


প্রকাশিত: ০০:১৯, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

গল্প

আকাশের চোখ

আকাশের চোখ
ছবি: সবার দেশ

(১০ পর্ব)

বড়মামার বাসা থেকে বাসায় আসতে আসতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেলো। আকাশ এখনো ফেরেনি। যাক, বাঁচা গেলো। তা না হলে হাজার রকমের প্রশ্ন করে অতিষ্ঠ করে তুলতো। কোথায় গিয়েছিলো, কেনো গিয়েছিলো?কি কাজ হলো? আরও এমন সব প্রশ্ন শুরু করবে যে বৃষ্টির রাগ না উঠা পর্যন্ত করতেই থাকবে।

নিজের রুমে ঢুকে বিছানায় গড়িয়ে পড়লো ক্লান্তিতে অবসন্নতায়। হঠাৎ করেই মনে হলো এটাই তার পৃথিবী। 
এখানেই পৃথিবীর সমস্ত আরাম আয়েশ নিরাপদ আশ্রয়।এ খানেই শুধু নিজের মতো করে বাঁচা যায়। এখানেই বিরাজ করে একখন্ড স্বাধীনতা। আবেশে চোখ বুজলো বৃষ্টি। কিন্তু সে স্বাধীনতায় একটু পরেই হস্তক্ষেপ করতে চলে এলো আকাশ।

আকাশ এসেই বৃষ্টিকে দেখে বুঝলো বেশিক্ষণ হয়নাই বাসায় এসেছে বৃষ্টি। তাই প্রশ্ন না করে থাকার মানুষ সে নয়। নিজের অফিসিয়াল লেবাস বদলাতে বদলাতে জিজ্ঞেস করলো, 
,,কি ব্যাপার? কোথায় কোথায় ঘুরলে আজকে?
বৃষ্টি কপাল কুঁচকালো,,
,,,,ঘুরলাম মানে?
,,না,বাইরে যাবে বলেছিলে, গিয়েওছিলে বুঝতে পারছি। তাই জানতে চাইলাম।
সোজা হয়ে বসলো বৃষ্টি, 
,,,তা সেটা গিয়েছি, কিন্তু ঘুরতে যাইনি। কাজে গিয়েছি।
,,সেটাই তো জানতে চাইছি। ঘুরাঘুরি না করলে কি আর কাজ হবে?

প্রতিউত্তরের অপেক্ষা না করেই আকাশ ওয়াশরুমে ঢুকলো। বৃষ্টি স্বাধীনতার মুখে কুলুপ এঁটে রান্নাঘরে ছুটলো।

এক সপ্তাহ পর বৃষ্টি বড় মামার এখানে আবার গেলো। এতোদিন মাসে বছরে দু একবার যাওয়া হতো তাও আবার কোনো আচার অনুষ্ঠান থাকলে। আর এখন মনে হয় বড় মামার বাসায় যতোক্ষণ থাকা হয় সম্ভাবনার ছায়ায়ই যেনো থাকা হয়। কাওলার আমবাগানের মতো শীতলতা অন্তরে অনুভূত হয়।

আজকাল এই এলাকায় এলে নিজের ভবিষ্যৎ সম্পর্কেও একটু আশার আলো দেখতে পায়। স্কুলের পাশ দিয়ে আসতে যেতে মনের মধ্যে ফেলে আসা ছাত্রজীবনের উচ্ছ্বলতা জেগে ওঠে। খুব ইচ্ছে করে এই স্কুল কলেজ লাইফটাকে ফিরে পেতে। ছাত্রজীবনে ফিরে যেতে না পারলেও ছাত্রছাত্রীদের মাঝে থাকতে পারাটাও ভাগ্যের ব্যাপার। দেখা যাক ভাগ্যে কি আছে? ভবিষ্যতের মানচিত্র আঁকতে আঁকতে বড় মামার বাসার সামনে চলে এলো। 

বড় মামির সাথে আড্ডা দিতে ভালোই লাগে বৃষ্টির। অনার্স পাশ একটা মহিলা সারাজীবন ঘর সংসার সামলেই কাটিয়ে দিলেন। এ বাসায় ও বাসায় আড্ডা আর সময় পেলে সেলাই করেন।বৃষ্টির সাথে গল্প করছেন আর সেলাই করছেন।
বৃষ্টি জিজ্ঞেস করলো, আচ্ছা মামি, তুমি ত অর্থনীতিতে অনার্স পাশ করেছো। কিন্তু কোনো কিছু করার ইচ্ছে কি হয়নি? অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার ইচ্ছাও কি হয়নি তোমার? 
মামি বাঁকা হাসি হাসলেন,
কে বললো কিছু করছিনা, এই যে কাঁথা সেলাই করছি। তোর মামার জন্য রান্নাবান্না করে রেডি রাখছি, ঘর পাহাড়া দিচ্ছি। আমি এক পাহাড়াদার, হাজার ক্লান্তি নিয়েও করি দিন-রাত পার। বিনিময়ে পাই ভালোবাসা উপহার।
উৎফুল্ল কন্ঠ বৃষ্টির, আরেব্বাহ, তুমি কিন্তু লেখালেখি করলেও পারতে।
দীর্ঘশ্বাস মামির কন্ঠে, আর লেখালেখি। জীবনের উপাখ্যান ই লিখে শেষ করতে পারছিনা। আচ্ছা আমার কথা বাদ দে, তোর কি খবর বল।
বৃষ্টি বড়মামার উপর ভরসা করার কথা বললে, মামি মনে হয় একটু দমে গেলেন।
তার উপরে অতো নির্ভর করিসনা। নিজে চেষ্টা কর। সে কিছু করতে পারবে বলে মনে হয়না। 
বৃষ্টির ভবিষ্যৎ দুলে উঠলো। নড়েচড়ে বসলো।
মামি, প্লিজ, তুমিও একটু তাড়া দিও, মনে করিয়ে দিও মামাকে।
আচ্ছা, আচ্ছা, সে বলবো। এখন কি খাবি বল। চল, একসাথে কিছু একটা বানাই। রান্নাঘরে পাশে কেউ থাকলে রান্নায় বিরক্তি লাগেনা। আয়।

বৃষ্টি সারাদিন মামির সাথে সময় কাটিয়ে মামা বাসায় ফিরতে দেরি হওয়ায় দেখা না করেই চলে যেতে চাইলে মামি বললেন, আজকে নাহয় থেকে যা, সকালে যাস।
না মামি, প্রিপারেশন নিয়ে আসিনি। অন্যদিন এসে থাকবোনে। বলেই মামির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে
সিঁড়ি দিয়ে নামছে আর ভাবছে,,
কি অদ্ভুৎ! আগে এই বাসায় আসতে মামা মামি কতবার ফোন দিতো, কিন্তু সময় হয়ে উঠেনি, আর এখন কতোবার সে নিজে থেকেই আসছে।
আসল কথা পৃথিবীতে কেউ প্রিয়জনের জন্য ছোটেনা ,ছোটে, প্রয়োজনে। (চলবে,,,)

লেখক: কবি ও কথাসাহিত্যিক