Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ জয়নুল আবেদীন


প্রকাশিত: ০০:৫৮, ২ মার্চ ২০২৫

প্রবন্ধ

মহামানবের মহাবাণী, মহাপ্রয়াণ ও মর্মকথা

মহামানবের মহাবাণী, মহাপ্রয়াণ ও মর্মকথা
ছবি: সবার দেশ

(১ম পর্ব)

মক্কার কা'বা এলাকা থেকে একুশ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণ দিকে মিকাত ও হারাম এলাকার বাইরে ময়দানে আরাফা। কিং ফাহাদ, মসজিদ আল হারাম, কিং আবদুল আজিজ, কিং ফয়সাল, আমির মজিদ ইবনে আবদুল আজিজ ও তায়েফ নামীয় অর্ধ ডজন সড়ক হারাম এলাকা থেকে ময়দানে আরাফার দিকে গিয়েছে। এর মধ্যে কিং ফয়সাল নামীয় প্রধান সড়কটি প্রধানত পায়ে চলার রাস্তা হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তিন দিক পাহাড় ঘেরা আরাফা যাওয়ার পথে রাস্তার দু'পাশে খেজুর গাছ ছাড়াও নিম গাছের মতো চিকন পাতা যুক্ত অনেক গাছ দেখতে পেয়েছি। কারো কারো মতে, এসব গাছের অনেকগুলোই বাংলাদেশ থেকে আনয়ন করা হয়েছে। প্রথম উদ্বোধনী গাছটাও কিনা রোপণ করে গেছেন বাংলাদেশের কোনো এক সরকার প্রধান।
আরাফা যাওয়ার পথে সামনে একটি বড় ওভার ব্রীজ দেখছি। নির্মিত ও নির্মাণাধীন সড়কের কিছু অংশ আমাদের ঢাকার মহাখালীস্থ ফ্লাইওভারের মতো লাগছিল। গাইড সামসু ভাই সামনের দিকে আঙ্গুল তুলে বললেন-

আরাফার পাশে এ পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে মহাকালের
মহামানব মহাপ্রয়াণের আগে মহাবাণী ঘোষণা করেছিলেন

সামনেই মীনা ও মুজদালেফা। মূল হজ্জের সময় হাজীদের মীনায় পাথর নিক্ষেপ, মুজদালেফায় অবস্থান ও আরাফায় সম্মেলনে শরীক হওয়া জরুরি। যখন ৮ জিলহজ্জ তালবিয়ার দিবস সমাগত হবে তখন মক্কায় অবস্থানকারী হজ্জযাত্রীগণ এবং মক্কাবাসীদের মধ্যে যারা হজ্জ করতে ইচ্ছা প্রকাশ করবেন তারা নিজ নিজ অবস্থানস্থল থেকে নিয়মানুযায়ী হজ্জের ইহরাম বাঁধা অবস্থায় মীনার পথে রওয়ানা হবেন। জিলহজ্জ মাসের ১১, ১২ ও ১৩ তারিখ পর্যন্ত হাজীদের সেখানেই অবস্থান করতে হয়। আল্লাহর নির্দেশে হযরত ইব্রাহিম (আ.) তৎপুত্র ইসমাঈল (আ.)-কে কোরবান করার উদ্দেশ্যে মীনায় নিয়ে যাচ্ছিলেন। জমরা নামক স্থানে পৌঁছার পর ধোঁকা দেয়ার জন্য শয়তান পিছু নেয়। ধোঁকা থেকে মুক্তি লাভের জন্য শয়তানকে লক্ষ্য করে তিন তিনবার কংকর নিক্ষেপ করতে হয়েছিল। 

মূলত শয়তানের প্রতি ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে তাবিরসহ প্রতীকী শয়তানের প্রতি প্রতিবার ৭টি করে মোট ২১টি কংকর নিক্ষেপ করতে হয়। হজ্জের সময় কংকর নিক্ষেপের এই প্রতীকী অংশটুকু বাস্তবে অন্যভাবে দেখা হয়ে থাকে। তা হলো, মনের কুপ্রবৃত্তিকে কোরবান করার উদ্দেশ্যে হাজীগণ যখন মীনায় রওয়ানা হয় তখন তিন তিন বার কংকর নিক্ষেপের দ্বারা পক্ষান্তরে মনের শয়তানকে তাড়িয়ে কুপ্রবৃত্তিকেই কোরবান করা হয়। তাই হজ্জের অপরিহার্য অংশ হিসেবে ১১ থেকে ১৩ তারিখ এই তিন দিন যথাক্রমে জমরায়ে সুগরা, জমরায়ে উসতা ও জমরায়ে আকাবায় মীনার অত্র এলাকায় প্রচুর হাজীর সমাগম হয়ে থাকে। কয়েক লক্ষ হাজী নির্ধারিত সময়ে নির্ধারিত স্থানে কংকর নিক্ষেপ করতে গিয়ে পায়ের তলায় পিষ্ট হয়ে প্রাণহানীর মতো ঘটনা বাড়তে থাকে। 

গত কয়েক বছরে কয়েকশ হাজী পাদপিষ্ট হয়ে প্রাণ হারানোর পর দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য সৌদী সরকারের উপযুক্ত ব্যবস্থার অংশ হিসেবে অত্র এলাকায় নির্মাণ কাজ চলছিল। খোঁজ-খবর নিয়ে আরো জানা যায়, পাথর নিক্ষেপের স্থান সম্প্রসারণ করে প্রস্থ ৮০ মিটার ও দৈর্ঘ্য ৯৫০ মিটার করা হবে। তৎসঙ্গে করা হবে বারোতলা বিশিষ্ট্য জমরা কমপ্লেক্স। আগামী হজ্জ মৌসুমে মীনার পূর্বদিক থেকে আসা হাজীগণ নিচতলা ও দোতলায়, মক্কা থেকে আসা হাজীগণ তৃতীয় তলায়, উত্তর দিক থেকে আসা হাজীগণ চতুর্থ তলায় এবং আজিজিয়া থেকে আসা হাজীগণ পঞ্চম তলায় উঠে কংকর নিক্ষেপ করতে পারবেন। মীনার সম্পূর্ণ কমপ্লেক্স চালু হলে একসাথে ৫০ লাখ হাজী কংকর নিক্ষেপ করার সুযোগ পাবেন।

আরাফা যাওয়ার পথে ডানদিকে নির্মাণাধিন অনেক পিলার দেখলাম। মোটা আকারের পিলারের উপর উড়ন্তরেল বা মেট্রো ট্রেন চালু হবে। চৈনিকদের তৈরি উড়ন্তরেল বা মেট্রো ট্রেনটির নাম ‘আল মাশায়ের আল মুকাদ্দেশাহ’। নির্মাণ সম্পন্ন হলে মুকাদ্দেশাহ একাই ত্রিশ হাজার যানবাহনের প্রয়োজন মেটাতে পারবে। মেট্রো ট্রেনে আরোহণ করে মীনা আরাফা, মুজাদালেফাসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহ ঝুঁকিহীন অবস্থায় পরিদর্শন করতে পারবেন। হাজী সাহেবদের দুর্ভোগ কমানোর জন্য এ যাবত যত প্রযুক্তি স্থাপিত হয়েছে তন্মধ্যে জমজমের পানি সরবরাহ পদ্ধতি, শয়তানকে কংকর নিক্ষেপের স্থান স¤প্রসারণ প্রক্রিয়া এবং মেট্রো সার্ভিস পদ্ধতি একদিকে মুক্তচিন্তা অপরদিকে যুগোপযোগী ও বিজ্ঞান সম্মত হয়েছে বলে সবাই মনে করছে। ঝুঁকিহীন কংকর নিক্ষেপের জন্য মীনা কমপ্লেক্স ও মেট্রো ট্রেন সার্ভিসের জন্য বাদশা আবদুল্লাহ বিন আবদুল আজিজও সৌদী শাসনামলে মাইল ফলক হয়ে থাকবেন। নানা কারণে হাজীগণের জন্য আরাফায় অবস্থানও বাধ্যতামূলক। আরাফায় অবস্থান না করলে হজ্জ পূর্ণ হয় না। রাসূল (স.) বলেন: ‘আরাফায় অবস্থানের নামই হজ্জ’।

যে আরাফায় অবস্থান করতে পারবে না তাকে কোরবানী ‘দম’ দিয়ে পরের বছর হজ্জ করতে হবে। তাই আরাফায় অবস্থান করা বাধ্যতামূলক। জিলহজ্জ মাসের ৯ তারিখে সূর্যাস্তের পর থেকে ১০ তারিখ ফজর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে আরাফায় অবস্থান করতে হবে। যে ব্যক্তি দিনে আসবে তাকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত থাকতে হবে। আর যে ব্যক্তি রাতে আসবে তার এক মুহূর্ত অবস্থান করতে হবে। কারণ রাসূল (স.) বলে যে গেছেন-
‘মুজদালেফার রাতে ফজরের আগে আরাফায় অবস্থান করবে তার হজ্জ পূরণ হয়ে যাবে।’ (বুখারী- ১৬৫০,ও মুসলিম - ১২১১)।

ইস্টার্ন রিংরোড, ওয়েস্টার্ন রিংরোড, সেন্ট্রাল রিংরোড দিয়ে পরিবেষ্টিত সম্পূর্ণ আরাফাত ময়দানে বৃক্ষ রোপণ করে বনায়ন করার চেষ্টা চলছে। রিংরোড বেষ্টনীর ভেতর আঁড়াআড়িভাবে রোড নং ১ থেকে রোড নং ৮ পর্যন্ত আড়াআড়িভাবে ৮টি ক্রস রোড রয়েছে। রিং ও ক্রস এই দুই প্রকারের রোডের ভেতর রয়েছে দুই ডজনেরও বেশি পাকা রাস্তা। এক সময়কার জনবিরল তরুলতাহীন মরুময় আরাফায় বর্তমানে রয়েছে বেশকিছু সুয়ারেজসহ অসংখ্য বৈদ্যুতিক খুঁটি ও নানা প্রকারের স্থাপনা। এখানে নামিরাথ মসজিদ, নামিরাথ হাসপাতাল, জাবাল-আর-রহমান হাসপাতাল ছাড়াও রয়েছে নিরাপত্তা ও ট্রাফিক হেড কোয়ার্টার। বৈদ্যুতিক খুঁটির মতো দেখতে খুঁটির মাথা থেকেই হজ্জের সময় কুয়াশার মতো জলীয় বাষ্প বের হয়ে উষ্ণতা কমিয়ে রাখে।

আমাদের ক্যাব সে পাহাড়ের কাছে এসে থামলো যে পাহাড়ের উপর দাঁড়িয়ে রাসূল (স.) বিদায় হজ্জের ভাষণ দিয়েছিলেন। পাশে উঁচু পাহাড়ের ধারে যেখানে দাঁড়িয়ে আখেরী নবী (স.) বিদায় হজ্জের আখেরী ভাষণ দিয়েছিলেন সে স্থানটি একটি পাকা ও শক্ত খুঁটি নির্মাণের মাধ্যমে চিহ্নিত করে রাখা হয়েছে। আজ থেকে চৌদ্দ'শ বাইশ বছর আগে এখানে দাঁড়িয়ে মহাবিশ্বের মহামানব মহাপ্রয়াণের কিছুদিন আগে সর্বশেষ মহাবাণী ঘোষণা করে গেছেন।

হিজরীর দশম বছর যখন আরবের লোক দলে দলে এসে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে লাগলেন তখন নবী করিম (স.) ভাবলেন তাঁর কার্য শেষ হয়েছে। তাঁর মৃত্যুর আর বেশি দিন বাকি নেই মনে করে তিনি মক্কায় গিয়ে শেষ হজ্জব্রত পালন করবেন মনস্থির করলেন। এ উদ্দেশ্যে তিনি জেলকদ মাসের ২৫ তারিখ (৬৩২ খ্রিস্টাব্দের ২৩ ফেব্রæয়ারি) লক্ষাধিক মুসলমান সাথে নিয়ে মক্কায় যাত্রা করে জিলহজ মাসের ৮ তারিখে (৭ই মার্চ) আরাফায় এসে হাজির হন। মক্কাতে এটাই নবী করিম (স.)-এর শেষ গমন এবং এটাই তাঁর জীবনের শেষ হজ্জ বলে একে ‘হুজ্জাতুল বেদা' বা বিদায় হজ্জ বলা হয়।

এই বিদায় হজ্জ উপলক্ষে নবী করিম (স.) আরাফাতের পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে উপস্থিত জনসমুদ্রকে লক্ষ্য করে যে ভাষণ প্রদান করেন তা এখনও প্রত্যেক মুসলমানের হৃদয়ে সমুজ্জ্বল রয়েছে। নবী করিম (স.)-এর শেষ ভাষণ অন্ধকার ও অসাম্যের চির অবসান ঘোষণা করে দুনিয়ার বুকে চিরসাম্রাজ্য এবং এক নতুন আলোকময় যুগের সূচনা করেছে।

বোখারী শরীফের বর্ণনানুসারে জানা যায়, বিদায় হজ্জের সময় নবী (সা.) এর সাথে লক্ষাধিক মুসলমান ছিল। রাসূল (সা.) যে ক'দিন মক্কায় ছিলেন- মুসলমানগণও তাঁর সাথে ছিল। ১০ই জিলহজ্জ (বিদায়ী ভাষণের দিন) পর্যন্ত মক্কা মীনা, মোযদালেফা ও আরাফা রাসূল (সা.) যেখানে যেতেন হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মানুষ ভিড় করে সেখানেই যেত- হযরত (সা.) যেখানে দাঁড়াতেন মানুষ ভিড় করে সেখানেই দাঁড়াত। রাসূল (সা.) মাতৃভ‚মি ত্যাগ করার পর কাফেরমুক্ত অবস্থায় লক্ষাধিক মুসলমান পরিবেষ্টিত হয়ে মাতৃভ‚মিতে ইহাই তাঁর প্রথম ও শেষ অবস্থান। বিষয়টি আর কেউ টের না পেলেও রাসূল (সা.) ঠিকই টের পেয়েছিলেন। তিনি সুস্পষ্টভাবেই উপলব্ধি করতে পেরেছেন, তাঁর প্রাণপ্রিয় উম্মতদের সাথে এখানেই -তাঁর শেষ মহামিলন। মুমুর্ষু অবস্থায় দায়িত্ববান অভিভাবক যেভাবে তাঁর সন্তানদের প্রতি প্রাণ উজার করে শেষ উপদেশ বিতরণ করতে থাকেন- রাসূল (সা.) তাঁর উম্মতকুলের উদ্দেশ্যে ঠিক সেভাবে শেষ উপদেশ বিতরণ করতে ছিলেন। 

তিনি যতোবার বক্তব্য দিয়েছেন ততোবারই বক্তব্যের শুরুতে ‘হে মানবমÐলী! আজিকার দিনটি কিরূপ দিন? সবাই উত্তরে জানায় বিশেষ সম্মানিত দিন (দিনটি রক্তপাত নিষিদ্ধ ছিল)। পুন: প্রশ্ন, এলাকাটি কেমন এলাকা? সমস্বরে উত্তর, হারাম এলাকা। আবার প্রশ্ন, ইহা কোন মাস? সবাই উত্তর দিল, বিশেষ সম্মানিত মাস।’ এভাবে সময়, স্থান, কাল ও পাত্রের গুরুত্ব একত্রিত করে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণসহ মানুষের মৌলিক অধিকার, জান, মাল ও সম্মান হানিকর সব কিছু নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বললেন একজন মানুষের মূল সম্পদ হরণসহ কুফরী কাজে রিপ্ত হইও না।’ 

ইসলামের ইতিহাস থেকে জানা যায়, আরাফার ময়দানে দাঁড়িয়ে নবী করীম (সা.) প্রথমে আকাশের দিকে তাকালেন, প্রভুর প্রশংসাসহ শোকর গোজারী করলেন, তারপর উপস্থিত মানবমÐলীর উদ্দেশ্যে বললেন,
‘হে মানবমÐলী! তোমাদের সকলের সৃষ্টিকর্তা একজন এবং আদি পিতাও একজন; সুতরাং কে আরব আর কে আরব নয়-এ বৈষম্য দেখাতে পারবে না। সাদা কালোর প্রতি এবং কালো সাদার প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা হলো। জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষ এক আল্লাহর সৃষ্ট এবং এক আদি পিতার সন্তান-বিধায় সবাই ভাই ভাই।’
‘হে মানবমন্ডলী, বাক্য শ্রবণ করো, কারণ আমি জানি না, তোমাদের মধ্যে পুনরায় উপস্থিত হওয়ার জন্য আল্লাহ আমাকে আর তৌফিক দান করেন কিনা।’
‘স্মরণ রেখো, দুনিয়ার প্রত্যেকটি কাজের জন্য একদিন তোমাদেরকেও আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। কখনও তোমরা সত্যপথভ্রষ্ট হয়ো না।’
‘হে মুসলমানগণ, স্ত্রীদের উপর তোমাদের যেরূপ অধিকার রয়েছে, স্ত্রীদেরও তোমাদের উপর সেরূপ অধিকার আছে। আল্লাহকে সাক্ষী রেখে তোমরা তাদেরকে গ্রহণ করেছ এবং তাঁরই আদেশ মতো তাদেরকে তোমাদের জন্য বৈধ করে নিয়েছ। তাদের প্রতি সদয় ব্যবহার করবে। অন্যের আমানত হেফাজত করবে, পাপাচরণ থেকে দূরে থাকবে, সুদ খাওয়া হারাম। জাহেলিয়া যুগের সমস্ত কুসংস্কারসহ ‘রক্তের বদলে রক্ত নীতি' এখন থেকে নিষিদ্ধ হলো।’
‘তোমাদের দাস-দাসীদের প্রতি সদয় ব্যবহার করবে। তাদের নির্যাতন করার কোনো অধিকার তোমাদের নেই। নিজেরা যা খাও, যে বস্ত্র পরিধান করো, তাদেরকেও অনুরূপ খাদ্য ও বস্ত্র দান করবে। তারা অপরাধ করলে ক্ষমা করবে অথবা মুক্তি দান করবে। স্মরণ রেখো, তারাও আল্লাহর সৃষ্টি এবং তোমাদের মতো মানুষ।’
‘তোমরা আল্লাহর সাথে কাউকে অংশীদার করো না। পরস্বাপহরণ, অন্যায়ভাবে নরহত্যা করো না এবং কখনো ব্যভিচারে লিপ্ত হইও না।’
‘জেনে রেখো, সমস্ত মানুষ পরস্পর ভাই ভাই এবং দুনিয়ার সমুদয় মানুষ এক অবিচ্ছেদ্য ভ্রাতৃসমাজ। অনুমতি ছাড়া কেউ কারো কোনো কিছু জোর করে কেড়ে নিতে পারবে না।’
‘স্মরণ রেখো, বাসভ‚মি ও বর্ণ নির্বিশেষে প্রত্যেক মুসলমান সমপর্যায়ভুক্ত। আজ থেকে বংশগত কৌলিণ্য বিলুপ্ত হলো। সেই তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে কুলীন, যে স্বীয় কর্মের দ্বারা শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে পারে।’
‘তোমাদের পথপ্রদর্শনের জন্য আল্লাহর কালাম (কোরআন শরীফ) ও তাঁর প্রেরিত রাসূলের চরিতাদর্শ (হাদিস) রেখে যাচ্ছি। যতোদিন তোমরা মেনে চলবে, ততোদিন তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না।’
‘যারা এখানে উপস্থিত আছে, তারা আমার বাণী অনুপস্থিতদের কাছে পৌঁছে দিবে।’

নবীর কণ্ঠ নীরব হলো। তারপর তিনি আকাশের দিকে দৃষ্টি করে মহাপ্রভুকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আমি কি তোমার বাণী সঠিকভাবে এদের নিকট পৌছাতে পেরেছি? আমি কি আমার কর্তব্য সম্পন্ন করেছি?’
উপস্থিত জনসমুদ্র থেকে আওয়াজ হলো: ‘হ্যাঁ, নিশ্চয় পেরেছেন।’
সেদিনই তিনি তাঁর ধর্ম যে পূর্ণতা লাভ করেছে, সে সম্পর্কে নি¤œলিখিত ঐশী-বাণীও লাভ করলেন :
‘হে মুহাম্মদ, আজ তোমার দ্বীনকে (ধর্মকে) পূর্ণতা দিলাম এবং পূর্ণ করলাম তোমার উপর আমার নেয়ামত এবং কায়েম করলাম ইসলামকে তোমার দীনরূপে।’ (সূরা মায়েদা)

পরিশেষে আবেগজড়িত কণ্ঠে আবার জনসমুদ্রকে লক্ষ্য করে বললেন- তোমরা সাক্ষী, আমি আমার কর্তব্য পালন করেছি। বিদায়! আল বিদা।’ (চলবে,,,)

লেখক: আইনজীবী ও কথাসাহিত্যিক