Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ ড. লিপন মুস্তাফিজ


প্রকাশিত: ০১:০০, ২ মার্চ ২০২৫

উপন্যাস

আকাশ মেঘলা হলেও হাসে

আকাশ মেঘলা হলেও হাসে
ছবি: সবার দেশ

(পর্ব ছয়)

ভাই, সালাম। কেমন আছেন? আপনি কি অফিসে আছেন?

ওলাইকুম আসসালাম। ভালো আছি। জ্বী ভাই আমি অফিসে আছি।

একটু আসতে চাচ্ছিলাম, নামাজ পড়বো। আর কম্পিউটারে কিছু জরুরী ফাইল আছে,
সেগুলো নিতে হবে।

আসেন।

আরো কিছু সৌজন্যমূলক কথাবার্তা বলে আমি যখন বাস থেকে নামছি তখন পশ্চিম আকাশে লাল সূর্য হেলে পড়েছে। কিছু কিছু লোক বায়তুল মোকাররম এর দিকে যাচ্ছে নামাজ পড়তে। ফুটপাতের অনেকটা জুড়ে হকার বসেছে। ধীরে ধীরে আরো বসবে। আমি ষ্টেডিয়াম মার্কেটের ভিতর দিয়ে হাঁটা দিলাম। এ সময় রিকশা নেয়া মানে জ্যামে বসে থাকা। দ্রুত পা চালাই। মাথার ভিতরে একটা চিন্তা কাজ করছে আমাকে প্রতিদিন টানবাজারে যেতে হবে। প্রতিদিন আমাকে বাসে করে হানিফ ফ্লাই ওভারের জ্যাম ঠেলে যেতে হবে। ভাবতে ভাবতেই চলে গেলাম আগের অফিসে। কাজ শেষ করে দেরি না করে বেরিয়ে যাই। আজ মেট্রোতে যেতে ইচ্ছে করছে না। গাড়ি আসতেও না করেছি। এগারো তলার অফিস থেকে পায়ে হেঁটে নামতে শুরু করেছি। পা বাড়ালাম বাসার দিকে।

রাতে ঠিক মতো ঘুমোতে পারিনি। বাস জার্নি করতে হবে প্রতিদিন এ ভয়ে। সকালে আকাশে একটু মেঘ জমেছে এখন শীত আসেনি তবুও প্রকৃতি কেন জানি তার রুপ বার বার বদল করছে। ঘুম থেকে উঠতে ইচ্ছে করছে না, এর কারণ দুইটা, এক আকাশ এর মন খারাপ আর দুই নম্বর কারণ হচ্ছে অফিসে যেতে ইচ্ছে করছে না। কী আর করার। আমার বদলির কথা, আমার সাথে ঘটে যাওয়া বৈষম্যের কথা কিছু বন্ধুদের
জানালাম। কারও সাথে মেসেজ চালাচালি করে, কারও সাথে সরাসরি কথা বলে।

কেউ কেউ বলল ‘অপেক্ষায় থাক এনে দেবো’।

তবে অনেকেই বলল ‘ভালো তো, চিটাগং দিলে কী করতিস, আরে ঢাকা আর নারায়ণগঞ্জ এটা কোন ব্যাপার?

মনে হলো কানের কাছে দেই একটা। অবশ্য হাতের কাছে থাকলেও এখন কি আর সে আগের মতো হাত চালাতে পারি। বন্ধুরা যখন অনেক বড় পদে চলে যায়, আগের মত কি সে টান থাকে? ভাবতে ভাবতে খেয়াল করি মেয়ে রেডি হয়ে আমাদের ঘরে উঁকি দিচ্ছে। দ্রুতই চোখে মুখে পানি দেই। এর পরে জিন্স আর টি-শার্ট শরীরে ঢুকিয়ে দেই। একটা ফোন কল আসে, অপরিচিত নম্বর থেকে, ধরতে ইচ্ছে করছে না।

গুলিস্তান থেকে বাসে উঠে বসেছি পাশের আসন খালি। আমাদের শাখা ব্যবস্থাপক এলেন আমরা পাশাপাশি বসে যাত্রা শুরু করলাম।

আচ্ছা ভাই, শুনেছিলাম, আপনার একটা বড় অপারেশন হয়েছে। আমাকে একটু ঘটনাটা বলবেন, আপনাকে তো সুস্থ দেখেছি। দেখে তো মনে হয়নি আপনার এতো মেজর অপারেশন করতে হবে। কোন দিন অফিস কামাই করেছেন শুনি নাই, এক সাথে হজ্জ করলাম আমরা। কী হয়েছে একটু বলবেন?

আমি উদাস হয়ে তাকে গল্প বলা শুরু করলাম,

এর আগে চেন্নাই যাওয়া হয়নি আমাদের। যদিও ভারতে গিয়েছি কয়েকবার। এ ভারত আমাকে ঠিক টানেনা ভ্রমণের জন্য। একবার কলকাতায় গিয়েছি অনেককাল আগে, নব্বই দশকের দিকে। ২০১৫ সালে দিল্লিতে গিয়েছিলাম, ভ্রমনের জন্য। আগ্রা, আজমির শরীফ, জয়পুর সবাই যেমন ঘুরতে যায় আমরাও তেমনটা গিয়েছিলাম। এ প্রথম চেন্নাই যাওয়া। এবার একদম আগে থেকেই উদ্দেশ্য ঠিক করে নেয়া। আব্বার হার্ট এর অপারেশন করাতে হবে।

রমজানের কারণে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম ঈদের পরে ভারতে যাবো। কিন্তু কোথায় যাবো তা নিয়ে সংশয়। ভিসার ফর্ম পূরন করে, প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র জমা দিয়ে টোকেন নিয়ে অপেক্ষায় ভিসা হয়ে গেলো হোটেল বুকিং দিলাম, প্লেনের টিকেট করে নিলাম। একটা ক্রেডিট কার্ড করে নিলাম। ছুটি নিলাম সাথে কিছু কাজ গুছিয়ে নিলাম। ডাক্তার এর সাথে যোগাযোগ একটা এপয়েন্টমেন্ট নিলাম। আমাদের ৩০ এপ্রিল সময় দিলেন। নানান ঝামেলায়, আব্বার অফিসের ছুটি ইত্যাদির সাথে মেলাতে গিয়ে আমাদের টিকেট নিতে হল ১লা মে। আবার ইমেইলে ডাক্তারকে জানালে সে আমাদের ২ তারিখে দুপুর ১২টা৩০ এ সময় দিলো। সারা সকাল কি করবো? আবার ইমেইল দিলাম। সময় ১ ঘন্টা এগিয়ে দিলেন ১১টা ৩০ মিনিটে আমরা দেখা করতে পারবো। এটা কি বাংলাদেশ এ সম্ভব? (চলবে,,,)

লেখক: কথাসাহিত্যিক ও ব্যাংকার