Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ আসমা সরকার


প্রকাশিত: ০১:০৩, ২ মার্চ ২০২৫

গল্প

আকাশের চোখ 

আকাশের চোখ 
ছবি: সবার দেশ

(১১তম পর্ব)

কয়েকদিন একনাগাড়ে দৌড়াদৌড়ি বেশ ভালোই করলো বৃষ্টি। আজকে কালকে আর কোথাও যাবেনা বলেই স্থির করলো। আকাশ অফিসে চলে গেলে বুয়ার কাজ শেষ হলে বিদায় করে টিভি অন করলো। অনেকদিন হয় কোনো প্রোগ্রামই ঠিকমতো দেখা হয়না।

অবশ্য টিভিতে ভালো কোনো প্রোগ্রামই হয়না আজকাল। যদিও দু চারটা নাটক দেখতে বসে, বিজ্ঞাপনের যন্ত্রণায় নাটক দেখার ধৈর্য ইচ্ছা কোনোটাই থাকেনা। এতো বেশি চ্যানেল, কখন কোন চ্যানেলে কোন নাটক কবে কবে হয় সেটাও মনে রাখা সম্ভব না। রিমোট হাতে নিয়ে ওয়ান টু করে যতদুর যাওয়া যায় যাচ্ছে। হঠাৎই থেমে গেলো রিমোট। ধানমন্ডিতে জয়িতা নামের এক নারী সংগঠনের মেলার আয়োজন চলছে। সেটার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার হচ্ছে। বাংলাদেশের নারীরা আজকাল সবক্ষেত্রেই এগিয়ে যাচ্ছে। এটা দেশের জন্য একটা ভালো দিক বটে। বেশ সাজসজ্জায় সজ্জিত আর স্টাইলিশ নারীদের বিশাল সমাবেশ। চ্যানেল আইয়ের রিপোর্টার অনবরত কথা বলেই যাচ্ছে দেখে সাউন্ড মিউট করে দেখতে লাগলো। হঠাৎই চোখ বড় করে তাকালো বৃষ্টি। আরেএএএ, মেঘলা কে দেখালো মনে হয়! তারাতাড়ি রিমোটে সাউন্ড বাড়াতে গিয়ে ভুলে চ্যানেল পালটে ফেললো। দ্রুত সঠিক চ্যানেলে আসতে আসতে ক্যামেরা অন্যদিকে চলে গেলো। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পরেও আর মেঘলাকে দেখতে না পেয়ে ভাবলো, হয়তো ভুল দেখেছে। মেঘলা ওখানে কি জন্যে যাবে? আচ্ছা, একটা ফোন দিলেই তো হয়।

সেই যে পার্টি থেকে এসেছে আর কথাবার্তা হয়নাই। একই শহরে থাকে তবু দেখাও হয়নাই। ফোনটা হাতে নিয়েই কল দিলো মেঘলাকে। রিং বাজছে, কিন্তু ধরছেনা। বৃষ্টির মনটা কেমন যেনো উসখুস করতে লাগলো , চাপা হার্টবিট ও শুরু হচ্ছে। কারণ কি? এতোক্ষণ যে অনুষ্ঠান দেখে বেশ উৎফুল্ল হচ্ছিলো এখন সেটাই বিরক্তিকর  মনে হচ্ছে। 

বন্ধুর ভালো থাকায় তো আনন্দ হওয়ার কথা, আর আনন্দ হলেতো হার্টবিট হওয়ার কথা নয়। নাকি কিছুটা ঈর্ষান্বিত হচ্ছে বৃষ্টি? মুহুর্তেই আকাশের কথা মনে হলো। এই নিউজ যদি রাতের খবরে দেখায় আর আকাশ সেটা দেখে তবেই হয়েছে। একেতো নাচুনে বুড়ি,শুরু হবে ঢোল ঠুমরী।

দুপুরের রান্না করবে কি? মাথার মধ্যে অই জয়ীতার প্রোগ্রামই ঘুরছে। মোবাইল হাতে নিয়ে আবার ফোন দিলো। কিন্তু এখনো রিসিভ করছেনা। তাহলে মনে হয় ঠিকই দেখেছে। রান্নাঘরে কিছুক্ষণ কাটে, আবার কিছুক্ষণ টিভির সামনে। একধরনের অস্থিরতায় কাটলো দুপুরটা।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলো। তখন ফোনটা বেজে উঠলো। 
মেঘলার নাম দেখেই তারাতাড়ি রিসিভ করলো,, 
হ্যালো, মেঘলা কেমন আছিস?

আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি দোস্ত। সরি তোর ফোন রিসিভ করতে পারিনাই। একটা প্রোগ্রামে ছিলাম তো?

বৃষ্টির বুকের ভেতর খচ করে উঠলো, অস্ফুটে উচ্চারণ করলো, ওহ, আচ্ছা। কোথায় কোন প্রোগ্রামে ছিলি?

আরে আর বলিসনা। নারী উদ্যোক্তাদের একটা সংগঠন আছে ধানমণ্ডিতে, জয়ীতা নামে, সেটার উদ্বোধনী  অনুষ্ঠানে দাওয়াত ছিলো। আচ্ছা এখন বল তোরা কেমন আছিস? তোর হ্যান্ডসাম বর কেমন আছে।

মনে মনে বিরক্ত হলো বৃষ্টি। তোরা কেমন আছিস জানতে চেয়ে আলাদা করে আবার বরের খবর নেয়ায়।
বৃষ্টি তো এমন করে জানতে চাইতে পারেনা। 

এবার বৃষ্টি ও পালটা প্রশ্ন করলো, আমার বরের খবর ভালো, তোর বরকে ত দেখালিই না। সেদিন জিজ্ঞেস করলাম এড়িয়ে গেলি। পরে ত আর কথাই হলোনা। এবার তোর বরের খবর বল। তোর বাচ্চাটা কেমন আছে? 

ব্যাস্ত কন্ঠ মেঘলার। আছে আছে সবাই ভালো আছে। দোস্ত আমি তোকে পরে কল দিচ্ছি, ওকে? 

মেঘলা আবারও এড়িয়ে গেলো। বৃষ্টি ফোন হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ কি যেনো ভাবলো। তখনি ফোন দিলো নাসরিনকে।

হ্যাঁ, নাসরিন কেমন আছিস?

ওপাশ থেকে নাসরিনের আহলাদি কন্ঠ। ওরেএএ বাপরেএএএ, এতোদিনে মনে পরলো বন্ধু? আমি কয়েকবার তোকে ফোন দিয়েছিলাম, রিসিভ করিসনাই।

মনে পরলো বৃষ্টির, বড়মামার অফিসে যখন ছিলো তখন নাসরিন ফোন দিয়েছিলো, ভেবেছিলো পরে কথা বলবে। কিন্তু বেমালুম ভুলে গিয়েছিলো। এখন তাই লজ্জিত হলো। 

সরি বন্ধু, একটু ব্যাস্ত ছিলাম তাই সময় করে উঠতে পারিনি।

কি এমন ব্যস্ততা তোর? বাচ্চাকাচ্চা নাই, একটামাত্র স্বামী, চাকরি বাকরি করিসনা,,

চাকরি বাকরি খুজতেই ব্যস্ত আছিরে

তোর আবার চাকরি করার প্রয়োজন হলো কেনো?

যতো কিছুই বলিস, মেয়েদের নিজের পায়ে না দাঁড়ালে কোথাও সম্মান পাওয়া যায়না।

বলছে তোকে? সংসারের কাজ চারটা চাকরির সমান। সংসার সামলে চাকরি করাটা মুখের কথা না।

ক্যান? মেঘলাকে দেখিসনি? কত্ত ভালো আছে। নিজে ইনকাম করে নিজের মতো খরচ করে। এতোবড় একটা পার্টি দিলো নিজের ইচ্ছায়। আর আমি দু একজন বন্ধু বান্ধব দাওয়াত করলেও আকাশের কাছে হাত পাততে হয়। সেজন্যই কিছু একটা করা দরকার।

আরে ধুর, মেঘলার খবর তুই কি জানিস? ও নিরূপায় হয়েই না বাইরে পা বাড়িয়েছে। তা না হলে ও কি ধরনের ছিলো দেখিসনি? সবসময় ক্লাসের লাস্ট বেঞ্চে  বসতো। পড়াশোনায় অতো ভালো ছিলোনা। বেন্দার মতো মাথা নিচু করে বসে থাকতো। কামাল স্যার এই নিয়ে কতো ঠাট্টা করতো। 

বৃষ্টি যে আসলে মেঘলার সম্পর্কেই জানতে চাচ্ছিলো তা আর নাসরিনকে বললোনা। যেহেতু মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি ঝরছে তবে ঝরুক নাসরিনের পক্ষ থেকেই,,, (চলবে,,,)

লেখক: কবি ও কথাসাহিত্যিক