উপন্যাস
আকাশ মেঘলা হলেও হাসে

(পর্ব সাত)
আপনি অসুস্থ কীভাবে হলেন?
বলছি, স্যার। পুরো কাহিনী না এলে বোঝাতে পারবোনা।
শীতের সকাল। বাসের সব জানালা বন্ধ। তবুও ঠান্ডা লাগছে। যদিও খারাপ লাগছে না। আগে এই শীত গ্রামে গেলেই শুধু টের পেতাম। আর এখন ঢাকাতেও শীত লাগে। প্রকৃতির এই পালা বদল, রুপ বদলের বৈচিত্র বিশ্বে খুব কম দেশেই আছে। বৃষ্টির সময় ঝুম বৃষ্টি আর কোথায় আছে?
আমি আবার বলা শুরু করলাম---
‘প্রকাশক নানাদিন’ এর মালিক আমার বন্ধু। তার স্বামী অবসরে গেছে, তারা বেইলি রোডে নতুন ফ্ল্যাট কিনেছে। আমাদের দাওয়াত, তারিখটা আমার এখনো মনে আছে ৩১শে মার্চ ২০২৩ সাল। তার স্বামী প্রতীক ভাই আমাকে ফোনে জানালেন আমাদের সস্ত্রীক দাওয়াত।
আমরা পরিবার থেকে শিখেছি কারো বাসায় খালি হাতে যেতে নেই। নিদেনপক্ষে একটা বিস্কুট এর প্যাকেট নিয়ে গেলেও যেতে হয়। আমার স্ত্রী কিছু কেনাকাটা করলো। আমরা মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিলাম এবার যাবো। বেশ কয়েকবার যাব যাব করেও যাওয়া হয়নি।
একটা ঘটনা ঘটে গেল জুম্মার নামাজের সময়। রুকুতে গিয়ে আমার মনে হলো আমি বুঝি আর দাঁড়াতে পারবোনা। সে সাধ্য আমার নেই। অনেক কষ্ট করে নামাজ পড়েছি যদিও। নামাজের মাঝে চিন্তায় পড়ে গেলাম বাসায় ফিরব কী করে। মোবাইল ফোন তো সাথে নেই। বাসায় জানাবো কী করে? রিকশায় যাব কী করে? হেঁটে যেতে পারবো তো? আমার কোমরের হাড় চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেছে, প্রচণ্ড ব্যাথা। একটুও নড়তে পারছি না, নামাজ শেষ করে বসে আছি। উঠতে পারছি না, তীব্র ব্যথা। অনেক কষ্ট করে বাসায় এলাম। দাঁতে দাঁত চেপে, ব্যাথা সহ্য করে, ধীরে ধীরে বাসায় এসেই লম্বা হলাম। ব্যাথা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করলো।
বলেন কি? আমি তো ভাবতেই পারছি না। শাখা ব্যবস্থাপক বললেন।
বাস সাই সাই করে চলে এসেছে সাইন বোর্ডে। মাঝে ঝাঁকি লাগছে আমাদের, আমার কোমরে বেল্ট বাঁধা আছে। অপারেশনের পরে বাস জার্নিতে আমি এটা ব্যবহার করি।
জ্বী স্যার
আপনি এই যে ব্যাথার বিষয়টি আগে টের পাননি?
পেয়েছিলাম, পাত্তা দেইনি। আর আমার তো ব্যাক পেইন আছেই।
সেটা তো আমারো আছে, আমি জানি এর জ্বালা কি। তিনি বললেন।
আমি দাঁড়াতেই পারছি না। শুয়ে থাকলে ব্যাথা কম। ছেলেবেলার বন্ধু এখন মস্ত ডাক্তার। জাহাঙ্গীর হোসেন রনিকে কল দিলাম। বন্ধু আমার অনেক ব্যস্ত ডাক্তার, তবুও কল ধরলো।
কিরে কেমন আছিস? তোর এলাকায় প্রাকটিস করি আর তুই কিনা এক দিন আসলি না। আসবি, চা-বিড়ি খাব। তুই শালা মানুষ হলি না। সে আমাকে ফোন ধরেই বললো।
নারে দোস্ত তা নয়, আমি শুক্রবার খুব একটা ফ্রী থাকি না। আমি বললাম।
চলে আয়, এখন আয়, তুই কোথায় বল।
আমি তো বাসায় কিন্তু আমার অবস্থা ভালোনা।
তাকে ঘটনটা পুরো বললাম।
শোন, একটা ওষুধের নাম দিচ্ছি এটা ব্যবহার করে ৩০ মিনিটের ভিতরে আমার কাছে আয়। আমার হাসপাতালে আয়। একটা এমআরআই করাতে হবে। ট
আমাদের অনেক দিনের বন্ধুত্ব। খুব প্রাণ খোলা মান্লাম।ফোন রাখার পরে আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম, কে এনে দেবে আমাকে ওষুধ। বাসায় আব্বা আর মা ছাড়া আর কেউ নেই। আল্লার কী নেয়ামত ঠিক সেই সময় আমার সেজ মামা বেড়াতে এলেন। আমি মামাকে দিয়ে ওষুধ কেনালাম। ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক ব্যবস্থা নিলাম। কিন্তু আমার ব্যথা কোনভাবেই কমছে না। দেখতে দেখতে রাত হয়ে গেল। সে ব্যস্ত বিধায় তাকে মেসেঞ্জার এ জানালাম আমার শরীরের কথা। আমি রিপ্লাই না পেয়ে চিন্তা যুক্ত হলাম।
কেন রিপ্লাই দিলো না?
স্যার, সে অনেক ব্যস্ত মনে হয় কোন অপারেশন এ ছিল।
উপায় না দেখে আমাদের আমার ব্যাংকের ডাক্তার আছেন না উনাকে কল দিলাম। এদিকে আপনার ভাবীও বাসায় নেই তার ফিরতে দেরী হবে। বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবতে শুরু করলাম এই শরীর নিয়ে কী করে চেন্নাই যাবো?
স্যার, একটু বলে রাখি আব্বাকে চেন্নাই নেবার আগে আরো ঘটনা আছে, এই বাংলাদেশে।ডাক্তার নার্স এদের কথা কী বলবো।
হ্যাঁ বলেন, এ দেখি নাটকের মত। শুনিতে চাইলাম আপনার ঘটনা আর আপনি জ্বী স্যার, অনেকটা সেরকম।
আমি আবার আরো আগের ঘটনা তাকে বলা শুরু করলাম, চেন্নাই যাবার আগে আব্বা একদিন মাঝ রাতে অসুস্থ হলেন। উপায় না দেখে আমি, আমার স্ত্রী এবং বাসার ম্যানেজারসহ আব্বাকে নিয়ে মধ্য রাতে ধানমন্ডিতে গেলাম একটা প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করলাম। জরুরী বিভাগে চিকিৎসা দিয়ে ওয়ার্ডে নিয়ে গেল। কোন কেবিন পেলাম না। অনেক নাম করা প্রতিথযশা একজন ডাক্তার আব্বাকে দেখে চলে গেলেন। আনুমানিক রাত ৩টার দিকে আব্বাকে একা রেখে আমরা বাসায় চলে এলাম। রাতে ঘুমাতে পারলাম না। পরের দিন খুব সকালে হাসপাতালে গেলাম। ওয়ার্ডের বাইরে দাঁড়িয়ে আছি। আমার বাম পায়ে একটা ব্যাথা উপরে উঠছে আবার মাঝে মাঝে নীচে নামছে।
সকালে আটটার দিকে ডাক্তার সাহেব তার দলবলসহ এসে রোগীর অবস্থা দেখে বললেন মনে হচ্ছে উনাকে অপারেশন করতে হবে। আরেকটা দিন দেখি। উনার হার্টের সমস্যা। মাঝে মাঝে হার্ট বিট মিস করে। ঘাবড়াবেন না। (চলবে,,,)
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও ব্যাংকার