উপন্যাস
আকাশ মেঘলা হলেও হাসে

(পর্ব আট)
সেদিন আব্বাকে কেবিনে ট্রানফার করতে আমাদের দুপুরবেলা হয়ে গেলো। প্রাইভেট হাসপাতালগুলোও আজকাল সরকারী হাসপাতালের কাছাকাছি। ভালো সেবা পাওয়া যায় না। নার্স ষ্টেশনে সবাই নিজেদের ভেতরে কথা বলে, কোন কিছু চাইলে পাওয়া যায় না। কিছু বলে না কিন্ত চেহারা দেখেই বুঝি বিরক্ত হচ্ছে। গল্প করতে করতে আমরা চাষাড়া চলে এসেছি প্রায়, কিন্তু বাস আর এগুতে পারছে না। প্রচন্ড জ্যামের কারণে। জুলাই’২৪ এর পর থেকে কেউ কাওকে মানছে না। চারিদিকে শুধু হাতাহাতি আর হৈ চৈ। সার্জেন্ট, ট্রাফিফ পুলিশ আছে, কিন্তু সক্রিয় না।
কি করবেন? নেমে হাঁটা দেব? স্যার জানতে চাইলেন।
আমি বললাম না, আমার পায়ে ব্যাথা করে দশ মিনিটের বেশি আমি হাঁটতে পারিনা স্যার।
স্যার বললেন রিকশা নেবো।
স্যার রিকশায় ঝাঁকি লাগে বেশি কোমরে।
আমার এ বদলি আমার শরীরের জন্য অনেক ক্ষতি হয়েছে, মাত্র বছর খানেক আছে অপারেশন করে ভালো করেছি। যারা আমার বদলি করিয়েছে, আমি মনে মনে তাদের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করি।
অগত্য স্যার আমার কথা শুনে আর বাস থেকে নেমে গেলেন না। আমরা যে বাসে যাচ্ছি সেটার শেষ স্টপেজ আমাদের শাখার কাছেই।
এর পরে কি করলেন? স্যার প্রশ্ন করলেন।
আব্বা তো অনেক অসুস্থ না, কিন্ত হার্ট তো। আমরা ঘাবড়ে গেলাম। অনেকেই দেখা করতে আসলেন আব্বার সাথে। এমনকি আমার অফিসের অনেক কলিগ এসেছিলো। বুঝতেই পারছেন স্যার কেন এসেছিলো।
হ্যাঁ তা বুঝতে পারছি। প্রশাসন এর লোক বলে কথা।
‘হু’ বলেই আমি হেসে দিলাম ।
আমি পুনরায় বলতে শুরু করলাম। সে দিন রাতে আব্বার সাথে আমি কেবিনে ছিলাম। ভোরে আমি বাসায় এসেছি ফ্রেশ হবো। নাস্তা খাব একটু বিশ্রাম নেব। এ সময়টা আমার বড় বোন আব্বার কাছে থাকবে। আব্বাকে দেখে এখন বোঝার উপায় নেই যে তিনি অসুস্থ। আমার বড়বোন আমাকে ফোনে জানালেন যে, আব্বাকে নাকি আজ দুপুরেই ছেড়ে দেবে। আমি শুনে জলদি হাসপাতালে গেলাম। ডাক্তার আমার সাথে কথা বলতে চায়। আমি দ্রুতই গেলাম হাসপাতালে। কিন্ত এর মধ্যে ডাক্তার আব্বাকে দেখে চলে গিয়েছেন।
আমি নার্স ষ্টেশনে গেলাম, শুনতে চাইলাম গতকাল বললেন অপারেশন করতে হবে, আরও একদিন দেখি ইত্যাদি ইত্যাদি।
আমার রাগ হয়ে গেলো, এমনিতেই আমার অনিয়ম দেখলে মাথা ঠিক থাকে না।
এটা ঠিক, বাংলাদেশের সেবাগুলো এ রকম, স্যার বললেন।
কী আর করব হতাশ হয়ে কিছু মেডিসিন কিনে আব্বাকে রিলিজ করে নিয়ে বাসায় ফিরে এলাম।
বাংলাদেশে যা হয়, মায়ের থেকে মাসীর দরদ বেশী থাকে। হায় হায় কি করেছেন, এ হাসপাতালে কেনো, ওরা তো রোগীকে মেরে ফেলে, হায় হায় এ ডাক্তার কেনো, এর চাইতে ভালো ডাক্তার আছে। তার কাছে যান, যদিও ৩ মাসের আগে সিরিয়াল পাবেন না। তবে বড় জায়গা থেকে ফোন দিতে হবে, ইত্যাদি, ইত্যাদি উপদেশ দেবার লোকের অভাব নেই। ফলে আব্বাকে নিয়ে কিছুদিন পরে আবার গেলাম বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অন্য এক ডাক্তার এর পরামর্শের জন্যা। আমাদের বাসা থেকে অনেকদূরে। ক্রস চেকিং এর জন্য।
পরিচতিত এক বড় ভাই এক ডাক্তার আর আমাদের ব্যাংকের ডাক্তার পরামর্শ দিলেন, যাও ঠিক আছে এ লাইনে তিনি ভালো। আমাদের ব্যাংকের ডাক্তার বললেন , চেম্বারে গেলে আমাকে একটা কল দিয়েন, আমি কথা বলবো ডাক্তার এর সাথে।
আমি সে মোতাবেক আব্বাকে নিয়ে ডাক্তার সাহেবকে আগের কাগজ নিয়ে দেখালাম। দুইটি ভিন্ন হাসপাতাল হলেও আব্বার রোগের কারণ এবং রোগ একটাই ধরা পড়লো। তবে পুর্বের ডাক্তারের চেয়ে এ ডাক্তার আরও ভালো করে বর্ণণা করলেন। আব্বার কি হয়েছে এবং কি করতে হবে। উনাকে আমাদের পছন্দ হলো। পাশাপাশি তিনি বললেন দেশে ও বিদেশে এ চিকিৎসা হয় বাকিটা আপনারা যা সিদ্ধান্ত নেন।
হাসপাতালে গিয়ে মনে হলো ভালোই, এখানে খরচ কম, সেবা ভালো। কিন্তু আমাদের বাসা থেকে অনেক দূরে। যদিও ডাক্তার বললেন দুই দিনের ভেতর ছেড়ে দেবে। তবুও ভালো লাগছিলো না। মন সায় দিচ্ছিলো না। ডাক্তার এর সাথে আমাদের দেখা করার সময় দেয়া ছিল দুপুর একটায়। ডাক্তার দেখা দিলেন বিকেল চারটায়। আমাদের সময়ের কোন মূল্য নেই শুধু যে সেবা নিতে যাই সেইখানেই একই অবস্থা। সময়ের হের ফের। ডাক্তার দেখিয়ে আমরা খুশী মনে বাড়ির পথে পা বাড়ালাম। রাস্তার জ্যাম ঠেলে বাসায় এসেই কোনরকমে ইফতার করি। (চলবে,,,)
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও ব্যাংকার