Advertisement

প্রফেসর মো. আমির হোসেন


প্রকাশিত: ০১:৫৫, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

আপডেট: ০১:৫৬, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

সামাজিক বিবর্তন 

সামাজিক বিবর্তন 
ছবি: সবার দেশ

পত্রিকায় খবরটি পড়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে বৃদ্ধ ছমির। ‘ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ছুরি মেরেছে নবম শ্রেণির ছাত্রকে’। এই স্কুলের ছাত্র ছমিরও। কী দাপট ছিল এ স্কুলের। ছুরি মারা তো দূরের কথা, বারান্দা দিয়ে হাঁটার অধিকার ছিল না তাদের। নবম শ্রেণির ছাত্র হলেও দশম শ্রেণিতে উঁকি দিতে পারেনি। কই গেলো সেই সমাজ? সেই শিক্ষক? 

আধুনিকতাহীন মেঘনায় বেড়ে উঠেছে ছমির। কোন যানবাহন ছিল না। মাইলকে মাইল হাঁটতে হতো। কড়া সামাজিক শাসন ছিল। কে, কার সন্তান মাথায় ছিল না! মুরুব্বিগণ নিজ দায়িত্বেই শাসন করতেন। বাবা-মা মুরুব্বিকেই সমর্থন করতেন। লজিক খুঁজে নিজের সন্তানকে নষ্ট করতেন না।

আজ যুগ পাল্টেছে। মেঘনায় বিদ্যুৎ এসেছে। আলো জ্বলছে সবখানে। কিন্তু হৃদয়ের আলো নিভে গেছে। ছোটরা বিচার শালিস করে। মুরুব্বিরা সম্মান হারানোর ভয়ে চুপ থাকে। মাদক আজ ঘরে ঘরে। বাবা-মা এর শাসন নেই প্রতি ঘরে। সর্বত্র আজ অরাজকতা। 

নতুন প্রজন্ম আজ খেলে! তবে মোবাইলে। নিষ্প্রাণ যন্ত্রে। বন্ধুত্ব কমেছে। সমবয়সীরা পাশাপাশি। তবে যার যার মোবাইলে চোখ। ছমিরদের শৈশব এমন ছিল না। তারা কায়িক শ্রমের খেলা খেলতো। মেঘনায় মাইলকে মাইল হাঁটতো, বর্ষায় নৌকা ঠেলতো। লগ্গি ছিল প্রধান হাতিয়ার। অবসরে সমবয়সীরা গল্প করতো। হৃদ্যতা তৈরি হতো। ছোট বড়র ভেদাভেদ ছিল। 

বিদ্যুৎ ছিল না, বুড়ীদের গল্প ছিল। ভূতের ভয় ছিল। একাকীত্ব সৃষ্টি করতো প্রতিভা। বহু পালা হতো গ্রামে গ্রামে। নাটক হতো। গরুদৌড় হতো। নৌকা বাইচ হতো। কুস্তি খেলা হতো। হেজেক লাইট জ্বালিয়ে পালা গান হতো। রজব দেওয়ান, খালেক দেওয়ান গেলে বাজারে ঠেরা পেটানো হতো। একজন সমাজপতি অসম্ভব সম্মান পেতেন। চৌকিদার ছিলেন সরকারি ক্ষমতার উৎস। 

স্যারগণ নীলডাউন দিতেন। পড়া না শিখে কেউ স্কুলের সীমানা মাড়াতো না। পাবলিক পরীক্ষায় পাশের চেয়ে ফেলের সংখ্যা বেশি ছিল। একেকটা হিরে তৈরি হতো মেঘনায়! গ্রামে গ্রামে স্কুল ছিল না। পুরো মেঘনায় কোন কলেজ ছিল না। দূরের শহরে গিয়ে পড়তে হতো।

আজ মেঘনায় কত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শুধু বিদ্যেটা নেই। বিদ্বান হয়েছে মানুষ কিন্তু নষ্ট হয়েছে সমাজ। ঘরে ঘরে আজ টেলিভিশন। যান্ত্রিক বিষয়কে সত্যি ভাবে আজকের মানুষ। কিন্তু ছমিরদের শৈশব তেমন ছিল না। ‘#সবার_দেশ’ পত্রিকা হাতে নিয়ে অতীত ঘুরে আসে কল্পনায়। আজ সে সাহেব। কিন্তু সম্মানের ভয়ে শহরে থাকে। তবে হৃদয়ে মেঘনাকেই ধারণ করে। এই মেঘনা-ই তাকে গড়েছে।

লেখক: কবি, কথাসাহিত্যিক ও গীতিকার