Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ ড. লিপন মুস্তাফিজ


প্রকাশিত: ০০:২২, ২৩ মার্চ ২০২৫

উপন্যাস

আকাশ মেঘলা হলেও হাসে

আকাশ মেঘলা হলেও হাসে
ছবি: সবার দেশ

(পর্ব নয়)

মাগরিবের নামাজ পড়ে, চা পান করার পরে শরীর বিছানা টেনে নিলো। অনেকটা যেমন লজ্জাবতী গাছ নিজেকে গুটিয়ে নেয়, তেমনটা করে শুয়ে পড়লাম। ঘরে এসে আমার স্ত্রী এসি ছেড়ে দিলো। তখন মনে হয় এপ্রিল মাস, গরম পড়েছে প্রচুর।

কি ভাবছ? আমার স্ত্রীর প্রশ্ন।
না, কিছু না। আমার মনে হয় আব্বার একটা ভালো চিকিৎসা দরকার। 
আমারও তাই মনে হয়। 
ডাক্তার বলেছে বাংলাদেশে, ভারতে অথবা ব্যাংককে যেখানেই যাই, একই চিকিৎসা। 

জ্যাম পেরিয়ে বাস চলে এসেছে আমাদের গন্তব্যে। আমাদের কথা আর এগুলোনা। পায়ে হেঁটে আমাদের সময়মতো কাজে যাবার তাড়া। আমি ও আমার শাখা ব্যবস্থাপক অফিসে এসে কাজে মনোযোগ দিলাম। আসলে আমার এইখানে কোন কাজ নেই। এ শাখায় আমার কাজে মন বসে না। নিজেকে অচেনা অচেনা লাগে। কিছুদিন আগেও যাদের এমন কোন তদবির নেই আমি শুনিনি বা চেষ্টা করিনি করে দেবার জন্য তারাই আমাকে আজ প্রফেশনাল জেলাসির কারণে এ টানবাজারে বদলি করে দিল। মাঝে মাঝে ভাবি আল্লাহ আমাকে পরীক্ষা করছেন। সময় হলে নামাজ পড়ি, খাবার খাই। 

শাখায় রান্নার ব্যবস্থা আছে, যে মেস চালায় সে আমাকে খাতির করে। অফিসের পিওনেরা আমাকে খাতির করে। এ সব চিন্তা করলে ভালো লাগে। এদের অনেকের ধারনা আমাকে কিছুদিনের ভেতরেই আবার ঢাকায় বলদি করে নেবে। এখানে আসতে খারাপ লাগে না, কিন্তু বাড়ি ফেরাটা অনেক কঠিন এবং কষ্টের। তবুও মনকে বোঝায় এক দিন আমাকে ঢাকায় যেতেই হবে। একটু ধৈর্য ধরি না। এ শাখায় অনেকের ভেতরে দুই এক জন অফিসার আছে যারা আমাকে গ্রহণ করতে পারেনি বা চায় না তারাও আমাকে কোন অপদস্ত করেনি। 
আমার ভেতরে এক ধরনের অস্থিরতা কাজ করতো। আমার পায়ের ব্যাথার কারণে আমি চেয়ারে বসেই নামাজ পড়তাম, সে চেয়ারও আমাকে অনেকেই এগিয়ে দিতো।

আজ আমাদের ট্রেনে যাওয়া হবে না, আমরা বাসে ফিরবো। আমার শাখা ব্যবস্থাপক আমাকে সম্মান করেন, বাসে আমরা এক সাথে পাশাপাশি বসি। যদিও আমরা চার থেকে পাঁচ জন এক সাথে ফিরি। কিন্তু তিনি সব সময় আমার পাশে বসেন। এবার আমি আবার বলা শুরু করলাম।

আমি তখন মতিঝিলে অফিস করি, প্রচুর ব্যস্ততা, এর ভেতরে খবর নেয়া শুরু করলাম কীভাবে ভারতে যাওয়া যায়। এমনকি ব্যাংককে চিকিৎসা নিয়েও আমি খোঁজ খবর করছি। যেহেতু প্রশাসনে কাজ করি সেহেতু আমাদের দফতরে অনেক ছুটির দরখাস্ত আসে, আমাদের অনুমতি দিতে হয়, ফলে অল্প সময়ে আমি অনেক তথ্য পেয়ে গেলাম। 

শুনছি সে সময় ভিসা নাকি অনেক দেরী করে করে দিতো।
হ্যাঁ, তবে মেডিকেল ভিসা দ্রুতই দিতো।
কোন এজেন্ট ধরেছিলেন?
না, ওদেরকে কল করেছিলাম, একটা ফাইল করতে ১৫০০ টাকা দিতে হবে। তার চাইতে আমি কাজের ফাঁকে ফাঁকে নিজেই সব কাজ করে হাই কমিশনে অনলাইনে আবেদন করে দিলাম। ব্যস, আমি এপয়েনমেন্ট পেয়ে গেলাম। 

অফিসে এতো ব্যস্ত কাজ করি গাধার মতো। অনেক ভয়ে ভয়ে তৎকালীন এমডি স্যারকে আব্বার কথা বললাম। স্যার আবার ভারতে চিকিৎসা করার ব্যাপারে আগ্রহী না, তাই ভয়টা আরও বেশি। 
হুম, শুনেছি স্যার নাকি ফাইল ছাড়তে চান না, সব নাকি না করে দেন, আপনি না-কি স্যারকে ম্যানেজ করে ছুটির ব্যবস্থা করে দিতেন।
তা করতাম, কি করা বলেন স্যার, আমরা তো আমাদের কলিগদের সাহায্য করতে চাই, কিন্তু সমস্যা হলো স্যার এতো এতো ফাইল দেখতেন সবাই দুই তিন মাস পর পর বিদেশে যেতে চাইতো, সেজন্য স্যার এ আচরণ করতেন। তবে যেটা জেনুইন সেটা নিয়ে আমি কেন, আপনি গেলেও স্যার নথিতে সাইন করে দিতেন। 
হুম, স্যার একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন।

বাস ছুটে চলে চাষাড়া হয়ে ঢাকার দিকে, ঢাকার শহর, এ শহরের চোখে কেনি কোন ঘুম নেই কোন ক্লান্তি আছে শুধু ছুটে চলা। (চলবে,,,)

লেখক: কথাসাহিত্যিক ও ব্যাংকার