Advertisement

প্রফেসর মো. আমির হোসেন


প্রকাশিত: ০০:০৯, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪

আপডেট: ০০:৪৪, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪

বঞ্চিত কৃষক

বঞ্চিত কৃষক
ছবি: সবার দেশ

(১ম পর্ব)
 

ভোর হলেই তিনি ছুটেন! তিনি এক জোরা বলদ ও কাঁধে লাঙল নিয়ে ছুটেন। চাষ করেন। জমিতে বীজ বোনেন। অঙ্কুরিত হলে স্বপ্ন দেখেন তিনি। ছোট বেলায় তার নাম রেখেছিল ফজর আলী। ফজরের সময় জন্ম বলে দাদি ফজর আলী নাম রাখেন। দাদী ফতু বেঁচে থাকতে ফজরের সময়টা ছিল সুন্দর। দাদা-দাদি হলো নাতি নাতনির জন্য বেহেশত। বাবা-মাও সুন্দর জীবন দিয়েছে। এক সময় বড় হলে সখিনার সাথে বিয়ে দেন। সখিনা সখি না। সে বাবা-মায়ের জন্য মা হয়েছিল। কিন্তু নিয়মের বেড়াজালে সখিনার শ্বশুরশাশুড়ি আজ মৃত!

কৃষি ফজরের পেশা, ফসল তার নেশা। সখিনা দেখে আশা। দুজনের সম্মিলিত চেষ্টায় ফজর আজ খুশি। কালের গর্ভে হারিয়ে গেছেন বাবামা। কিন্তু সখিনা একটা ছেলে ও একটা মেয়ে উপহার দিয়েছে। সখিনা ছেলে ছেলে করে। আর ফজর মেয়ে মেয়ে। মেয়ে হলো প্রতিটি বাপের রাজকন্যা। একটা মেয়ে বাবা-মা এর জন্য আশীর্বাদ। অকারণে মানুষ ছেলেকে বংশের প্রদীপ মনে করে। ছেলেরা সাধারণত বাবা-মাকে দেখে না। কেউ যদি দেখে তবে তা বোনাস৷ ব্যতিক্রমকে উদাহরণ করা ঠিক নয়!

কৃষকের আনন্দ ফসল ফলিয়ে। তাঁর মূল্য নেই সমাজে। যারা সাহেব, টাকা দিয়ে বাজার থেকে কিনে খান তার যোগান দেয় কৃষক। সাহেবরা হোটেলে খেয়ে শতটাকা টিপস দিতে পারেন কিন্তু কৃষকের জিনিস কিনতে গিয়ে কৃষককে ধমক দেয়। ‘এই ব্যাটা! এতো বেশি দাম চাস কেন?’ হাঁটুর বয়সের ছেলে তুই তোকারি করে। ফজরের চোখে জল আসে! তার জিনিস কম দামে পাইকার কিনে। অথচ, শহরে এতো দাম! মধ্যস্বত্বভোগী সব গিলে খায়!

ফজর আলী একবার শহরে গিয়েছিল। শহরের মেয়েরা কী সুন্দর সাজগোছ করে। পরিপাটি কাপড় পরে। ফজরও সখিনাকে ভালোবাসে কিন্তু পছন্দের জিনিস কিনে দিতে পারে না। সুন্দরী সখিনা ফজরের সব জয় করে নিয়েছে৷ মেয়েটি জামাকাপড়ে নয়, স্বামীর ভালোবাসায় সুখি। সারাদিন কাজ করে। মনে হয় যেন ক্লান্তি নেই। তবে ফজর আলী বুঝে। তার কষ্ট। না পাওয়ার যন্ত্রণা। এমন সম্পর্কই মধুর। বিশ্বাস থাকলে কুঁড়ে ঘরেও সুখ। ফজর সবাইকে সুখি রাখতে চায়। কিন্তু কৃষক তো। আয় খুবই কম। স্বাদ আছে সাধ্য নেই। এই যুগের ছেলে মেয়ে হলেও সন্তান দুটো বাবাকে প্যারা দেয় কম৷ কী যেন বুঝে তারা। তবে বাবা হিসেবে ফজর এক ভাগ্যবান পুরুষ। জমিতে চাষ দেয়। ফসল হলে মুখে হাসি ফোটে। লাখ লাখ টাকা নয়। সামান্যতেই অসামান্য খুশি। আগে আমন ধান ফলাতো। এখন ইরি। কত উৎপাদন! তবুও ভাগ্য ফিরে না কৃষকের। সখিনা হাঁস মুরগি পালে। তবুও নিজেরা মুরগি নিয়মিত খেতে পারে না। ডিম-দুধও না! বাজারে বিক্রি করে চাহিদা মিটায়। ফজর আলী বুঝে। কিন্তু কিছু করার নেই। মুরগিটা ধরে নিয়ে বাজারে বিক্রি করে। খায় সাহেবরা! কী এতো জাদুর কাঠি সাহেবদের হাতে। বুঝে না ফজর। শুধু বুঝে উৎপাদন আর বঞ্চনা। ফলায় কৃষক খায় ভাগ্যবান। এই বুঝি নিয়তি! (চলবে,,,)

লেখক: কবি, কথাসাহিত্যিক ও গীতিকার

আরও পড়ুন: সামাজিক বিবর্তন