কুমার নদীর বাঁকে
প্রিয়তমা, এই ব্যস্ত শহর ছেড়ে চলো ফিরে যাই-
প্রিয় কুমার নদীর বাঁকে।
মমতায় ঘেরা স্মৃতি বিজড়িত প্রিয় পল্লীতে।
তোমার শুভাগমনের অপেক্ষায় পল্লীপ্রকৃতি;
তোমার হাসিমুখের করতালি পাওয়ার আশায়-
দোয়েল কোয়েল ময়না টিয়া টুনটুনি আর চড়ুই;
পথচেয়ে বসে আছে মিয়াবাড়ির বাগান।
কুমার নদীর দুপাশে বৈচিত্র্যময় দৃশ্যে-
অবসাদ ঘটাবে ইট-পাথরের একাগ্র জীবনের।
হৃদয়ে উচ্ছ্বসিত স্পন্দনে আসবে সতেজতা।
গাঁয়ের মৌন আবেশে প্রকৃতির সুবাসে,
জন-অন্তরালে মগ্ন হব গভীর প্রেমালাপে।
বাসন্তী মধুপূর্ণিমার জ্যোৎস্না-ভেজা স্নিগ্ধ আলোয়
তোমার ঐ চাঁদ বদনি মুখটা দেখে
ঘাসফড়িং এর মতো আনন্দ হৃদয়
পরিপূর্ণ হবে ভালোবাসার উম্মাদনায়।
গ্রীষ্মকালীন খরতাপের রোদেলা দুপুরে
কুমার নদীর পাড়ে হিজলের তলে
শীতল ছায়ায় মগ্ন হব প্রেমের পাশায়।
হিজল ফুলের মালা পরিয়ে
বুনোফুলের সুঘ্রাণে মন-রাঙাব তোমার।
ডানামেলে উড়বে গাংচিল আর সাদাবক
মাছরাঙা পানকৌড়িরা মাছ ধরার ছলে
ডুবসাঁতারে মগ্ন হবে কুমার নদীর জলে।
চৈতের সন্ধাকাশে দক্ষিণা সমীরণে
কোকিলের মতো মৃদুকণ্ঠে কুউহু কুউহু স্বরে
তোমার কানে ফিসফিসিয়ে বলব-
ভালোবাসি, ভালোবাসি বড় বেশি ভালোবাসি।
প্রিয়তমা এই ব্যস্তশহর ছেড়ে চলো ফিরে যাই
প্রিয় কুমার নদীর বাঁকে।
কংক্রিটের দেয়ালে ঠাঁসা দাম্ভিকতা ছেড়ে
চলো ফিরে যাই স্নেহমমতায় ঘেরা প্রিয় পল্লীতে।
শহরের বাবুদের প্রতিটি দেয়াল স্বার্থে ঘেরা
প্রতিটি রেস্তোরাঁ জুড়ে মনুষ্যত্বের বিলীন।
এখানে আবেগ জড়ানো মায়া মূল্যহীন।
প্রিয়তমা এই শহরের বন্দী জীবন রেখে
চলো ফিরে যাই স্মৃতিঘেরা প্রিয় কুমার নদীর বাঁকে।
তোমায় দেখে বনের পাখিরা ঝাঁক ঝাঁক উড়বে
প্রকৃতি সাজবে অপরূপ সৌন্দর্যের মহিমায়।
পাখির কলতানে ভোরের সোনারোদ উড়ে এসে
অনায়াসে লেপ্টে বসবে তোমার আঁচল জুড়ে।
গোধূলি লগ্নে বসব দুজন মিয়াবাড়ির ঘাটে।
বৈকালিক হাওয়ায় মায়ামাখা আঁচল ছুঁয়ে
মন আকাশে উড়াব ভালোবাসার রঙ্গিন ঘুড়ি।
শরতের আকাশে উড়বে সাদামেঘের ভেলা।
নদীপাড় ছেয়ে যাবে সাদা কাশফুলে-
খালবিল জুড়ে ফুটবে অসংখ্য শাপলা শালুক ;
আহা! এক অপরূপ আবেশে বেষ্টিত ঐ পল্লী প্রান্তর।
প্রস্ফুটিত সবুজ দূর্বাঘাসে ভরে আছে মাঠঘাট;
কৃষকের ঘরে আউশ আমনের নবান্ন উৎসব।
পুঁথির আসরে রাখালের বাঁশরিতে মুগ্ধ হৃদয়
গ্রামীণ মায়ার আবেশে পূর্ণ হবে মনের বাসন।
দুপুরে রান্না শেষে বধূরা অবগাহনে যায়,
পালতোলা নৌকায় মাঝি গান গায়;
বিকেলে বাড়ির উঠান জুড়ে নকশিকাঁথার সীবন,
আহা! সে এক জীবন পাবে, এক অনন্ত পল্লী জীবন।
প্রিয়তমা এই বয়স্ত শহর ছেড়ে চলো ফিরে যাই
চলো ফিরে যাই,
প্রিয় কুমার নদীর বাঁকে।
এ শহরে কোথাও ভালোবাসা মেলে না।
এখানে টাকার বিনিময়ে বিলাসিতা চলে।
নেশায় বিভোর অজস্র বিত্তশালী নারী পুরুষ,
নাইট ক্লাবের পার্টির নামে অশ্লীলতায় ভরপুর।
দুরন্ত বসন্তের বিশ্ব বেহায়া দিবসে-
পরকীয়া প্রেম কিংবা যৌবনের তাড়নায়;
স্বামীকে রেখে ঘরে- কেউ পুরোনো প্রেমিককে নিয়ে ঢাকা চিড়িয়াখানায়!
কেউ অন্ধকার বিছানায়।
এভাবে অবসান ঘটে অজস্র প্রেম প্রকৃত ভালোবাসার।
শহরের ডালি সাজানো ফুল শুকিয়ে-
ভালোবাসা হারিয়ে পিষ্ট হয় পায়ের তলায়।
আধুনিককতার নামে সভ্যতার সামাজিক অবক্ষয়ে-
রজনীগন্ধার সুগন্ধির মতো বিশ্বাস হারিয়ে যায় মর্মর নিঃশ্বাসে!
শুঁকনো পাতার ঝর্ঝর শব্দে-
ঝরে যায় সহস্র প্রেমিক প্রেমিকার জীবন।
প্রিয়তমা এমন ঝুকিপূর্ণ মমতাহীবন শহরে আর না,
আর না।
ইট-পাথরের উত্তপ্ত কালো ধোঁয়াসা ছেড়ে,
রূপসী বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ফিরে যাই।
সবুজ বনান্তর ফলফলাদি, সমারোহে ভরপুর-
প্রিয় পল্লীবালা, এ যে ভালোলাগার এক অদ্ভুত মৌনতা।
চলো ফিরে যাই সাদামাটা জীবন যাপনের প্রিয় পল্লীতে।
আমি হব খাঁটি বাঙালি স্বামী, তুমি হবে পল্লীর লক্ষী বধূ।
পায়ে দেবে আলতা আর হাতে কাঁচের চুড়ি।
কপালে লাল টিপ দিয়ে পরবে রঙিন শাড়ি।
এলোচুল খুলে দেবে দক্ষিণা বাতাসে,
হাতে রেখে হাত হাটব দুজন প্রেমের আবেশে।
চলো প্রিয়তমা, আমার স্মৃতিমাখা শৈশব কৈশোরের
রূপসী গাঁয়ের প্রিয় কুমার নদীর বাঁকে।
লেখক: কবি, কথাসাহিত্যিক ও পুলিশ ইন্সপেক্টর