Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ ড. লিপন মুস্তাফিজ


প্রকাশিত: ১৩:০৮, ১৩ এপ্রিল ২০২৫

আপডেট: ১৩:০৯, ১৩ এপ্রিল ২০২৫

উপন্যাস

আকাশ মেঘলা হলেও হাসে

আকাশ মেঘলা হলেও হাসে
ছবি: সবার দেশ

(পর্ব বারো)

সকালে বাসের টিকেট নিতে দেখি তেমন একটা লম্বা লাইন নেই, এর অর্থ হলো একটু আগেই একটা বাস ছেড়ে গেছে। আমি টিকেট নিয়ে বাসে উঠতেই দেখি আমার শাখা ব্যবস্থাপক স্যার, তিনি পাশে বসার জন্য অনুরোধ করলেন। নিরেট ভদ্রলোক মানুষ, আমরা এক সাথেই হজ্জ করেছি, তিনি দাড়ি রাখতে পেরেছেন আর আমি পারিনি, তিনি ডিজিএম হয়েছেন আর আমি এখনও এজিএম হয়েই আছি।

প্রতিদিন দেখা হয়, এক সাথেই কাজ করি। শুধু বাসে আমরা আমাদের ব্যক্তিগত আলাপ করি। সকালের এ বাস ভরতে সময় লাগে না, সকালে অনেকেই ঢাকা থেকে চাষাড়া যান অফিস ধরতে। ইদানীং আমি নিজের কথা শেয়ার করা কমিয়ে দিয়েছি, চেষ্টা করছি কথা আরো কম বলতে। স্যার আমাকে জানতে চাইলেন, আমাদের গল্প তো ভাই এখনো শেষ হলো না। আমি বললাম মনে হয় আমার ভিসা হয়নি। 
উনি হেসে দিলেন, এর সাথে ভিসার সম্পর্ক কি? বললেন।
আমি ভিসার জন্য আবেদন করেছিলাম কিনা মনে নেই। আমাদের আলাপটা কোথায় থেমে ছিলো মনে নেই। শেষ দুই দিন তো আমি বাসে আপনাকে পাইনি।

আচ্ছা শুরু করেন, একটা ধারনা করছি ভিসা হয়ে গেছে। এর পরে কি করলেন?
আচ্ছা গল্পের সুবিধার জন্য ধরে নেন আমাদের ভিসা হয়ে গেলো ছয় মাসের। এখন ছুটি একটা বড় সমস্যা, এম ডি স্যার তো ছুটির কথা শুনতেই চান না। স্যার এর ধারনা এটা মেডিকেল ট্যুরিজম। আপনি তো জানেন আমি স্যার এর সাথে অনেকটা সময় থাকি, কখন ভালো মুডে থাকেন, খারাপ মুডে থাকেন, কীভাবে বললে না করবেন না, স্যার কি চান, কীভাবে চান সেটা আমি ধরতে পারি। সে ভাবে একদিন একটা অফিস নোট আগেই লিখে রেডি করে স্যার এর কাছে গেলাম। 
স্যারকে সব কিছু খুলে বললাম।
স্যার শুনে বললেন ঠিক আছে নথি আনো। 
আমি সাথে সাথেই নথি বের করে দিলাম, স্যার এক নজর দেখে বললেন 
সব ঠিক আছে তো? ভালো করে পড়েছ তো? তোমরা তো খালি ভুল ভাল নথি লিলো। তুমি পড়েছো? 
আমার দিকে তাকালেন। 

আমি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালে, তিনি সাইন করে দেন। এর পরে জানতে চাইলেন কবে যাব কীভাবে যাব ইত্যাদি। আমি হোয়াটস আপে আমাদের এইচ আরে একজনকে জানিয়ে দিলাম, নথিতে সর সাইন করেছেন, এবার চিঠিটা যেন সে ড্রাফট করে আমার টেবিলে দেয়। 

স্যার, যে ফ্লোরে বসেন, আমি বসি এক ফ্লোর নীচে, আপনি তো জানেন স্যার।
জানি, আচ্ছা আপনি ম্যাজিকের মত স্যার এর সাথে কীভাবে কাজ করেন বলেন তো। আমরা ভয়ে ভীত থাকি, যে বকা দেয়ার দেন। 
সেটা তো স্যার বলা যাবে না, সেটা আমার কাছে না হয় গোপন থাক।
বরং আমি মূল গল্পে ফিরে যাই।
সেই রাতে বাসায় গিয়ে আমি অন লাইনে টিকেট করে ফেলি। আর হোটে বুকিং দেই। 
আচ্ছা কোথায় যাবেন? ঠিক করেছেন?
হ্যাঁ তত দিনে আমরা এপলোতে যাবো, চেন্নাই।
আমিও একবার গিয়েছিলাম, আমার কোমরের ব্যাথায়, মানে ব্যাক পেইন এর জন্য। 
জ্বী স্যার, আমিও আব্বাকে দেখানোর জন্য চেন্নাই ভালো মনে করেছিলাম। সেখানে নাকি দেশী খাবার পাওয়া যায়। চিকিৎসা ভালো। 

এরপর কি করলেন, মানে আপনি কীভাবে অসুস্থ হলেন? গেলেন চাচাকে নিয়ে, আপনি সুস্থ মানুষ আপনাকে কেনো ….
আমার হালকা ব্যাক পেইন ছিলো। আমি ম্যানেজ করে চলি, আপনি অনুমান করেন তো স্যার, ৫ তলা থেকে ৬ তলায় আমাকে দিনে কতবার উঠা নামা করতে হয়? আমাকে কত দ্রুত যেতে হতো? আপনি তো একটা সময়, মানে আমার ব্যস্ততার সময় কাছ থেকে দেখেছেন। কতটা সিঁড়ি আমাকে পার হতে হয়েছে?
উম দেখেছি।
আমি আসলেই পাত্তা দেই নি। 

আমার ছুটি হয়ে গেলো, আমার মনে আছে মে মাসের এক তারিখে ২০২৩ সালে আমরা চেন্নাই এপোলোতে যাব। শুক্রবার শনিবার ছুটির পরে মাঝে ৩০ এপ্রিল অফিসে যাবো, স্যার এর জয়েনিং এর দিন, কেক কাটা হবে দুই বছরপূর্তিতে এমন একটা প্লান করা আছে। মে দিবস ছুটি, সোমবার তাহলে আমি মাত্র তিন ছিন ছুটি নিয়েছি আবার রোববারে অফিসে জয়েন করবো।

আমি শুক্রবার জুম্মার নামাজে যাবো, পায়ে অনেক ব্যাথা করছিলো। নামাজে যেতে মন টানছিলো না, অনেকটা জোর করেই আমি গেলাম। আমি সুন্নত পড়তে গিয়ে রুকুতে যাবার পরেই ঘটনা ঘটে গেলো। 
(চলবে,,,)

লেখক: কথাসাহিত্যিক ও ব্যাংকার