প্রবন্ধ
জান্নাতুল বাকী ও প্রসঙ্গান্তর

(২য় পর্ব)
তুর্কী সুলতানের বিরুদ্ধে সাধারণ লোকদের ক্ষেপিয়ে তোলায় ওহাবী আন্দোলন রাজনৈতিক হাতিয়ারে রূপান্তরিত হয়ে রাষ্ট্র ও ধর্মনীতিতে মহাপ্লাবন সৃষ্টি করে। আঃ ওহাবের জন্মস্থান নজদ সম্পর্কে আমাদের ইসলামে খুবই নেতিবাচক ধারণা ছিল। হেজাজের এলাকা বাদে অবশিষ্ট আরব অঞ্চলকে নজদ বলা হয়। ‘মিশকাতুল মাসাবিহর' এ ইবনে ওমর (রা.)-এর বরাত ও বুখারী শরিফের উদ্ধৃতি দিয়ে বর্ণনা করা হয় যে, রাসূল (স.) বলেছেন নিজদে হট্টগোল ও বিশৃঙ্খলা হবে এবং নজদ থেকে শয়তানের সেনা ও তার সহযোগীদের উদ্ভব হবে।' রাসূল (স.)-এর ভবিষ্যত বাণী সত্যে পরিণত হচ্ছে মনে করে অনেকে প্রতিরোধ করতে গিয়েও ব্যর্থ হয়েছিল।
যতদূর জানা যায়, রাজনৈতিকভাবে ওহাবী আন্দোলনের কঠোর প্রতিবাদ করেছিলেন দাহাম। দাহাম পরাস্ত হয়ে ১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দে রিয়াদ থেকে পলায়ন করলে আবদুল আজিজ সাউদ রিয়াদ দখলসহ সমগ্র নজদ প্রদেশের অধিকর্তা হয়ে বসেন। আবদুল আজিজ এবনে সাউদ (নজদের আমির, দারাঈনের সর্দার) ১৮০২ খ্রিস্টাব্দে কারবালা দখলসহ- ১৮০৩ খ্রিস্টাব্দে বিজয়ীর বেশে মক্কা প্রবেশ করেন। তারা তৎকালীন কা'বা শরীফের ইমাম সাহেবকে অপদস্তসহ অনেক আলেম হত্যা করেন। তাদের অত্যাচারে বহুলোক মক্কা মদিনা ছেড়ে পাহাড় পর্বতে আশ্রয় গ্রহণ করে। যারা তাদের আকিদা পালন করতে অস্বীকার করে তাদের মালামাল লুটপাটসহ অনেককে হত্যা করা হয়। তাদের মতে তারাই প্রকৃত মুসলমান এবং তাদের বিপরীত মতাবলম্বীগণ কাফের। আবদুল আজিজ এবনে সাউদ ১৮০৩ খ্রিস্টাব্দের ৪ঠা নভেম্বর শিয়া মতালম্বী এক গুপ্ত ঘাতক কর্তৃক নিহত হন। তাঁর নিহত হওয়ার পর তাঁর সুযোগ্য পুত্র সাউদ ইবনে আবদুল আজিজ মুহাম্মদ ইবনে সাউদ সাম্রাজ্য বিস্তারসহ ওহাবী আন্দোলনের হাল ধরেন। ১৮০৪ খ্রিস্টাব্দে মদিনা এবং ১৮০৬ খ্রিস্টাব্দে মক্কাসহ জেদ্দাকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করেন। ওহাবী ও সাউদী এ দুই দুর্দম্য শক্তির বিপদ সম্পর্কে তুরস্কের সুলতানকে অবগত করানো হয়। তুরস্কের সুলতান মিশরীয় শাসক ইব্রাহিম পাশাকে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশ দেন। ইব্রাহিম পাশার সাথে কয়েক দফা সংঘর্ষের পর সউদী শক্তি দুর্বল হয়ে পিছু হটে। শান্তির লক্ষ্যে উভয় পক্ষের মধ্যে বাগদাদে এক সন্ধিপত্র হয়।
সউদী শক্তি রাজ্যহারা হয়ে পুনরায় আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ আল সাউদের প্রচেষ্টায় হারানো রাজ্য পুনঃদখলসহ রাজ্য বিস্ত রি শুরু করেন। আর এ কারণে আবদুল্লা ইবনে মুহাম্মদ আল সাউদকে সউদী আরবের দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়। ১৮১১ সালের দিকে সউদী সাম্রাজ্য উত্তরে আলেপ্পো থেকে ভারত মহাসাগর, পূর্বে পারস্য উপসাগর ও ইরাকের সীমান্ত থেকে পশ্চিমে লোহিতসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে পড়ে। উদরপরায়ণ ময়াল যেভাবে মরালকে উদরস্থ করে ঠিক সেভাবে সউদী সাম্রাজ্যে দুর্নিবার ওহাবী আন্দোলন ধর্ম থেকে শিরক ছাটাইয়ের নামে শনৈঃশনৈ ধর্মের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ উদরস্থ করতে থাকে।
এ কথার সমর্থন রয়েছে ফকির আলতাফ হোসাইন লিখিত ‘কলেমা দর্পণ’ গ্রন্থের ৯২-৯৩ পৃষ্ঠায়। তিনি বলেন ‘অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথমে এই সম্প্রদায় আরব ভূমিতে আত্মপ্রকাশ করে। ওয়াহাবী মতবাদের প্রবর্তক আবদুল ওয়াহাব নজদী বর্তমান সৌদী আরবের নজদ নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। প্রাথমিক জীবনে তিনি বহু দেশ সফর করেছেন। এলেম শিক্ষার পর পর নজদের উয়ানা এলাকায় তিনি স্বীয় চিন্তাধারা ব্যক্ত করতে চেষ্টা করেন। কিন্তু উয়ানার তৎকালীন সমাজের একজনও তার ইসলাম ধর্মের সংস্কার মতবাদ গ্রহণ করেন নি। এক সময় স্বীয় আত্মীয়-স্বজন কর্তৃক তিনি উয়ানা থেকে বিতাড়িত হন। অতঃপর, তিনি দারাঈনের সর্দার বা সমাজ প্রধান মুহাম্মদ ইবনে সউদের আশ্রয় গ্রহণ করেন। অল্প দিনেই ইবনে সউদের সাথে তাঁর আতাত সৃষ্টি হয়। তাঁরা উভয়েই এই শর্তে একযোগে কাজ করার অঙ্গীকারাবদ্ধ হন যে, মতবাদ গৃহীত এলাকার সুলতানাত বা শাসন কর্তৃত্ব থাকবে ইবনে সউদের হাতে এবং ঐ সমস্ত এলাকার ধর্মীয় কর্তৃত্ব থাকবে আবদুল ওয়াহাব নজদীর হাতে।
ওহাবী আন্দোলেনের সক্রিয় সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত সউদী রাজ্যে ওহাবী চিন্তা চেতনা আইনে পরিণত হতে শুরু করে। ওয়াহাবী চেতনা আইনী বাধ্যবাধকতায় পরিণত হওয়ায় তা রস-যশ ও প্রেম-গন্ধহীন হয়ে পড়ে। প্রেম- গন্ধহীন ওয়াহাবী চেতনা থেকে আত্মিক সম্পর্ক ও মানবিক চৈতন্যসত্তা বিলীন হতে শুরু করে। আত্মার সাথে সম্পর্কহীন দেহ সাদৃশ্য ওয়াহাবী ধর্ম পদ্ধতিতে প্রাণের কৃত্রিম স্পন্দন ফিরিয়ে আনতে ইনসেন্টিভ কেয়ারে রাখা মুমূর্ষু রোগীর মতো ওয়াহাবী ইসলামে যুক্ত হয়েছে অত্যাধুনিক ও বিস্ময়কর বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি। তাই প্রেম-গ্রীতি ও শ্রদ্ধা-ভালবাসা বর্জিত ওয়াহাবী ইসলাম দিন দিন যান্ত্রিক ও ডিজিটাল হয়ে পড়ছে। ওয়াহাবী সংস্কৃতির সীমাহীন আড়ম্বরতা চোখকে যে পরিমাণ আকৃষ্ট করে মনকে সে পরিমাণ আকৃষ্ট করতে পারে না। আর এসব কারণেই ওয়াহাবী চেতনায় ধর্মচারীদের পোশাকি আড়ম্বরতা যে হারে বাড়ছে আত্মিক উন্নয়ন সে হারে বাড়ছে না। আত্মার সাথে সম্পর্কহীন ওয়াহাবীদের আইনী ধর্ম আরবের সবুজ লতা-গুল্মহীন ধূসর মরুর বালি আর পাথরের মতোই হৃদয়হীন।
আবদুল ওয়াহাব যে অয়স্কান্তমণির আকর্ষণে অন্তঃসলিলা ফল্গুধারার মতো বিশ্বস্বীকৃত ১৩০০ বছরের একটি সুষম (ব্যালেন্স) ধর্মকে অসম (ইমব্যালেন্স) অবস্থায় নিয়ে মুসলিম সমাজে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, ফিৎনা- ফ্যাসাদসহ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছিলেন সে অয়স্কান্তমণির সন্ধান নিচের উদ্ধৃতি থেকে কিছুটা অনুমান করা যায়।
অয়স্কান্তমণির সমর্থনে সাক্ষ্য হিসেবে “দিওয়ান-ই-মুঈনুদ্দিন' গ্রন্থের ৫০৩ ও ৫০৪ পৃষ্ঠা থেকে কয়েকটি উদ্ধৃতি উৎকলিত হলো-
‘অষ্টাদশ শতাব্দীতে আরব বংশোদ্ভূত মুহাম্মদ বিন আবদুল ওহাব ব্রিটিশ মদদপুষ্ট হয়ে তার ওহাবি মতবাদ প্রচার শুরু করে। তার মতবাদ সম্পূর্ণরূপে মুসলিম দর্শন ও তাসাওফের বিরুদ্ধে এবং একটা বস্তুবাদী ভাবধারা। ক্ষমতা প্রদানের লোভ ও বিদেশি অর্থের জোরে তার সমর্থক যোগাতে বেগ পেতে হয়নি। মূলত ইবনে আবদুল ওহাবের দীক্ষাগুরু ছিল ব্রিটিশ গোয়েন্দা বিভাগের অফিসার হামফ্রে। ‘হামফ্রেস ডাইরী' নামক গ্রন্থখানা পড়লে দেখা যায় যে, হেন কোনো ইসলাম বিরোধী অপরাধ নেই যা ইবনে আবদুল ওহাব করে নি। পবিত্র কোরআনের ভুল ব্যাখ্যা প্রদান থেকে শুরু করে নবী- রাসূলদের বিরুদ্ধে কথা বলা, আউলিয়াদের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করা এবং তাদের সকল মাজার নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া, আহলে বাইতের সমাধি নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া, মাজহাবের ইমামগণ সম্পর্কে কটুক্তি করা, তাদের ও সাহাবিদের জ্ঞান-গরিমা অস্বীকার করা ইত্যাদি কোনো অনৈতিক কাজ ওহাবি আন্দোলনে বাদ পড়ে নি। হামফ্রের হাতের ক্রীড়নক ইবনে আবদুল ওহাবকে দিয়ে সে তার সাধ্যমতো ইসলামের ক্ষতি করেছে, ইসলামকে প্রাণ ও দর্শন বিবর্জিত করে খোলসে পরিণত করেছে এবং তাতে ব্রিটিশ সরকার রাজনৈতিক ফায়দা লুট করেছে। আজকের দিনেও আরবে এ ওহাবি ভাবধারা প্রচলিত আছে।
আবদুল ওহাবের জন্মস্থান নজদ এলাকায়। বর্তমান সউদ বংশীয় বাদশাহের জন্মভ‚মিও নজদে। তাই আধুনিক শিক্ষায় পিছিয়ে পড়ার ফলে বিশ্ব বিচ্ছিন্ন নজদীগণ সহজেই ওহাবী মতবাদে আস্থা স্থাপন করেছে।
একই গ্রন্থে এ বিষয়ে আরো বলা হয়, ‘রাসূল (স.) যে এলেম শিক্ষা দিয়েছিলেন তা ছিল মূলত এলমে শরিয়ত ও এলমে মারেফাতের সর্বোত্তম সমন্বয় এবং দুটি এলেমের সমন্বয়েই ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এর কোনো একটিকে বাদ দিয়ে পূর্ণাঙ্গ ইসলাম বলা যায় না। এ দুটি এলেমের সমন্বয় নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করে রাসূল (স.) মানুষের জন্য মহান আদর্শ নির্ধারিত করে গেছেন। কিন্তু কালের প্রবাহে মানুষ রাসূল (স.)-এর শিক্ষা থেকে সরে গিয়ে দুনিয়াদারী ভোগবিলাস ও রাজনৈতিক স্বার্থ সিদ্ধির হাতিয়ার হিসেবে ইসলামকে ব্যবহার করে এর প্রকৃত আদর্শ ভূলুণ্ঠিত করছে।’
আবদুল ওয়াহাব তার উদ্দেশ্য সাধনের জন্য ধর্মের যে অমোঘ ও অব্যর্থ হাতিয়ারটি বেছে নিয়েছিলেন তার নাম ‘শিরক’। প্রত্যেক দেশের আইনে এমন কিছু কাজ রয়েছে যা করা বা না করার অপরাধ বিচারকের বাবাও ক্ষমা করতে পারেন না। ধর্মেও এমন কিছু কাজ রয়েছে যা করা বা না করার অপরাধ স্বয়ং আল্লাহও ক্ষমা করেন না। ইসলাম ধর্মে ‘শিরক’ মহা অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। শিরক সম্পর্কে কোরআন মজিদে যে আয়াত বর্ণিত হয়েছে, তাতে বুঝা যায়, উহাই একমাত্র ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। ‘আল্লাহ তায়ালা তাঁর অংশী স্থাপনকারীকে ক্ষমা করবেন না এবং উহা ব্যতীত যে কোনো পাপ যার জন্য ইচ্ছে করেন ক্ষমা করতে পারেন। কোরআন ও হাদিসের পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ পাক যদি নামায আদায় না করার পাপও মা'ফ করে দেন তবে নিঃসন্দেহে তা সৌভাগ্যের বিষয়। এ অমার্জনীয় অপরাধ সমূহের অন্যতম অপরাধ হলো ‘শিরক’।
আরবি ‘শিরক' শব্দ থেকে বাংলায় শরীক শব্দটির প্রচলন হয়েছে। শরীক শব্দের আভিধানিক অর্থ ভাগীদার, অংশী, অংশগ্রহণ করা, শরিকানা ইত্যাদি। এসব শব্দের পরিধি এত বেশি এবং ব্যাপক যে, আমাদের দৈনন্দিন কর্মকাÐের সময় যেসব কথোপকথন হয়ে থাকে সেসব কথোপকথনের অনেক শব্দই শিরকের আওতায় পড়ে যায়। যেহেতু আসমান, জমিন, হায়াত মউৎ, রিযিক দৌলত সবকিছুর মালিক আল্লাহ, সমস্ত প্রসংসা ও কৃতিত্বের দাবিদার ও স্বত্বাধিকারীও একমাত্র আল্লাহ, তাঁর ইচ্ছা ছাড়া গাছের পাতাটাও নড়ে না সেহেতু আল্লাহর এই অমোঘ ক্ষমতায় ছায়াপাত সৃষ্টিকারী সবকিছুই ‘শির্ক’। নিচের বাক্যগুলো লক্ষ্য করুন-
‘এ জমিগুলো আমার, এ দুর্দিনে বড় ছেলের চাকরি না হলে না খেয়ে মরতে হতো, সময়মতো ডাক্তার আসায় প্রাণে বেঁচে গিয়েছি, ভালমতো লেখাপড়া করলে পরীক্ষা পাস কেউ ঠেকাতে পারবে না, নির্বাচনে উত্তীর্ণ হলে... দামে.... খাওয়াব, ওকালতি না করলে খাওয়াবে কে? এবং সময় সময় পানি দিয়েছি বলে জমিতে প্রচুর ধান হয়েছে” এসব কথা থেকেÑ আমার, চাকরি, ডাক্তার, ভালোমতো লেখাপড়া, নির্বাচনে উত্তীর্ণ, ওকালতি এবং পানি এ কয়টি শব্দ যেহেতু উপরে উল্লেখিত আল্লাহর অমোঘ ক্ষমতায় ছায়াপাত সৃষ্টি করে সেহেতু শিরকের গন্ধমুক্ত নয়। এক কথায় ‘আমিত্ব’, ‘অংশীদারিত্ব’ ‘কৃতিত্ব এবং ‘কর্তৃত্ব’ এ জাতীয় শব্দসমূহের সাথে অবশ্যই স্রষ্টার নাম যুক্ত করতে হবে। আমাদের দৈনন্দিন কথোপকথন ও ক্রিয়াকর্ম থেকে এ ধরনের শিরকীর ছায়াপাত দূর করতে গেলে ঠক বাছতে গাঁও উজার হয়ে পড়ার মতো অবস্থা হবে। এক কথায়, আমাদের ধর্ম থেকে শির্ক-এর ষোল আনা ছায়াপাত দূর করতে হলে- আমাদের অভিধান থেকে ‘আমি, তুমি ও সে' এ জাতিয় সর্বনামগুলো ষোল আনা বর্জন করে তৎস্থলে স্রষ্টার নাম ব্যবহার করতে হবে। শুধু তাই নয়, নির্বাচনের প্রাক্কালে রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীর অধিকাংশ অঙ্গীকারই শিরকপূর্ণ। সমাজ ও ধর্মের শরীর থেকে এসব শিরক দূর করতে গিয়ে নিজেরা অন্ধত্ব বরণসহ আমাদের প্রাণপ্রিয় নবী করিম (স.) ও দূরে চলে যেতে শুরু করেছেন। বিশ্বাস না হয় ওহাবী মতবাদ থেকে উদ্ধৃতি করা নিচের বাক্যগুলো লক্ষ্য করুন।
১. এবাদত বা দোয়ার সময় নবী করিম (স:) বা কোনো অলী- আউলিয়াকে উপলক্ষ করে কিছু চাওয়া শিরক।
২. কোরআন মজিদের অনুবাদ, তফসির বা ব্যাখ্যা কুফরী।
৩. সুন্নত নামায এবং কবর যিয়ারত অহেতুক ও অপ্রয়োজনীয়।
৪. মিলাদ মাহফিল বা নবী করিম (স:)-এর জন্ম ও ওফাত দিবসে মিলাদ বা আলোচনা বেদায়াত।
অধ্যাপক গোলাম আজম লিখিত ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত ‘ইসলামে নবীর মর্যাদা' নামক গ্রন্থে তিনি আরো পরিষ্কার করে বলেছেন- ‘মিলাদে রাসূল (স:) হাজির আছেন মনে করে দাঁড়িয়ে তাকে সম্মান করা শিরকের পর্যায়ে পড়ে।’
একই সুর পাওয়া যায়, ‘তাম্ভীয়াতুল ঈমান'-এর মূল কথায়। ইসমাইল দেহলভীর ‘তাম্ভীয়াতুল ঈমান'-এর মূল কথা হলো :
১. ইসমাইল দেহলভীর দলই একমাত্র মুসলমান। তাঁহারা ছাড়া আর সকল মুসলমানই মুশরিক।
২. আল্লাহর পক্ষে মিথ্যা বলা জায়েজ।
৩. রাসূল (স.) গায়েব ছিলেন না। এমনকি আল্লাহর কোনো ইল্ম-ই গায়েব নেই।
৪. রাসূল (স) শেষ নবী নন, তাঁর পরেও কোটি পয়গাম্বর হতে পারেন।
৫. আম্বিয়া ও আউলিয়া-ই- কেরামদের উপলক্ষ করা শিরক। (চলবে)
লেখক: আইনজীবী ও কথাসাহিত্যিক