উপন্যাস
আকাশ মেঘলা হলেও হাসে

(পর্ব তেরো)
আমার কানে ভেসে এলো কট কট এর মত কিছু। হাড় গোড় গুড়া হয়েছে এটা আমি নিশ্চিত। আমি রুকু থেকে উঠতে পারছিলাম না। অনেক কষ্ট করে দাঁড়ালাম বটে, কিন্ত অনেক ব্যাথা। ধীরে ধীরে ৪ রাকাত নামাজ শেষ করলাম।
বলেন কি? কীভাবে?
জ্বি স্যার, আমি জানি না কি করে পড়েছিলাম। এর পরে পেইন ম্যানেজমেন্ট করে বসে ছিলাম ভাবছিলাম বাকী দুই রাকাত কীভাবে পড়বো। এ চিন্তায় চিন্তায় নামাজের সময় হয়ে গেলো। দাঁতে দাঁত চেপে দুই রাকাত ফরজ নামাজ শেষ করেছিলাম। এর পরে আমার আর সাহস হলো না বাকি সুন্নত নামাজ পড়া।
কী করলেন তখন?
আমি সাধারণত মসজিদে গেলে সাথে মোবাইল নিই না। না হারানোর ভয়ে না, মনে হয় আমি এতো বিখ্যাত কেউ না, বড় ব্যবসায়ী না যে সব সময় মোবাইল আমার সাথে থাকবে। তাছাড়া নামাজের সময় এটার দরকার কী? ইশ যদি মোবাইল থাকতো, তখন ভাবছিলাম কাকে কল দেবো? কীভাবে কল দেবো আমার সাথে তো ফোন নেই। আব্বা এখানে নামাজ পড়েন, তার সাথে যদি দেখা হতো। আমার ছেলের সাথে দেখা হতো যদি, খুব চাইছিলাম কোন বন্ধুর সাথে দেখা হোক।
হয়েছিলো?
না স্যার।
কি করলেন তাহলে ?
আমি দম নিলাম। কথা বলতে ভালো লাগছিলো না। একটু চুপ করে জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম। চাষাড়ার দিকে বাস যাচ্ছে। পচা গন্ধ চারিদিকে। এখানে এলে প্রতিদিন এ গন্ধ পাই। এখান দিয়ে পার হলে একটু শীত শীত লাগে। বোঝা যায় ঢাকার বাইরে। হেলপার ডাক ছাড়লো, এ স্টেডিয়াম, নাম্বার নাই, ওস্তাদ, নাম্বার নাই। সাই সাই করে চলে যাচ্ছে। জানালার দিকে বসে আছি আমি। ভাবছি এর আগেও আমার গায়ে দুই বার অপারেশন হয়েছে, এটা নিয়ে মোট তিনবার, আর কত?
মসজিদের ফ্লোরে বসে এদিকে ওদিকে তাকালাম। আমার পিছে কেউ নেই। আমি একটু সময় নিলাম। অনেকের সুন্নত পড়া হলে একটু হালকা হয়ে গেল মসজিদ। আমি পেছনে বসে বসে, মাটিতে ঘেসে ঘেসে বক্সের দিকে গেলাম। বসেই হাত দিয়ে জুতা নিলাম, সেখানে একটা পিলার ছিলো। সেখানে পিঠ দিয়ে ধীরে ধীরে অনেক কষ্ট করে, ব্যাথা সহ্য করে দাঁড়ালাম বটে। কিন্তু পা বাড়ালেই ব্যাথা। আমার তখন রোবট সিনেমার কথা মনে হলো, রজনীকান্ত কীভাবে হাঁটতেন। আমি অনেক ধীরে ধীরে হাঁটা শুরু করলাম, তখন আমি মোবাইল যে একটা দরকারী পন্য তা অনুভব করলাম।
এরপর?
আমি ছিলাম দোতলায়। সিড়ি দিয়ে নামছিলাম আর বার বার ভাবছিলাম, পরশু দিন অফিসে কীভাবে যাবো। আমার ডিভিশনের কলিগ মানে এইচআর এর সবাইকে বলেছিলাম একটা কেক কিনে আনতে। রোববার এমডি স্যার এর আমাদের ব্যাংকে যোগদানের ২য় বর্ষ পুর্তিতে কাটা হবে। এর পরের দিন আমি ভারতে যাবো আব্বাকে নিয়ে। নানা চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিলো।
আমি ধীরে অনেক ধীরে সড়কে চলে এলাম এর পরে লেক এর ধার দিয়ে লোহার বেড়া দেয়া ছিলো, সেটা ধরে ধরে একটু একটু করে এগুতে শুরু করলাম। আমার গলা শুকিয়ে যাচ্ছিল। ব্যাথায় বার বার কো কো করছিলাম। মনে হচ্ছিলো কেন গাড়িটা আনলাম না, আসলে তখন যা মনে হয় স্যার, কি আর। আকাশ কুসুম চিন্তা , উথাল পাথাল ভাবনা।
এরপর কারো সাথে দেখা হলো না?
না স্যার, আমি তো একটু পরে বেরিয়েছিলাম, মনে হয় পরিচিত সবাই চলে গেছে। আমি বাসার কাছে আসতেই পেছন থেকে আব্বা টের পেয়ে আমাকে ধরলেন, বললেন কি হয়েছে, টান লেগেছে? কোথায় পড়ে গিয়েছিলাম কিনা জানতে চাইলেন, এরপর আমরা লিফটে বাসায় এলাম, এসেই আমি বিছানায়। কী যে আরাম লাগলো। সে কথা বলে বোঝানোও যাবে না।
মা, ঘরে ব্যস্ত হয়ে ঢুকলেন, কী হয়েছে?
কিছু না মা, ব্যাক পেইন, ঠিক হয়ে যাবে। খাবার দেন, খেয়ে ঘুম দেই ঠিক হয়ে যাবে সব। আমার বাসায় আমার সহধর্মিনী নেই। সে গেছে মায়ের বাড়িতে। কাছেই, মিন্টু রোডে। আমি একটু রেস্ট নিয়ে আবারও লম্বা হয়ে শুয়ে রইলাম, একটু ঘুমের আশায়।
আমি আমার এক বন্ধুকে মেসেজ দিলাম, সাথে সাথে আমাকে কল দিলো সে। (চলবে,,,)
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও ব্যাংকার