Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ ড. লিপন মুস্তাফিজ


প্রকাশিত: ০০:৩৯, ২৭ এপ্রিল ২০২৫

আপডেট: ০০:৩৯, ২৭ এপ্রিল ২০২৫

উপন্যাস

আকাশ মেঘলা হলেও হাসে

আকাশ মেঘলা হলেও হাসে
ছবি: সবার দেশ

(পর্ব চৌদ্দ)

গল্প করতে করতে বাস চলে এলো চাষাড়া। যদিও বলে চাষাড়া কিন্তু এখনও গোল চত্ত্বরে যেতে সময় লাগবে মিনিট পাঁচেক। হাত ঘড়ি তো আজকাল ব্যবহার করা হয়না। হাতে ধরা মোবাইলে তাকিয়ে দেখি অফিস শুরু হতে আরও পনেরো মিনিট বাকী আছে। আমরা বাস থেকে নেমে পড়লাম। ডিজিএম স্যার এর হাঁটার গতি অনেক, আমারও কম না। কিন্তু পায়ের ব্যাথায় আমি বেশিদূর যেতে পারিনা। প্রতিদিন যাতায়াত করতে করতে আমার অবস্থা কাহিল। বাম পা আমার, দশ মিনিট হাঁটার পরে আর চলে না।

সকালের নারায়নগঞ্জ এভাবে দেখা হয়না ঠিক মতোন। প্রতিদিন একটা স্থানে নেমে ধীরে ধীরে পায়ের ওপরে প্রসার না দিয়ে অফিসে যাই। কোলাহলমুখর সকাল, তবে সবখানেই শুধু অটো অটো আর অটো। রাস্তায় হাঁটাও মুশকিল। জ্যাম ছুটে যাচ্ছে, স্যারকে বলেই আমি আবার বাসে উঠে পড়ি। কেননা রিকশায় ঝাঁকিতে কোমরে অনেক ব্যাথা লাগে। হেঁটেও যেতে পারবো না এতটা পথ। বাস চাষাড়া থেকে বামে মোড় নিয়ে আর এগুতে পারছে না। পারবে কি করে সারি সারি অটো রিকশা। হুট হাট করে সমনের চাকা এগিয়ে দিয়ে বসে আছে। পথ রোধ করে দিচ্ছে। আরো সামনে গেলে হাতের বামে রাস্তা কাটা এর পরে সিএনজি গুলো লাইন দিয়ে দাঁড়ানো। এত সরু হয়েছে রাস্তা বাস যেতেই পারছে না।

ড্রাইভার হুংকার দিলো, খানকির পোলারা! সক্কাল বেলা রাস্তা আটাকাইছোস! অফিস টাইম কারও হুঁশ নাইক্যা। 
হেলপার হাঁক দিলো, ঐ মান্দের পুত। সবার গুলারে বান্ধা পিটামু।
সার সারি সিএনজির চাকলেরাও পাল্টা জবাব দিলো, 
আরে ওই রাস্তা কি তো বাপের। 
কোন কোন ড্রাইভার আবার হাতের ইশারা দিয়ে বাসকে বেরিয়ে যেতে সাহায্য করছে। বাস বেরিয়ে গেলো। সামনের মোড়ের নাম মেট্রো। এ মোড়ে একটা সিনেমা হল আছে। আগে জানতাম না, এখন এ হলগুলোর নাম সিংলে স্ক্রীন। মাল্টিপ্লেক্স সিনেমা হল হবার কারণে আজকাল এগুলোর আর কদর নেই। শীর্ণ জীর্ণ মলিন হলে কে-বা যেতে চায়। ছেঁড়া একটা পোস্টার লাগানো আছে বড় করে, শাকিব খান এর ছবি। সাথে এক কোনায় অপু বিশ্বাস। বোঝা যায় অনেক আগের ছবি। বাসটা মোড় ঘুরে টান দিলে এটা চোখে পড়ে। বাসের মাথা ঘুরিয়ে সোজা হলো কাজীরবাজারের দিকে। বিপরীত দিকে দিয়ে আসছে অনেক অটো। ডান পাশের ধার ধরে একটা বাস আসছিলো রাস্তা এতো ছোট যে দুইটা বাস লেগে যায় যায় ভাব। সে বামে চাপাতে গিয়ে বিপত্তি ঘটলো। বাসের বাম দিকের লুকিং গ্লাসে আটকে গেলো রাস্তার ওপর দিয়ে যাওয়া তার। দেখে মনে হচ্ছে বাতিল কোন বিদ্যুতের তার আর নাইলে টেলিফোনের তার হবে। 

তারটা এমন পেঁচিয়ে গেলো, কোনভাবেই হেল্পপার জট ছুটাতে পারছে না। মুহুর্তেই রাস্তায় জ্যাম বেঁধে গেলো। দুই বাসের মাঝে সামান্য একটু ফাঁকা জায়গা আছে, এর ভেতর দিয়ে ছোট ছোট অটো রিকশা, মোটর সাইকেল যাওয়া আসা করছে। আর বাসের হেল্পার হাত দিয়ে তার ছোটানোর কাজে ব্যস্ত। আমি আমাদের বাসের ডান দিকের জানাল্য বসে খেয়াল করছিলাম, সে কী করছে। পরে উপায় না দেখে, নেমে এলো বাস থেকে, রাস্তায় এসে সবাইকে জিজ্ঞেস করছে ভাই প্লাস আছে? 

এ করে প্রায় পাঁচ মিনিট সব অটো রিকশা চালককে সে শুনেছে। আল্লাহর রহমত, একটা প্লাস পাওয়া গেলো, এর পরে সে বাসে উঠে জানালার উপরের দিকে লুকিং গ্লাস জড়িয়ে যাওয়া তার কেটে দিলে বাস যাত্রা শুরু করলো, চারিদিকে হর্ন, কে কার আগে যাবে। কিন্তু সামনে গিয়ে আরও বিপত্তি। বাসটা বাজারের ভেতর দিয়ে যায়, এখন দেরী হবার কারণে এইখানে জ্যাম লেগে আছে। ছোট ছোট গলি থেকে অটো বের হচ্ছে আর বড় বড় ট্রাক তো আছেই। কিছু বয়স্ক লোকেরা হাতে কাঠ বা বাঁশ নিয়ে জ্যাম পরিষ্কার করার চেষ্টা করছে। (চলবে,,,)

লেখক: কথাসাহিত্যিক ও ব্যাংকার