Advertisement

আসমা সরকার 

প্রকাশিত: ০৩:১২, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

আপডেট: ১৭:১১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

আকাশের চোখ

আকাশের চোখ
ছবি: সবার দেশ

বৃষ্টি আজ অনেক সময় নিয়ে সাজগোজ করছে।।ইদানিং সাজতে তার খুব একটা ভালো লাগেনা। কোনোরকম একটু পরিপাটি থাকতে পারলেই হলো। অথচ,বিয়ের আগে অনেক সেজেগুজে থাকতো। কাজিনরা,বান্ধবীরা মিলে প্রায়ই ঘুরতে বেড়াতে বের হতো, আর চলতো সাজগোজের প্রতিযোগিতা। কে কার চেয়ে বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে পারে সেই প্রতিযোগিতা। বরাবরই বৃষ্টি সবার সেরা বিবেচিত হতো। 

কেউ বলতো গোলাপি তোর মেকাপের কি প্রয়োজন? কেউ বলতো,ভ্রু ত নয় যেনো ধনুকরে বাবা,,,! আবার কেউ ঠোঁটের প্রশংসা করে বলতো,,ইশশশ,,এমন ঠোঁট থাকলে লিপস্টিক দিতামইনা।
বৃষ্টি তবুও ঠোঁটে লিপস্টিক দিতো,মুখে মেকাপ নিতো,চোখে কাজল দিয়ে মনের মতো করে সাজতো।
কিন্তু আজকাল চোখে কাজল দিলে চোখ চুলকায়।

তবুও আজকে আগের মতো করে সাজতে হবে। বাইরের আবরণে ঢেকে দিতে হবে ভেতরের কিছু ভাঙাচোরা পরিবর্তন। বন্ধুদের আড্ডায় আগের মতোই হৈ হুল্লোড় করে মাতিয়ে রাখবে সবাইকে। সবাই যেনো বলে,,বৃষ্টি তুই আগের মতোই আছিস,,,,,

সব স্কুল ফ্রেন্ড রা একসাথে হবে আজ।।স্কুল ফ্রেন্ডদের মধ্যে বৃষ্টি অনেক চঞ্চল আর স্বতঃস্ফূর্ত স্বভাবের। যদিও আজকাল চঞ্চলতা আর স্বতঃস্ফূর্ততা বৃষ্টির নাগালের বাইরে। শুধু অনুভব করা যায়,স্পর্শ করা যায়না। কোথায় যেনো একটা দেয়াল তৈরি হয়েছে বিয়ের আগের জীবন আর পরের জীবনের মাঝখানে।
বিয়ের পর এই প্রথম সবার সাথে দেখা হবে আড্ডা হবে, হবে খাওয়াদাওয়াও। আয়োজনটা করেছে বাল্যবন্ধু মেঘলা। তার প্রমোশন উপলক্ষে এই গেট টুগেদার পার্টি।

আকাশ কখনো বৃষ্টির সাথে বেড়াতে যায়না। সে একা একাই বেড়ায়। বৃষ্টিকে সাথে নিতে কিসের এতো আপত্তি তা আজও রহস্যময়। কতোদিন নিজে থেকে কোথাও বেড়াতে চেয়েছে, কিন্তু আকাশের পাহাড় সমান অজুহাত। বৃষ্টি অভিমান করে হউক আর অনিহার কারণেই হউক আকাশকে আর তার সাথে কোথাও যেতে বলে না। পাশের বাসার ভাবি,কিংবা আশেপাশে থাকা কাজিনদের সাথেই বেশিরভাগ ঘুরতে বা প্রয়োজনে বাইরে যায়। গতকাল রাতে মেঘলা যখন দাওয়াত করলো একটু ইতস্তত করলেও আজ মেঘলার আমন্ত্রণ উপেক্ষা করতে না পেরে বৃষ্টির সাথে যেতে রাজি হয়েছে  আকাশ।

বৃষ্টি জানে,আকাশ কৌতুহলী হয়েই যাচ্ছে তার সাথে। গতকাল ফোনে যে নারী কন্ঠ সে শুনেছে তাকে না দেখার লোভ সামলানোর মতো উদার মনের সে নয়। এবং বিগত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতায় এটাও বুঝছে,পার্টিতে যাওয়ার পর অন্যান্য নারীদের ভীড়ে বৃষ্টিকে পাত্তাই দিবেনা আকাশ। বৃষ্টি একা একাই এর ওর সাথে পরিচিত হবে গল্প করে সময় কাটাবে।

কিন্তু আজ সবাই তার পরিচিত। আকাশের নয়। তবুও এই লোক ঠিকই বৃষ্টিকে এড়িয়ে তারই বন্ধুদের দৃষ্টি আকর্ষণে সচেষ্ট থাকবে।।

তবুও আজ বৃষ্টি খুব মনোযোগ দিয়ে সাজবে। অনেকদিন পর সাজতে মন চাইছে। যেনো পুরনো বন্ধুরা পুরনো  বৃষ্টিকেই দেখে। বর্তমানের বৃষ্টি যে আকাশের বুক থেকে কেবলই ঝরে পরে তা ওদের বুঝতে দেয়ার আড়ালই হউক কড়া প্রসাধনীর ব্যবহার।

আকাশ রেডি হয়ে বৃষ্টিকে তাড়া দিলো।
কই? তোমার হলো?
এখনো ড্রেসিং টেবিলের সামনেই বসে আছো? এতো সাজগোজের কি হলো??চলো বের হই।
বৃষ্টি নির্লিপ্তভাবে উঠে হাতঘড়িটার কাচ মুছে নিলো। চোখ মুছতে গেলে কাজল লেপ্টে যাবে যে,,,,।

যথাসময় ওরা মেঘলার পার্টিতে উপস্থিত হলো। পুরনো সব বন্ধুরা একে একে আসছে দেখা হচ্ছে,হৈচৈ হচ্ছে।
একফাঁকে মেঘলার সাথে আকাশের পরিচয় করিয়ে দিলো বৃষ্টি। আকাশ তো একেবারে গর্জন করে উঠলো,,

আরে ব্বা হ!! আপনার কন্ঠ শুনেই আমি আন্দাজ করেছিলাম আপনি অনেক সুন্দরী হবেন।

মেঘলা টিপ্পনী কেটে বললো,, 
কেনো,,আমার কন্ঠ কি খুব খারাপ?
আরএ না,,,,কন্ঠ খারাপ হবে কেনো?
না মানে আমি যদ্দুর জানি,সুন্দরী মেয়েদের কন্ঠ তেমন
শ্রুতিমধুর হয়না।হাহাহাহা,,,,, 
আকাশ যেনো আরও উদার হলো।
বাহ,,আপনার হাসিটাও চমৎকার। এককথায় অল ইন অল,,,,,

বৃষ্টি অন্য বন্ধুদের ডাকে সেখান থেকে সরে পড়লো। বৃষ্টি আজ এতো যত্ন করে সেজেছে,কই আকাশ ত একবারও বলেনি,তোমাকে সুন্দর লাগছে। অবশ্য কখনোই বলেনা বলেই বৃষ্টিও তেমন সাজগোজ করেনা। ভেবেছে আকাশ হয়তো এসব ব্যাপারে উদাসীন। তবে আজ মেঘলার প্রশংসা যেভাবে করছে তাতে মনে হচ্ছে বৃষ্টিকে সে ইচ্ছে করেই অবজ্ঞা করে। কিন্তু এর কারণ কি? 

বৃষ্টির মনের মধ্যে হাহাকার চললেও মুখে যথাসম্ভব হাসি বজায় রেখে সবার সাথে আলাপ বিনিময় করছে। কিন্তু চোখ শুধু দেখছে আকাশকে। কথায় কথায় হাসিতে ফেটে পড়ছে,আর বারবারই মেঘলার গায়ের সাথে প্রায় ধাক্কা খায় খায় অবস্থা।

সীমা এসে ইংগিত করলো,, 
বাহ,,আকাশ ভাই ত দারুণ রসিক। মেঘলার সাথে কি আগেও পরিচয় ছিলো নাকিরে?
বৃষ্টি অন্যভাবে সেটা এড়িয়ে গেলো। বন্ধুমহলে বৃষ্টির একটা ইমেজ যে আছে,তা ওই বেটা আকাশের মাত্রাতিরিক্ত খোশগল্পের কারণে আরও কে কি বলে ফেলে বলা যায়না।

বৃষ্টি গিয়ে মেঘলাকে ডেকে অন্য বন্ধুদের মাঝে নিয়ে এলো। আকাশও পেছনে পেছনে আসছে দেখে বৃষ্টির মেজাজ গরম হয়ে গেলো। সে পেছন ফিরে স্বাভাবিকতা বজায় রেখে রফিকদের টেবিল দেখিয়ে আকাশকে বললো,,  তুমি ওদের সাথে গিয়ে আলাপ করো। আমরা বান্ধবীরা কিছু ছবি তুলবো। আকাশের তখন মনে হলো 
আরে তাইতো,,, একটু দাঁড়াও,আমি একটা ছবি তুলে নেই তোমাদের সাথে।
নিজের মোবাইল ক্যামেরায় আকাশ ছবি তুললো। আকাশ যে ছবিও তুলতে জানে,সেটাও বৃষ্টির কাছে বিরাট বড় বিষ্ময়।

অনেক রাত হলো বাসায় ফিরতে। বৃষ্টির চেয়ে আজ আকাশই বেশি জম্পেশ আড্ডা দিলো। এটা বৃষ্টির পার্টি। ইচ্ছে না থাকলেও আকাশকে নিয়ে আসতে হয়েছে। অথচ আকাশ কোনো পার্টিতেই বৃষ্টিকে নিয়ে যায়না।

পার্টিতে যাওয়ার সময় সারা রাস্তা চুপচাপ থাকলেও ফেরার সময় আকাশের বুক,চোখ,মুখ,ঠোঁট চিঁড়ে শুধু মেঘলার গল্পই এলোমেলো হয়ে বৃষ্টির কানে প্রবেশ করছে। যে লোক নিজের স্ত্রীর দিকে ভালো করে তাকায়ই না,সে অনবরত অন্য নারীর একটা না একটা দিক নিয়ে ঢাক ঢাক গুড় গুড় করেই চলেছে।

আর বৃষ্টি,??,,, গাড়ির কাঁচে একবার নিজেকে দেখে,
আরেকবার দৃষ্টি প্রসারিত করে বাইরের দিকে আঁধারেও দেখে মেঘলা আকাশ।।।।।

লেখক: কবি ও কথা সাহিত্যিক

সম্পর্কিত বিষয়: