বঞ্চিত কৃষক
(২য় পর্ব)
ফজর আলী যুক্তি খোঁজে। গরীবের যুক্তি তেমনই হয়। কী অহংকার সাহেবদের। পরজীবী লতার মতো। নিজের খাবার জোগাড়ের সুযোগ নেই। তবে টাকায় সব ভোগ করে। টাকা এক মোহনীয় শক্তির নাম! টাকা এক আলাদীনের চেরাগ। ইচ্ছে করলেই সব হয়ে যায়। এই সমাজে যার আছে প্রচুর টাকা আছে। যার নেই কিছুই নেই। তবুও বঞ্চিত মানুষগুলো ভাগ্য বলে সব মেনে নেয়। জীবন যুদ্ধে পরাস্ত মানুষগুলো ভাগ্যে সান্ত্বনা খোঁজে। কথায় বলে,‘পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি’। তবে হাড়ভাঙা খাটুনি দিয়েও কৃষকের ভাগ্য কি ফিরে? অবশ্যই না!
কৃষকের সন্তান সহজে কৃষক হতে পারে। সাহেব হওয়া কঠিন। হয় মাঝে মধ্যে। পার্সেন্টেজ খুবই কম। কৃষিকাজও একটা শিক্ষা। সবাই কৃষিকাজ পারে না। কখন কোন ফসল, কোন জমিতে লাগাবে; তা একমাত্র কৃষকই ভালো বুঝে! এর মধ্যে ঝড় বৃষ্টি খরার ধারণা অভিজ্ঞতার বিষয়। বারোমাসি বীজ দিয়ে বারোমাসি ফসল ফলানো খুব কঠিন। সীজনাল সবকিছু সহজ। একটু অগ্রীম ফসল লাভজনক। কৃষক হিসেবে চেষ্টা করে ফজর আলীও। দুটো পয়সা বেশি আসলে সখিনার মুখে হাসি থাকে।
ফজর আলী মেঘনার চরের কৃষক। নামে চর হলেও কবে চরের সৃষ্টি তা সে কেনো, কেহই জানে না। তবে চর এটা নিশ্চিত। চারপাশে নদী বেষ্টিত। চরের মাটি বেলে দোআঁশ। খুব সহজে ফসল হয়! বাঙি, শশা, আলু, উস্তা ভালো জন্মে। ফজর আলী মেঘনার চরের কৃষক। বিচিত্র ফসল ফলায়। কিন্তু ভাগ্য পাল্টায় না! দারিদ্র্যের দুষ্টচক্রের মতো।
ফজর আলীর বাবা একটা বাড়ি এবং কিছু চাষের জমি দিয়ে গেছে। সখিনার কারণে অল্পকিছু জমিও কিনেছে। সখিনা আত্মাকে না দিয়ে সংসারকে দেয়। তাদের ছেলেমেয়ের পড়ার মাথা ভালো। ভালোভাবে পাস দিয়ে দুজনেই হাইস্কুলে। ছেলের মাসে মাসে বেতন লাগে। মেয়ের লাগে না। প্রকৃতিতে নারীর কদর বেশি। একটা মুরগিকে মানুষ বেশি যত্ন করে। একটা স্ত্রী গাছকে বাঁচিয়ে রাখে। প্রকৃতিতে পুরুষ সুন্দর। স্ত্রী কুৎসিত। নারী সাইজে বড়! নারী সৃষ্টিগতভাবে চর্বি ধারণ করে। মুরগি জবাই করলে বুঝা যায়। মানব সমাজে নারী উপেক্ষিত। মেয়ের জন্ম হলে সবাই মন খারাপ করে। (চলবে,,,)
লেখক: কবি, কথাসাহিত্যিক ও গীতিকার