Advertisement

আসমা সরকার


প্রকাশিত: ০০:৩১, ৫ জানুয়ারি ২০২৫

আকাশের চোখ 

আকাশের চোখ 
ছবি: সবার দেশ

(৩য় পর্ব)

বৃষ্টি রাতেই মনস্থির করে রাখলো সকালে ঘুম থেকে উঠেই মায়ের বাসায় যাবে। কেনো যাবে সে বিষয়ে আকাশকে কিছুই বলবেনা। জিজ্ঞেস করলেও নিরুত্তর থাকবে। যেহেতু পার্টি থেকে ফিরে অনেক রাত হয়েছে ঘুমুতে ঘুমুতে,উঠতে দেরিই হবে। যদি ঘুমিয়ে থাকে জাগাবেনা। উঠে যখন বৃষ্টি বৃষ্টি বলে ডাকাডাকি করে সাড়া না পাবে,তখন নিশ্চয়ই একটু হলেও ধাক্কা খাবে মানসিকভাবে!

বৃষ্টি অনেকরকম আকাশ পাতাল ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়েছিলো মনে পড়ছেনা। জেগে দেখে অনেক বেলা হয়ে গেছে। রান্নাঘরে ছুটা বুয়ার হাড়িপাতিল ধোয়ার টুংটাং শব্দ শুনে রান্নাঘরের দিকে গেলো। জিজ্ঞেস করলো,, 
কুলসুম কখন এলে??
- ভাইজান বাইর হইলো যহন তহনই আইছি আফা।
তোমার ভাইজান নাস্তা করে যায়নি?
- হেইডা আমি কেমনে কমু? আমারে কইলো,দরজাটা বন্ধ করতে। আমার বাসন মাজার কাম বাসন মাইজ্জা কুন সময় যামু হেই চিন্তায়ই বাছিনাগো আফা। তয় আইজকা বাসন কোসন কম ক্যা? রাইতে খাননাই আফনেরা? তাইলে ঘর মুইচ্ছা দেই?

কুলসুমকে এক কথা জিজ্ঞেস করলে দশটা উত্তর দেয়। অন্য সময় বৃষ্টি মৃদু ধমক লাগায়। আজ কিছুই না বলে রুমে চলে এলো। আকাশকে মানসিক ধাক্কা দিতে গিয়ে নিজেই ধাক্কা খেলো। কুলসুমের বকবকানি কানের গোড়া পর্যন্ত আসেনি। 

আকাশ অফিসে গেলো,অথচ ডাকলোনা কেনো? ভুলে গেছে নাকি ঘুম ভাঙাতে চায়নি? কিন্তু সে তো এতো দরদীও না। নাস্তা রেডি করার জন্য সমানে ডাকতে থাকে। বলে, আমাকে বিদায় দিয়ে তারপর ঘুমাও বা যা খুশি করো। এই নিয়ে বৃষ্টি  অনেক বিরক্ত হলেও কাজ হয়নি। কতোবার বলেছে, একবার ঘুম ভাঙলে কি আর ঘুমানো যায়? আকাশ পাত্তাও দেয়নাই এসব কথায়। কাজেই ঘুম না ভাঙানোর মানুষ সে নয়।

বুয়ার কাজ আর বৃষ্টির ব্যাগ গুছানো একসাথেই শেষ হলো।  কুলসুমের হাতে ব্যাগ টা দিয়ে দরজায় তালা দিলো। নিচে দারোয়ানের কাছে চাবি দিয়ে বললো, আকাশ এলে যেনো দেয়। কুলসুমকে দিয়ে একটা রিকশা ডেকে নিলো। অন্যসময় হলে আকাশকে গাড়ি পাঠাতে বলতো। কিন্তু আজ বলবেনা, কিছুই বলবেনা।

রিকশায় বসে হুড তুলে দিলো বৃষ্টি। আলো বাতাসের কাছ থেকেও আজ নিজেকে আড়াল করার প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছে সে। কিন্তু মা! মা ঠিকই বুঝে ফেলবে।

বৃষ্টির কি ধারা! হাজারটা প্রশ্ন করে করে অস্থির করে তুলবে। এমনভাবে একা কখনো যায়নি। আকাশ নামিয়ে দিয়ে এসেছে, ফেরার সময় নিয়ে এসেছে। আজ আকাশ এলোনা কেনো? নিতে আসবে নাকি?বাসায় না ফিরতে দেখলে বলবে, আকাশকেও চলে আসতে বল।

ওফ!বিয়ের পর এ এক মহা যন্ত্রণা! ইচ্ছে করলেই বাবার বাড়ি যখন তখন যাওয়া যায়না, ইচ্ছে করলেই দিনের পর দিন থাকা যায়না। ঘরের মানুষ বাইরের মানুষ সবাই আড়চোখে তাকায়। বিয়ের পর স্বামীর ঘর নাকি মেয়েদের আসল ঠিকানা। কিন্তু গতরাত থেকে মনে হচ্ছে মেয়েদের আসলে কোনো ঠিকানা-ই নাই। এখন যাচ্ছে মায়ের বাসায়। দুইদিন পরে ফিরে যদি আসে তবে স্বামী আকাশের বাসায় আসবে সে।

মনে পরলো মেঘলার কথা।
বেশ ভালো আছে মেঘলা। একা একা একটা ফ্ল্যাট নিয়ে থাকে। ভালো চাকরি করে। যখন খুশি দেশের বাইরে যায়, বন্ধুবান্ধব নিয়ে হৈচৈ করে সময় কাটায়,দাওয়াত পার্টি দেয়,যায়। কি চমৎকার ভাবে গুছিয়ে নিয়েছে নিজের জীবনটাকে। কতো ছেলে পুরুষ ওর প্রতি আকৃষ্ট হয় বিনা দ্বিধায়। 

আসলে প্রতিটা মেয়েকেই স্বাবলম্বী হতে হবে। স্বাবলম্বী হলেই আকাশের মতো পুরুষদের নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরানো সম্ভব। তা না হলে হুল ফোটানো কথাবার্তায় কষ্টেরা হৃদয় ভাঙে প্রতিদিন প্রতিক্ষণ পিনপতন নীরবতায়। (চলবে,,,)

লেখক: কবি ও কথাসাহিত্যিক