Advertisement

আসমা সরকার


প্রকাশিত: ০০:১৫, ১২ জানুয়ারি ২০২৫

আকাশের চোখ 

আকাশের চোখ 
ছবি: সবার দেশ

(৪র্থ পর্ব)
 
বাড়ির গেইটে এসে রিকশা থামলেও বৃষ্টির ভাবনাগুলো  এলোমেলো হয়ে ভাবনায় ঘুরপাক খাচ্ছে। রিকশাওয়ালাকে ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে বাড়িটার দিকে তাকাতেই মনে হলো বাবা বারান্দা থেকে দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে আনন্দের সাথে বৃষ্টিকে অভ্যর্থনা জানাচ্ছে। বৃষ্টিও নিজের অজান্তেই হাসলো। এই বাড়িটায় বৃষ্টি,শিলা,আর সাগর এই তিন ভাইবোনকে নিয়ে বাবা মায়ের দীর্ঘ একটা সময় কেটেছে। কিন্তু মাঝপথে থেমে গেলো বাবার জীবন চাকা। কোথা থেকে কেমন করে কি হয়ে গেলো তা আজও অবিশ্বাস্য। 

আকাশের সাথে বিয়ের সময় বাবার সেকি আনন্দ।। চারজনকে একসাথে নিয়ে ছবি তুলছিলো আর বলছিলো,শিলা,বৃষ্টি, সাগর,আকাশ,,,পুরো পৃথিবীটাই আমার। আহ, বাবা! পুরো পৃথিবীটাকে শুণ্যে ভাসিয়ে দিয়ে নিরবে চলে গেলে নিজের পৃথিবীতে। হঠাৎ বুকে ব্যথা,দ্রুত হাসপাতাল,তারচেয়ে দ্রুত শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ। 

চাপা কষ্ট বুকে তোলপাড় হলে বৃষ্টি দ্রুত গেইটে কলিং বেল চাপলে দারোয়ান এসে গেইট খুলে সালাম দিয়েই  আপামনি বলে আকর্ণ হাসি হাসলো। বৃষ্টি সালামের জবাব দিয়ে আর কোনো কথা না বলতে দিয়ে বাড়ির ভেতরে চলে গেলো।

বাবার নিয়োগ দেয়া দারোয়ান, অনেক বছর ধরে বৃষ্টিদের বাড়িতে থাকে। পরিবারের একজন সদস্যের মতোই। প্রশ্ন শুরু করবে, দুলাভাই আসেনাই? রিকশা কইরা আসলেন ক্যান? গাড়ি কি হইছে? শরীর ঠিক আছে ত? ইত্যাদি ইত্যাদি।

বাড়ির ভেতরেও অনেক প্রশ্নের জন্য তৈরী হয়ে বাসার কলিং বেল চাপলো। কি অদ্ভুৎ! যে ঘরের দরজা এক সময় বৃষ্টির খোলার অধিকার ছিলো, এখন আরেকজন এসে না খুলে দিলে ভেতরে প্রবেশ করার সাধ্য তার নাই।
দরজা খুলেই শিলা ঝুপঝাপ বৃষ্টির গলা জড়িয়ে ধরে হৈচৈ শুরু করে দিলো,,
,,,,,,ইয়েএএএএ,,,আমার স্বপ্ন সত্যি হয়েছে এএএএ।
বৃষ্টি অবাক হলো,,,
কিসের স্বপ্ন?
,,,,,,,,,আমি গতরাতে স্বপ্নে দেখেছি তুই এসছিস। আমার জন্য এত্তগুলা কিটক্যাট নিয়ে এসছিস!
বলেই বৃষ্টির ব্যাগ টেনে ভেতরে নিয়ে খুঁজতে লাগলো। বৃষ্টি ছোট বোনের পাগলামি দেখে নিজের মনোকষ্ট লুকিয়ে হাসলো,,,বললো,,, 
আরে পাগল,,,সব স্বপ্ন কি সত্যি হয়?
,,,,,,কিন্তু তুই এসছিস,এটাতো সত্যি হলো,,
বিজ্ঞের মতো বৃষ্টি ভাব ধরে বললো,,,
তোর স্বপ্নের আমাকে তো চকলেটের কথা বলা হয়নাই।
তাই? অইটুকু রিল থেকে কাটা পড়ে গেছে।

দুই বোনের কথার মাঝখানে শায়লা চৌধুরী এসে বৃষ্টিকে দেখে খুশি হলেও বিষ্ময় প্রকাশ করলেন,
কি রে মা,,, আজকে যে আসবি, কিছু ত বলিসনি। জামাই কোথায়? নামিয়ে দিয়ে চলে গেছে নাকি আসতেছে?
বৃষ্টি মায়ের কথায় সামান্য চটে গেলো,,,, 
কি আশ্চর্য! আমি যখন খুশি আসবো যাবো, তা দরখাস্ত দিয়ে আসতে হবে আম্মা? আর যখনই আসবো জামাই জামাই করে এমন একটা ভাব দেখাও যেনো, জামাই বেটাই এখন আমার মূল সনদপত্র। আমি এসছি আমার সারটিফিকেটগুলা নিতে। এখনি চলে যাবো।
 
শায়লা চৌধুরী মেয়ের কথায় কিছু একটা আঁচ করলেন। মায়েদের চোখ আর অন্তর হচ্ছে পৃথিবীর সেরা অণুবীক্ষণ যন্ত্র। সন্তানের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয়গুলো অতি সহজেই ধরা পড়ে সেই যন্ত্রে। আস্তে আস্তে মেয়ের পাশে এসে বসলেন। পিঠে হাত রাখলেন। মায়ের স্পর্শে বৃষ্টির ইচ্ছে হচ্ছে অঝোরে মায়ের বুকে ঝরঝর করে ঝরে পড়ে। কিন্তু সেটা না করে ওয়াশরুমের বাহানায় উঠে ওয়াশরুমে চলে গেলো।  শীলা তার মায়ের দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।

বৃষ্টি চোখেমুখে পানির ঝাপটা দেয় কষ্টগুলো ধুয়ে ফেলার চেষ্টায়। এ কষ্ট এমনসব কষ্ট যেগুলো বলে বুঝানো যাবেনা,,,অথচ বয়ে বেড়ানোও অসহ্য! (চলবে,,,)

লেখক: কবি ও কথাসাহিত্যিক