Advertisement

মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান


প্রকাশিত: ০০:২৭, ১২ জানুয়ারি ২০২৫

সাহিত্যে চৌর্যবৃত্তি ও তার প্রতিকার

সাহিত্যে চৌর্যবৃত্তি ও তার প্রতিকার
ছবি: সবার দেশ

প্রযুক্তির উৎকর্ষতার যুগে মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক সৃষ্টিকর্মগুলো একদিকে যেমন সহজে প্রকাশ এবং প্রচারের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে অন্যদিকে কিছু হীন চরিত্রের মানুষ দ্বারা এইসব মেধাসম্পদ চুরির পথ সুগম হয়েছে।

আজকাল প্রায়শই দেখা যায় একই লেখা একাধিক ব্যক্তির নামে প্রকাশ হচ্ছে। বিশেষ করে ফেইসবুকে কবিতা হুবহু অথবা সামান্য দুয়েকটি লাইন বা কয়েকটি শব্দ এদিকসেদিক করে দেদারসে প্রকাশ করে যাচ্ছে। এটা যে আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ তা বুঝে বা না বুঝে লেখক হিসেবে নিজের নাম জাহির করতেই মূলত এই হীন কাজটি করছে। অনেকে কৌশল করে নিজের নামটি লেখক নাম হিসেবে ব্যবহার করে না এটা যেমন সত্যি, লেখাটির আসল মালিক কে সেটাও উল্লেখ করে না এটাও সত্যি। এর কারণ হলো ধরা পড়লে 'সংগৃহীত' কথাটি লিখতে ভুলে গেছি বলে সরল স্বীকারোক্তি দিয়ে দায়মুক্ত হতে চায়। আর ধরা না পড়লে তার হয়ে যায়। ভালো লিখেছেন,  দারুণ লিখেছেন,  অসাধারণ হয়েছে এসব মনোগ্রাহী মন্তব্য পেয়ে দ্বিগুণ উৎসাহে এই কৌশলে এহেন
চৌর্যকর্ম চালাতে থাকে। তবে এটাও মনে রাখতে হবে যে, একটি কবিতার বিষয়বস্তু বা ভাবের সাথে অন্য একটি কবিতার বিষয়বস্তু কিংবা ভাবের মিল অথবা কিছু শব্দের মিল থাকলেই সেটাকে চুরি বলা যায় না। কবিতার বিষয়বস্তু এক হতে পারে তবে নির্মাণ শৈলী অবশ্যই ভিন্ন হতে হবে। যেমন-

"মৃত গোলাপটির চোখ আমার দিকে চেয়ে স্থির হয়ে আছে
আমি তার চোখের তারায় ভেসে ওঠতে
দেখলাম আমার মৃত্যুর পরোয়ানা।
আমার পরিণতির আগাম বার্তা পাঠ করে
আমি স্মরণ করছি আমার সৃষ্টির সার্থকতা।"

"একটি গোলাপ রূপ সাজিয়ে 
সুবাস দিয়ে
হাসতে হাসতে মরে গেলো।
আমার কাছে বার্তা এলো
আমাকেও মরতে হবে
এই পৃথিবী ছাড়তে হবে
মরার আগে পথের ধুলায়
পায়ের ছাপও রাখতে হবে
নইলে আমি মানুষ ছিলাম
কেমন করে প্রমাণ হবে?"

উভয় ক্ষেত্রে গোলাপকে আশ্রয় করে ভাবের বিস্তার। মানুষ এবং মৃত্যুর বার্তা। তবে নির্মাণ শৈলীর কারণে তাদের অঙ্গসজ্জায় পরিবর্তন এসেছে।

এই নির্মাণ দক্ষতাই হচ্ছে কবিত্ব। কারো লেখা হুবহু কপি করে নিজের নামে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে plagiarism বা চৌর্যবৃত্তি। 

সাহিত্যে গড়ে ওঠা চৌর্যবৃত্তির অপসংস্কৃতি প্রতিরোধে লেখকদেরকেই সচেতন হতে হবে। এই চৌর্যবৃত্তি প্রতিরোধের আইনী হাতিয়ার হচ্ছে কপিরাইট নিবন্ধন। কপিরাইট আইন, ২০২৩ এর অধীনে মেধাসম্পদ হিসেবে কপিরাইট রেজিস্ট্রশন করা থাকলে মূল লেখক তার সৃষ্টিকর্মের সুরক্ষা পাবে এবং কপিরাইট লংঘনের কারণে আইনী প্রতিকার পাবে। কপিরাইট লংঘনকারীর লংঘনের প্রকৃতি অনুযায়ী কারাদণ্ড, অর্থদণ্ড এবং ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য আর্থিক জরিমানার বিধান রয়েছে।

অতএব, লেখকদের সচেতনতার পাশাপাশি আইনী বিড়ম্বনা এড়াতে সাহিত্য চোরদের সংশোধন আবশ্যক। 

লেখক: কবি ও লেখক
০৯-০১-২০২৫