Advertisement

প্রফেসর মো. আমির হোসেন


প্রকাশিত: ০০:৩০, ১২ জানুয়ারি ২০২৫

বঞ্চিত কৃষক

বঞ্চিত কৃষক
ছবি: সবার দেশ

(৩য় পর্ব)

একটা নারীর প্রধান শত্র আরেকটা নারী। শ্বশুর তার ছেলের বউকে যতটুকু স্বাধীনতা দেয়, শাশুড়ি ততটুকু দেয় না। দেবর ভাবিকে যতটুকু আপন মনে করে, ননদ ততটুকু করে না! বউ শাশুড়ি ননদিনীর দ্বন্দ্ব সেই আদিকাল থেকে। একটা বউ তার মায়ের শাসন ঠিকই মানে কিন্তু শাশুড়ির টু শব্দটি সহ্য করে না! একই বয়সী হলেও শাশুড়ি মনে করে তার মেয়েটি খুবই ছোট, কিন্তু ছেলের বউ অকর্মণ্য। তার মা তাকে কিছুই শেখায়নি!

যুগ যুগ ধরে চলছে এই ধারা। নারীর চোখের জল আঁচল ভেজায় গোপনে। খুব কম মেয়ে শ্বশুর বাড়িকে ছোট করে। সহ্য করে সে। মুখে হাসি রেখে বুঝায় সুখে আছে। ফজর আলী কৃষক। গরম ভাত নয় পান্তাভাতই তার নিয়তি। গরম গরম খায় তো সাহেবরা। ভাতের জোগান দিয়েও সে গরম ভাত খায় কম!  পেঁয়াজ মরিচ মেখে খায়! কৃষকের পছন্দ হলো নতুন চালের ভাতের মার মানে ফ্যান। যে একবার মরিচবাটা দিয়ে খেয়েছে, সে জীবনেও সেই স্বাদ ভুলতে পারবে না। অথচ এই খাবার ভদ্রলোক খায় না। বুঝেই না সাধারণ জীবনযাপনে কত সুখ। রিচফুড খেলে অস্বস্তি লাগে। কিন্তু সাধারণ খাবারে লাগে না। কৃষক যে পান্তাভাত খায় তা সাধারণ, তবে সুখকর খাবার। সামর্থ্য নেই বলেই কৃষক সাধারণ খাবার খায়। তবে তা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। রোদ সব শক্তির উৎস। আধুনিক শহুরে মানুষ গায়ে রোদ লাগায় না। তাই তাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম। কিন্তু কৃষকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। রোদই তার কারণ।

রোদে পোড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে। রোদ-বৃষ্টি তার বড় সঙ্গী। ফজর আলী মনে করে, জমি হলো সব। মাটি তার আপনজন। সখিনা সংসারকে মন্দির মনে করে। চেষ্টা করে টাকা খরচ না করে সংসার চালাতে। জমির চাল, বাড়ির পাশ থেকে শাকপাতা তুলে আনে। খুব কম দামি। কিন্তু সতেজ, স্বাস্থ্যকর। এমন সতেজ জিনিস খায়, রোদ বৃষ্টির সাহচর্য নেয়। তাই তো ফজর আলী সুস্থ। তার বাবাও সতেজ ছিলেন। মানুষ মরবেই। প্রাণী মানেই মৃত্যু অনিবার্য। যারা মৃত্যুকে ভয় পায় তারা ভীরু। চিরন্তন সত্যকে এড়ানো যায় না! এই জগতের কেউ টিকে থাকেনি৷ ফজর আলী বাস্তবতা দেখেছে। তবে গোরস্থানের পাশ দিয়ে যাওয়ার সেও দুর্বল হয়ে পড়ে। তার বাবা ও মা এখানেই শায়িত। কল্পনা করে কিন্তু বাস্তবে পায় না। দাদী ফতু মৃত্যুকে খুব ভয় পেতেন। গোরস্থানকেও। সেই ফতু যেদিন মারা যায় কী তুমুল বৃষ্টি। কবরেও পানি জমেছিল। বর্ষাকালে ফতুর মৃত্যু। কোন রকমে শুইয়ে দিয়ে এসেছে জীবিতরা। ফজর আলী ভাবে, বুড়ী কি এখনও ভয় পায়? এখনও কি নাতিকে কাছে চায়? কী জানি! সেই কাল কেউ দেখেনি। পুরোটাই বিশ্বাস। বিশ্বাসেই মানুষ জীবন কাটায়। (চলবে,,,)

লেখক: কবি, কথাসাহিত্যিক ও গীতিকার