Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ সবার দেশ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২১:৩৫, ১৫ এপ্রিল ২০২৫

আপডেট: ২১:৩৬, ১৫ এপ্রিল ২০২৫

জাতীয় গ্রিডে বেড়েছে সরবরাহ, উঠছে স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন

আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুই ইউনিট ফের চালু 

আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুই ইউনিট ফের চালু 
ফাইল ছবি

ঢাকা, ১৫ এপ্রিল ২০২৫: ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের গোড্ডায় অবস্থিত আদানি গ্রুপের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি ইউনিট পুনরায় চালু হয়েছে, যার ফলে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বৃদ্ধি পেয়েছে।

গত শুক্রবার (১১ এপ্রিল) রাতে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে কেন্দ্রটি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। ১৭ ঘণ্টা পর শনিবার (১২ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটে প্রথম ইউনিট চালু হয় এবং মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) বেলা ৩টায় দ্বিতীয় ইউনিট থেকেও উৎপাদন শুরু হয়।

পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশ পিএলসি (পিজিসিবি), বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এবং আদানি গ্রুপের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তারা জানান, ১,৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার এই কেন্দ্রে ৮০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি ইউনিট রয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টায় প্রথম ইউনিট থেকে ৭৩৮ মেগাওয়াট এবং দ্বিতীয় ইউনিট থেকে ৬৩৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়, মোট প্রায় ১,৪০০ মেগাওয়াট। এর আগে, কেন্দ্রটি থেকে সর্বোচ্চ ১,৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছিলো।  

পিডিবির সদস্য (উৎপাদন) মো. জহুরুল ইসলাম জানান, দ্বিতীয় ইউনিট চালুর পর থেকে সরবরাহ বেড়েছে। সন্ধ্যায় আদানির কেন্দ্র থেকে প্রায় ১,৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া গেছে। তিনি আরও বলেন, চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়ানো হচ্ছে, যা লোডশেডিং কমাতে সহায়ক হবে।  

যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে গত ৮ এপ্রিল প্রথম ইউনিট এবং ১১ এপ্রিল দিবাগত রাত ১টায় দ্বিতীয় ইউনিট বন্ধ হয়। এর ফলে শনিবার সারা দিন কোনো বিদ্যুৎ সরবরাহ না হওয়ায় বাংলাদেশে লোডশেডিং বেড়ে যায়। তবে দুটি ইউনিট চালু হওয়ায় সরবরাহ স্বাভাবিক হচ্ছে।  

গোড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যুৎ সরবরাহকারী। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (বিপিডিবি) এবং আদানি পাওয়ার ঝাড়খন্ড লিমিটেডের (এপিজেএল) মধ্যে ২৫ বছর মেয়াদি বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি (পিপিএ) স্বাক্ষরিত হয়, যার আওতায় কেন্দ্রটি ১,৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। এ কেন্দ্রটি অতি-আধুনিক আল্ট্রা-সুপারক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে, যা জ্বালানি ও পানি খরচ কমায় এবং পরিবেশবান্ধব বৈশিষ্ট্য যেমন ফ্লু গ্যাস ডিসালফারাইজেশন (এফজিডি) এবং সিলেক্টিভ ক্যাটালিটিক রিডাকশন (এসসিআর) ব্যবহার করে। 

গোড্ডা কেন্দ্রটি ২০২৩ সালের এপ্রিলে প্রথম ইউনিট এবং জুনে দ্বিতীয় ইউনিটের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে। তবে, এটি বাংলাদেশের জন্য ব্যয়বহুল বিদ্যুৎ সরবরাহের সমালোচনার মুখে পড়েছে। ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিক্স অ্যান্ড ফাইনান্সিয়াল অ্যানালিসিস (আইইইএফএ) অনুসারে, এ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুতের দাম প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টায় প্রায় ৮ মার্কিন সেন্ট, যেখানে ভারতের উন্মুক্ত বাজারে এটি ৩ সেন্টের কাছাকাছি। এছাড়া, অর্থ পরিশোধে বিলম্বের কারণে গত বছর কেন্দ্রটির সরবরাহ কমে যায়, যা বাংলাদেশের ৮০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি বকেয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিল।  

স্থানীয় পর্যায়ে, জমি অধিগ্রহণ নিয়ে বিতর্ক এবং স্থানীয়দের উপর জোরপূর্বক চাপ প্রয়োগের অভিযোগও উঠেছে। ঝাড়খন্ড হাইকোর্টে এ নিয়ে মামলা চলমান রয়েছে।

দুটি ইউনিট চালু হওয়ায় বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ঘাটতি কমার সম্ভাবনা রয়েছে। পিডিবি জানিয়েছে, তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন বাড়ানো এবং পেট্রোবাংলার কাছ থেকে গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধির অনুরোধ করা হয়েছে। এছাড়া, ভারতের বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় গত আগস্টে গোড্ডা কেন্দ্রকে ভারতীয় গ্রিডে সংযোগের অনুমতি দিয়েছে, যা বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং বকেয়ার কারণে আদানির জন্য বিকল্প বাজার হিসেবে কাজ করতে পারে। 

আদানির গোড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি ইউনিট পুনরায় চালু হওয়ায় বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হচ্ছে, যা লোডশেডিং কমাতে সহায়ক হবে। তবে, উচ্চ মূল্য, অর্থ পরিশোধে বিলম্ব এবং জমি অধিগ্রহণ নিয়ে বিতর্ক এ কেন্দ্রের চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে। ভবিষ্যতে ভারতীয় গ্রিডে সংযোগ এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এ কেন্দ্রের ভূমিকা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ হবে।  সূত্র: পিজিসিবি, পিডিবি, আদানি গ্রুপ

সবার দেশ/এমকেজে

সম্পর্কিত বিষয়: