ফের বিশ্বমঞ্চে ড. ইউনূসের বাজিমাত
এক সফরেই পঞ্চাশের বেশি বৈঠক
শেখ পরিবারের জন্য বিদেশ সফর ছিল পারিবারিক পিকনিক। ড. ইউনূস তো আর পিকনিক করার সুযোগ নেন না। তিনি আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব, পুরা পৃথিবীতেই সম্মানিত। তার হাতে দেশ থাকলে এগিয়ে যাবে দেশ।
দেশের ক্রান্তিলগ্নে বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশকে গর্বের সাথে উপস্থাপন করে চলেছেন নোবলজয়ী অর্থনীতিবিদ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক ও কূটনৈতিক অঙ্গনে অন্তর্বর্তী সরকারের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বড় অর্জন করেছে। এবার আন্তর্জাতিক মঞ্চে আরেকটি বাজিমাত করলেন তিনি।
৮৪ বছর বয়সী ড. মুহাম্মদ ইউনূস চার দিনব্যাপী ব্যস্ত সফর শেষে শুক্রবার রাতে (সুইজারল্যান্ড সময়) জুরিখ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে দাভোস থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হচ্ছেন। এবারের সফরে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনে তিনি প্রায় ৫০টি আলোচনা সভা ও বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। ২৫ বছর বয়সী যুবকের মতো তার এ রেকর্ড গড়া সফরের ভুইসী প্রশংসা করেছেন নেটিজেনরা।
এবারের সফরে একদিনেই ১৩টির বেশি বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। এতথ্য জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা এ বৈঠকগুলো সম্পন্ন করেন।
শফিকুল আলম বলেন, প্রধান উপদেষ্টা চট্টগ্রাম বন্দরকে আরও বেশি কার্যক্ষম করতে চান। চট্টগ্রামে বিনিয়োগ ও সহায়তার ব্যাপারে দুটো বৈঠকের ব্যাপারে জানান প্রেস সচিব। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম কার্যক্ষম হলে তা নেপাল, ভুটান, নর্থ ইস্ট ইন্ডিয়া অঞ্চলের জন্যও বড় একটি পোর্ট হিসেবে কাজ করবে।
মেটার সাথে বৈঠক নিয়ে প্রেস সচিব বলেন, বাংলাদেশে ফেসবুকের ফ্যাক্ট চেকিং চালু থাকবে এবং তারা বাংলাদেশে অপতথ্য ছড়ানোর ব্যাপারে অবগত থাকবে। চার দিনের সফরে ২০ জানুয়ারি সুইজারল্যান্ড যান প্রধান উপদেষ্টা।
২০২৫ সালের এ সম্মেলনে বিশ্বের নেতারা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বব্যাপী ও আঞ্চলিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা নিয়ে আলোচনা করেন। এ বছরের সম্মেলনের মূল বিষয় ছিল 'বুদ্ধিমান যুগের জন্য সহযোগিতা'। এ অনুষ্ঠানে ১৩০ টিরও বেশি দেশের প্রায় ৩,০০০ নেতা এবং ৬০ জন রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধান সহ ৩৫০ জন সরকারি নেতা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করে বিরল নজির গড়েন। কেননা সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে কোনো দেশের শীর্ষ নেতার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের তেমন নজির নেই। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এমন বিরল ঘটনা ঘটে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ড. ইউনূসকে কাছে পেয়ে বুকে টেনে নেন। হাতে হাত রেখে বলেন, বাংলাদেশের সংস্কারের যে লক্ষ্য নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ঠিক করেছেন, তাকে বাস্তবে রূপ দিতে সব ধরনের সহযোগিতা করবে হোয়াইট হাউস।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৯তম সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়ে মাত্র চারদিনের সফরে বাংলাদেশের সরকার প্রধান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোসহ ১২টি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং সাইডলাইনে ৪০টি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকেও অংশ নেন।
ঢাকার কূটনীতিকরা বলছেন, নানা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে বাংলাদেশের এক প্রকার সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছিল। ড. ইউনূসের নিউইয়র্ক সফরে সে সংকট অনেকটাই কেটে যায়। বিশেষ করে গণতন্ত্র, মানবাধিকারসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বাংলাদেশের যে ভাবমূর্তি সংকট ছিল, সেটা কাটানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
ড. ইউনূসের প্রশংসা করে নেটাগরিকরা লিখেছেন, এগিয়ে যান ড. ইউনূস। অফুরন্ত ভালোবাসা। তিনি একজন আলোকিত মানুষ, তিনি আলো ছড়াবেন এটাই স্বাভাবিক। আমরা কতটুকু আলো ধারন করতে পারবো সেটাই দেখার বিষয়। উনার এ বয়সে অনেক এনার্জি। বাংলাদেশের গর্ব।
শেখ পরিবারের জন্য বিদেশ সফর ছিল পারিবারিক পিকনিক। ড. ইউনূস তো আর পিকনিক করার সুযোগ নেন না। তিনি আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব, পুরা পৃথিবীতেই সম্মানিত। তার হাতে দেশ থাকলে এগিয়ে যাবে দেশ।
সবার দেশ/এমকেজে