Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ সবার দেশ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০০:১৫, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

আপডেট: ০০:২১, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

র‍্যাব বিলুপ্তিকরণে জাতিসংঘের সুপারিশ

র‍্যাব বিলুপ্তিকরণে জাতিসংঘের সুপারিশ
ফাইল ছবি

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র‌্যাব) বিলুপ্ত করুন এবং এবং গুরুতর লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত নন, এমন কর্মীদের নিজ নিজ ইউনিটে ফিরিয়ে দিন। বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের প্রকাশিত প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। ২০২৪ সালে জুলাই-আগস্টে গণ-অভ্যুত্থানে বাংলাদেশে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশন (ওএইচসিএইচআর)। এতে সরকারকে নানা সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।

প্রতিবেদনে পুলিশ ও নিরাপত্তা বিভাগে বলা হয়, আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের নিয়মাবলি এবং মানদণ্ডের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ বাংলাদেশের পুলিশ প্রবিধানগুলোকে সংশোধন করা প্রয়োজন। এ সংশোধনীর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকবে বল প্রয়োগসহ, জনসমাগম ছত্রভঙ্গ করার জন্য ধাতবগুলো বা অন্যান্য প্রাণঘাতী গোলাবারুদ ব্যবহার সম্পর্কিত নির্দেশনা, যা আসন্ন মৃত্যু বা গুরুতর হুমকির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা দেবে। অবিলম্বে জনশৃঙ্খলা ব্যবস্থাপনার কৌশল হিসেবে শর্টগানের জন্য ধাতব শর্ট, গোলাবারুদ দিয়ে পুলিশ এবং অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীকে সজ্জিত করার চর্চা বন্ধ করুন।

সামরিক ও আধা সামরিক বাহিনীকে বর্মবিদ্ধ গোলাবারুদ দেয়া সীমিত করার কথা জানিয়ে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন। তাদের সুপারিশ, এগুলো সংস্কার করুন এবং পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করুন। সেখানে কীভাবে কম প্রাণঘাতী কৌশল ও সরঞ্জাম ব্যবহার করে বিক্ষুব্ধ জনগণকে শান্ত করা এবং যোগাযোগমূলক পদ্ধতির ওপর জোর দেয়া, যা শান্তিপূর্ণ সমাবেশকে সহজ করে এবং যেখানে প্রয়োজন হয় কম প্রাণঘাতী কৌশল, অস্ত্র ও গোলাবারুদ ব্যবহার করা যায়, সে সবের চর্চা করতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

ওএইচসিএইচআর জানায়, গণ-অভিযোগ ও গণগ্রেফতারের অনুশীলন বন্ধ করার জন্য পুলিশকে বাধ্যতামূলক আদেশ জারি ও প্রয়োগ করুন। বিশেষ করে অপ্রমাণিত ও সন্দেহভাজন তালিকার ওপর ভিত্তি করে গণগ্রেফতার করা হয়। ওয়ারেন্টেড, মিথ্যা অভিযোগে নির্বিচারে গ্রেফতারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ও ফৌজদারি বিচারের ব্যবস্থা করুন।

নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিষেধ) আইনের সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার জন্য বাধ্যতামূলক আদেশ জারি ও প্রয়োগ করার কথা বলেছে ওএইচসিএইচআর। আরও বলা হয়, একটি স্বাধীন নির্যাতন প্রতিরোধ এবং আটক পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম চালু করুন। এবং নির্যাতনের বিরুদ্ধে কনভেনশনের ঐচ্ছিক প্রোটোকল স্বাক্ষরের জন্য বিবেচনা করুন। পুলিশের তদন্ত কৌশল, আদেশ, প্রচলিত ধ্যানধারণা দূর এবং ফরেনসিকসহ জোরজবরদস্তি ছাড়া কীভাবে সাক্ষাৎকার নেয়া যায়, তার কৌশল ও অন্যান্য পদ্ধতি যা জোরপূর্বক স্বীকারোক্তির আদায় এবং নিপীড়ন প্রতিরোধের সহায়তা করে, এমন বিষয়গুলোর ওপর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, খসড়া ২০০৭ পুলিশ অধ্যাদেশের ওপর ভিত্তি করে, ১৮৬১ সালের পুলিশ আইনের পাশাপাশি মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশগুলোকে আইন দিয়ে প্রতিস্থাপন করুন, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের নিয়ম এবং মানগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জননিরাপত্তা এবং জনসংখ্যার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পুলিশের ভূমিকার ওপর জোর দেয়। এটিকে পুলিশে দুর্নীতির মূলোৎপাটন, গুরুতর অসদাচরণের জন্য জবাবদিহি নিশ্চিত করতে এবং ধীরে ধীরে পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করবে।

সুশীল সমাজসহ সরকার, বিরোধী দল ও স্বাধীন সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত একটি জাতীয় পুলিশ কমিশন গঠন করুন, যার নেতৃত্বে একটি ন্যায্য, স্বচ্ছ ও যোগ্যতাভিত্তিক পুলিশ নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি ও অপসারণ প্রক্রিয়া চালু করতে উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে।

আরও পড়ুন<<>> আওয়ামী লীগ গণঅভ্যুত্থানে নৃশংসতা চালিয়েছিলো: জাতিসংঘ

বিশ্ব সংস্থাটি বলছে, স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের মাধ্যমে পুলিশ ওভারসাইট ইউনিটকে প্রতিস্থাপন করুন, যা স্বরাষ্ট্র বা বাংলাদেশে পুলিশের চেইন অব কমান্ডের বাইরে থাকবে। এটি সুশীল সমাজসহ স্বাধীন সদস্যদের নিয়ে গঠিত হওয়া উচিত এবং একটি পাবলিক অভিযোগ নিরসনে সংস্থা হিসেবে কাজ করার জন্য বিশেষায়িত কর্মী, ক্ষমতা ও আইনি ক্ষমতা থাকতে হবে। কোনো পুলিশ কর্মীদের দ্বারা মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং অন্যান্য গুরুতর অসদাচরণের বিষয়ে এটির নিজস্ব কার্যকর তদন্ত পরিচালনা করার এখতিয়ার থাকবে। মামলাগুলোকে বিচারের জন্য রেফার করবে। একইভাবে সশস্ত্র বাহিনী এবং বিজিবি সদস্যদের দ্বারা ক্ষমতার অপব্যবহার রোধে জবাবদিহি এবং বিচার বিভাগ সংস্কার করুন।

বিজিবির কাজগুলোকে সীমানা নিয়ন্ত্রণের সমস্যা সমাধানে এবং ডিজিএফআইকে সামরিক গোয়েন্দা তৎপরতার মধ্যে সীমাবদ্ধ করুন এবং সে অনুযায়ী তাদের সংস্থান এবং আইনি ক্ষমতা সীমায়িত করুন। আনসার/ভিডিপির ওপর সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ রোধ করুন এবং তাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে সহায়ক হিসেবে কাজে লাগান।

অধ্যাদেশ পাস করার বিষয়ে কমিশন বলেছে, বিশেষ পরিস্থিতিতে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের শুধু সীমিত সময়ের জন্য অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার কাজে নিযুক্ত করা যেতে পারে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এ সংক্রান্ত একটি অধ্যাদেশ পাস করুন। আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ এবং তাদের অনুমোদন সাপেক্ষে জনগণের কাছে তাদের নিয়োগ স্বচ্ছতার ভিত্তিতে করা যেতে পারে।

আন্তর্জাতিক ও সুশীল সমাজের মতামতের ভিত্তিতে একটি ব্যাপকভিত্তিক স্বাধীন এবং ন্যায্য যাচাই অনুসরণের মাধ্যমে পুলিশ, গোয়েন্দা, বিজিবি, আনসার ভিডিপি এবং সশস্ত্র বাহিনীর যেসব কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন বা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, তাদের পদ থেকে অপসারণ করুন।

ওএইচসিএইচআরে প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতিসংঘ শান্তি মিশন বা অন্যান্য আন্তর্জাতিক মিশনে নিয়োজিত কোনো বাংলাদেশি কর্মী যাতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার, মানবিক বা শরণার্থী আইন লঙ্ঘন বা যৌন হয়রানি বা অপব্যবহারের অভিযোগে অভিযুক্ত না হন, তা নিশ্চিত করার জন্য একটি কার্যকর ও শক্তিশালী স্বাধীন মানবাধিকার স্ক্রিনিং ব্যবস্থা গড়ে তুলুন। এ ধরনের একটি স্ক্রিনিং ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত সরকারের উচিত জাতিসংঘের শান্তি অপারেশন বিভাগের সঙ্গে একমত হওয়া যে সামরিক বা পুলিশ সদস্য যারা র‌্যাব, ডিজিএফআই বা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখা অথবা বিজিবি ব্যাটিলিয়ানের সঙ্গে যুক্ত এবং ২০২৪ সালের মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তাদের জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনের জন্য মনোনীত করা হবে না।

সবার দেশ/এমকেজে