Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ সবার দেশ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০০:৪৯, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

আপডেট: ০১:২৩, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ফ্রান্স ২৪ শো তে জুলাই বিপ্লব পিনাকীর সাক্ষাৎকার

ফ্রান্স ২৪ শো তে জুলাই বিপ্লব পিনাকীর সাক্ষাৎকার
ছবি: সংগৃহীত

মানবাধিকার কর্মী, ব্লগার এবং সমাজসেবী  পিনাকী ভট্টাচার্য সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) ফ্রান্স ২৪ এর শোতে বাংলাদেশের বিপ্লব নিয়ে কথা বলেছেন। পিনাকী ভট্টাচার্যকে বর্তমান বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সংগ্রামের একজন গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হিসেবে উল্লেখ করে চ্যানেলটি। 

জাতিসংঘ গত সপ্তাহে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের সরকারের অধীনে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং আন্দোলনকারীদের ওপর ব্যাপক সহিংসতার রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। জাতিসংঘের রিপোর্টে বলা হয়েছে, আগস্ট মাসে শেখ হাসিনার সরকার পতিত হয় এবং ১৪০০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারায়। এ ঘটনাগুলিকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের চরম উদাহরণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।এ রিপোর্টটি প্রকাশিত হওয়ার পর, বাংলাদেশে বর্তমান পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। 

প্রতিবেদক বলেন,পিনাকী ভট্টাচার্যের ইউটিউব চ্যানেলটি ৩০ লক্ষেরও বেশি অনুসারী নিয়ে এক অবিস্মরণীয় সাফল্য অর্জন করেছে। পাশাপাশি, তিনি তার নতুন বই ‘ফুলকমারি’ এর মাধ্যমে বাংলাদেশের সমাজ এবং জনগণের সংকটকে বিশ্বদরবারে তুলে ধরছেন।

প্রতিবেদক পিনাকী ভট্টাচার্যের কাছ থেকে জানতে চান গত বছরের ছাত্রদের প্রতিবাদের পেছনের কারণ এবং এর মধ্যে যে উত্তেজনা ছিল, সে সম্পর্কে।

পিনাকী ভট্টাচার্য বলেন, গত ১৬ বছর ধরে দেশে স্বৈরশাসনচলে আসছিলো, যেখানে জনগণের মতামতকে একদম অগ্রাহ্য করা হয়েছে। নির্বাচনের ব্যবস্থাও পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে এবং রাজনীতির মাঠে এক ধরনের শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ছাত্ররা যখন এ অবিচারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আসে, তখন তারা শুধু নিজের জন্য নয়, বরং পুরো জাতির জন্য আওয়াজ তুলেছিলো। এ ছিল গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার সংগ্রাম, যা আজও চলছে।

পিনাকী আরও বলেন, রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে গিয়েছিলো। সরকার ক্ষমতায় থাকতে গিয়ে সহিংসতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের মাধ্যমে শত শত মানুষকে হত্যা করেছে। সে সময় গোপন কারাগার ছিলো এবং প্রথমে আমরা ভেবেছিলাম একটি কারাগার রয়েছে, কিন্তু পরে জানলাম যে, সেখানে কয়েক শতাধিক গোপন কারাগার ছিলো।

প্রতিবেদক বলেন,বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি কি আজকের দিনেও একই রকম সংকটপূর্ণ কিনা  বিশেষ করে জাতিসংঘের রিপোর্টের পর।

পিনাকী জানান, জাতিসংঘের রিপোর্ট তাকে অবাক করেনি। বাংলাদেশে যা ঘটেছে, তা বিশ্বের সামনে এক নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। এ রিপোর্টের মাধ্যমে বোঝা যায় শুধু জনগণের অধিকার নয়, তাদের জীবন রক্ষার সংগ্রামও চলছিলো। কিন্তু সরকারের অবৈধ শাসন-ব্যবস্থা দেশের সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে, এমনকি বিচার বিভাগের স্বাধীনতাও লুণ্ঠিত হয়েছে। এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়া অত্যন্ত জরুরি।

প্রতিবেদক জিজ্ঞেস করেন,বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের অবস্থা নিয়ে কতটুকু আশাবাদী হওয়া যায়? বাংলাদেশ এখন ড. মুহাম্মদ ইউনুসের পরিচালিত অন্তর্বর্তী সরকার দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে, এ সরকার দেশের জনগণের জন্য সত্যিকার স্থিতিশীলতা নিয়ে আসবে কিনা।

জবাবে পিনাকী ভট্টাচার্য বলেন, নানা চ্যালেঞ্জ তো রয়েছেই। গত ১৬ বছরে দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে গেছে, যেমন বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, পুলিশ এবং সেনাবাহিনীও ছিল এর অন্তর্ভুক্ত। এখন, এসব প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠন করা অত্যন্ত জরুরি, কারণ এর মাধ্যমে দেশকে স্থিতিশীল করা সম্ভব।

তিনি যুক্ত করেন, আমাদের দেশের পুনর্গঠন অত্যন্ত জরুরি। নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে সংবিধানে কিছু পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। তবে, পুরো জাতির জন্য গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে নতুন একটি রাজনৈতিক রূপ দরকার, যা আমরা ‘দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র’ হিসেবে ধারণা করি। এক্ষেত্রে, দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠন এবং তাদের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনা অত্যন্ত জরুরি।

পিনাকী ভট্টাচার্যের ইউটিউব চ্যানেল এবং বই ‘ফুলকমারি’ নিয়েও আলোচনা হয় এ আনুষ্ঠানে। ‘ফুলকমারি’ বইটি কীভাবে বাংলাদেশের সামাজিক অবস্থা এবং বর্তমান সংকটকে দেখায় তা নিয়েও বিস্তারিত কথা বলেন পিনাকী ভট্টাচার্য।

তিনি বলেন, ‘ফুলকমারি’ এক অভিবাসী ও একটি ইঁদুরের গল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের সমাজের দুঃখ-কষ্ট এবং সংগ্রামকে তুলে ধরে। এটি কোভিড-১৯ মহামারীর সময় প্যারিসে লেখা হয়েছিলো, যখন সবাই পুরোপুরি ঘরবন্দী ছিলো। গল্পের মধ্যে যে একজন বাংলাদেশি অভিবাসী, তার একাকীত্ব এবং দেশপ্রেম নিয়ে সংগ্রাম করে, তা বাংলাদেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি।

প্রতিবেদক জানতে চান,পিনাকী ভট্টাচার্যের ইউটিউবে বিশাল জনপ্রিয়তা নিয়ে। অনেকেই আপনার চ্যানেল এবং বক্তৃতার প্রতি আগ্রহী। কিন্তু সমালোচকরা মনে করেন যে এটি এক ধরনের পপুলিজম।

পিনাকী ভট্টাচার্য বলেন, আমি মনে করি, আমি যা বলি তা সাধারণ মানুষের সঙ্গে সহজে সংযুক্ত হয়। আমি মানুষের কথা বলি, তাদের ভাষায়। হয়তো কিছু মানুষ এটিকে পপুলিস্ট মনে করেন, তবে আমি বিশ্বাস করি, আমার কাজের মূল উদ্দেশ্য জনগণের জন্য, তাদের উন্নতির জন্য কাজ করা।

টকশোতে সবাই মিলে এক নতুন বাংলাদেশ তৈরি করার আশা ব্যক্ত করেন পিনাকী ভট্টাচার্য, যেখানে প্রতিটি নাগরিকের অধিকার থাকবে নিরাপদ এবং মর্যাদাপূর্ণ।

সবার দেশ/এমকেজে