বিডিআর হত্যাকাণ্ড তদন্তে কমিশন গঠন করে প্রজ্ঞাপন
পিলখানায় সংঘটিত বিডিআর বিদ্রোহে সেনা অফিসার হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) রাতে এ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। সে সঙ্গে এ প্রজ্ঞাপন অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়। কমিশনে একজনকে সভাপতি ও ছয়জনকে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) রাতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। কমিশনকে ৯০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ সাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বিডিআর সদর দফতর পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের নামে সংঘটিত বর্বরতম হত্যাযজ্ঞের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ রিট পিটিশনের প্রেক্ষিতে একটি জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠনের মাধ্যমে পুনঃতদন্তের জন্য নির্দেশনা প্রদান করেছে।
সেহেতু সরকার পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের নামে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে জড়িত দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র ও প্রকৃত ঘটনার স্বরূপ উদ্ঘাটন, ঘটনায় রুজুকৃত দুটি মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তি ব্যতীত ঘটনার ষড়যন্ত্রকারী, ঘটনার সহযোগী, ঘটনার আলামত ধ্বংসকারী, ঘটনা সংঘটনকারী এবং ঘটনা সংশ্লিষ্ট অপরাপর বিষয় ও অপরাধীদের চিহ্নিত করতে একটি জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করল।
প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে, মেজর জেনারেল (অব.) এ এল এম ফজলুর রহমানকে সভাপতি করা হয়েছে। আরও ছয়জনকে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে। সদস্যরা হলেন মেজর জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর কবির তালুকদার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. সাইদুর রহমান (বীর প্রতীক), অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব মুন্সী আলাউদ্দিন আল আজাদ, অবসরপ্রাপ্ত ডিআইজি ড. এম. আকবর আলী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. শরীফুল ইসলাম ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক মো. শাহনেওয়াজ খান চন্দন।
প্রজ্ঞাপন অনুসারে জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের কার্যপরিধি হবে নিম্নরূপ:
(ক) ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বিডিআর সদর দফতর, পিলখানায় সংঘটিত ঘটনার প্রকৃতি ও স্বরূপ উদ্ঘাটন করা;
(খ) ঘটনাকালে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড ও অন্যান্য অপরাধ সংঘটনকারী, সহায়তাকারী, ষড়যন্ত্রকারী, ঘটনার আলামত ধ্বংসকারী, ইন্ধনদাতা এবং ঘটনা সংশ্লিষ্ট অপরাপর বিষয়সহ দেশি-বিদেশি সংশ্লিষ্ট অপরাধী ব্যক্তি/গোষ্ঠী/সংস্থা/প্রতিষ্ঠান/বিভাগ/সংগঠন ইত্যাদি চিহ্নিতকরণ;
(গ) উক্ত ঘটনায় হত্যাকাণ্ডের সময় ও হত্যাকাণ্ডের আগে/পরে সংঘটিত অপরাপর অপরাধের স্বরূপ উদ্ঘাটন, দায়ী ব্যক্তি/গোষ্ঠী/সংস্থা/প্রতিষ্ঠান/বিভাগ/সংগঠন চিহ্নিত করা এবং ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা বা ঘটনা ঘটাইতে সহায়তাকারী অন্যান্য দেশি-বিদেশি ব্যক্তি/গোষ্ঠী/সংস্থা/প্রতিষ্ঠান/বিভাগ/সংগঠনের সম্পৃক্ততা নিরূপণ এবং দোষীদের চিহ্নিতকরণ;
(ঘ) হত্যাকাণ্ডসহ সংঘটিত অপরাপর অপরাধ প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থতার জন্য দায়ী ব্যক্তি/গোষ্ঠী/সংস্থা/প্রতিষ্ঠান/বিভাগ/সংগঠন চিহ্নিতকরণ; এবং
(ঙ) হত্যাকাণ্ডসহ সংঘটিত অপরাপর অপরাধে ইতোমধ্যে দায়েরকৃত মামলা এবং সংশ্লিষ্ট মামলায় অভিযুক্তদের দায়/অপরাধ অক্ষুণ্ন রেখে সংশ্লিষ্ট মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি এমন প্রকৃত অপরাধীদেরকে তদন্ত প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্তকরণ।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, তদন্ত কমিশন বাংলাদেশের যে কোনো স্থান পরিদর্শন এবং সন্দেহভাজন যে কোনো ব্যক্তিকে কমিশনে তলব ও জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে। কমিশন, প্রয়োজনে, উপযুক্ত যে কোনো ব্যক্তিকে কমিশনের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে পারবে।
কমিশনের প্রধান ও সদস্যগণ সরকার কর্তৃক নির্ধারিত সরকারি পদমর্যাদা, বেতন/ সম্মানী ও সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্ত হইবেন; তবে শর্ত থাকে যে, কমিশন প্রধান বা কোনো সদস্য অবৈতনিক হিসাবে দায়িত্ব পালন করতে চাইলে বা সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করতে না চাইলে উহা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদন গ্রহণ করতে পারবে।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন সীমান্তরক্ষী বাহিনী বাংলাদেশ রাইফেলসের (বিডিআর) সদর দফতর পিলখানায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় গত ১৯ ডিসেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদসহ ৫৮ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে অভিযোগ করা হয়। মইন ইউ আহমেদ সে সময় সেনাপ্রধান ছিলেন।
বিডিআর হত্যাকাণ্ডে ন্যায়বিচার নিশ্চিতে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠনের জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন মহল দাবি জানিয়ে আসছিল। এমন প্রেক্ষাপটে ১৭ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী তার দফতরে সংবাদ সম্মেলন করে বিডিআর হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করার ঘোষণা দেন।
সবার দেশ/এওয়াই