যৌথ বাহিনীর কম্বাইন্ড টহল সারাদেশে

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি ও নৌবাহিনীর যৌথ টহল বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। পুরো ঢাকা শহরে অনেক জায়গায় চেকপোস্ট (তল্লাশি চৌকি) বসবে। আইনশৃঙ্খলা নজরদারি করা হবে।
গতকাল সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বেলা তিনটায় সভা শুরু হয়ে বিকাল সোয়া চারটায় শেষ হয়।
পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের জানান, পুরো ঢাকা এবং দেশের যেসব জায়গায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে, সেখানে সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে যৌথ বাহিনীর টহল বাড়ানো হবে। এ ছাড়া সারা দেশে বাড়ানো হবে চেকপোস্ট। দ্রুত চলাচলের জন্য মোটরসাইকেলের টহল বাড়ানো হবে। এ ছাড়া বাড়ানো হবে গোয়েন্দা তৎপরতাও।
এ সময়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানান, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত করতে সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ শুরু করেছে। এ বিষয়ে তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, সন্ধ্যার পর থেকে পরিস্থিতি টের পাবেন। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক বলে দাবি করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। একই সঙ্গে তিনি বলেন, পরিস্থিতি আরও উন্নত করার সুযোগ রয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, মানুষকে আশ্বস্ত করতেই আজকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সভা করা হয়েছে। সন্ধ্যার পর থেকে আপনারা পরিস্থিতি টের পাবেন।
গত কয়েকদিনের পরিস্থিতি নিয়ে আজকের সভায় পর্যালোচনা করা হয়েছে বলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সভায় উপস্থিত ছিলেন। সবাই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে ‘সিরিয়াসলি’ নিয়েছেন। এতে ঢাকাকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে।
সন্ধ্যার পর থেকে যৌথ পেট্রোল শুরু হবে। শফিকুল আলম বলেন, ঢাকায় যেসব জায়গায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে, সেসব জায়গায় পেট্রোল বাড়বে। সোমবার সন্ধ্যা থেকে পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবি ও নৌবাহিনীর যৌথ পেট্রোল শুরু হবে। পুরো ঢাকা শহরে অনেক জায়গায় চেকপোস্ট (তল্লাশি চৌকি) বসবে। আইনশৃঙ্খলা নজরদারি করা হবে।
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক বলে দাবি করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। একই সঙ্গে তিনি বলেন, পরিস্থিতি আরও উন্নত করার সুযোগ রয়েছে। রোববার রাত তিনটায় কেন তাকে সংবাদ সম্মেলন করতে হলো- সাংবাদিকের এ প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, আগে রাত আড়াইটায় কাউকে খুঁজে পাওয়া যেতো না। আমরা দিনেও যেমন কাজ করি, রাতেও কাজ করি। রাতে সংবাদ সম্মেলন করে আপনাদের এটা বোঝানোর জন্য করা হয়েছে যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা শুধু দিনে নয়, রাতেও কাজ করেন।
এ প্রসঙ্গে আলোচনায় উপদেষ্টা আরও বলেন, রোববার রাতে বনশ্রীতে ছিনতাইয়ের যে ঘটনা ঘটেছে, তা আগে জানতে দুই থেকে তিন দিন সময় লেগে যেতো। এখন সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টা সবাই জেনে যাচ্ছে। এ জন্য অনেকের মনে হতে পারে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। আগেও এমনটি ঘটেছে। এখনো ঘটছে। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে, সে জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, স্বাধীনতার পর গত ৫৩ বছরে কোনও গণমাধ্যম এমন লেখেনি যে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আজ খুবই ভালো। আমি নিজেও সাংবাদিক ছিলাম। আমি বলবো, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনও সন্তোষজনক। আপনার পদত্যাগের জন্য সচিবালয়ের বাইরে অনেকে দাবি করছে, এক সাংবাদিকের এ প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, আমিও দেখছি, আমার পদত্যাগের দাবি করা হচ্ছে। আমার দাফন হচ্ছে। জানাজা হয়ে গেছে। কুশপুত্তলিকা দাহ করা হচ্ছে।
‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’-এর বিষয় জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এ অভিযান চালানো হচ্ছে তাড়াতাড়ি পদক্ষেপ নেয়ার জন্য। ৫ই আগস্টের পর ছয় মাস পার হলেও পুলিশ এখনো নির্লিপ্ত কেন- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পুলিশের কর্মকাণ্ড আরও বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যাকে যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, তারা সে কাজ করছে।
এ সময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, আজকের কোর সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয়েছে, গোয়েন্দা সংস্থার অ্যাকটিভিটি আরও বাড়ানো হবে। সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া হবে। তিনি বলেন, ঢাকা শহরে প্রচণ্ড যানজট থাকে। অপরাধীকে ধরতে পুলিশের জন্য ১০০টি মোটরসাইকেল কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছে সভায়। অন্য বাহিনীর সদস্যদের জন্যও মোটরসাইকেল কেনা হবে।
কোনও বাহিনীর অসহযোগিতা দেখছেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, কোনো বাহিনী থেকে অসহযোগিতা তারা দেখছেন না। যত দ্রুত সম্ভব আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করা হবে। আজকে কক্সবাজারে বিমান বাহিনীর ঘাঁটিতে সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, পুরো বিষয়টি জানতে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার ও গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। তারপর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সভায় স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বক্স চৌধুরীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সবার দেশ/এমকেজে