ইসির এজেন্ডা ১৮ কোটি জনগণ: সিইসি
ভোটার দিবস উপলক্ষে গতকাল নির্বাচন ভবনের সামনে শোভাযাত্রা করেন নির্বাচন কমিশনের কর্মীরা। সেখানে সিইসি নাসির উদ্দিন বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে কমিশন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, ‘র্বাচনী আচরণবিধি মানার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য জরুরি। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করে বিজয়ী হওয়া যায়, তবে আখেরে কেউ টিকতে পারে না। দেশ ও জাতির কাছে একসময় তারা ঠিকই প্রত্যাখ্যাত হয়। তাই আমরা বলব, কেউ-ই এ ধরনের অপচেষ্টা করবেন না।
আমরা একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে চাই। আমরা কারো এজেন্ডা নিয়ে কাজ করছি না। ১৮ কোটি মানুষ ও বাংলাদেশের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছি।
গতকাল রবিবার (২ মার্চ) নির্বাচন ভবনের সম্মেলনকক্ষে সপ্তম জাতীয় ভোটার দিবস উপলক্ষে আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
দিবসটিতে গত বছর হালনাগাদ করা চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়। সিইসি জানান, গতকাল পর্যন্ত চূড়ান্ত করা তালিকায় দেশে ভোটারসংখ্যা ১২ কোটি ৩৭ লাখ ৩২ হাজার ২৭৪।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ২০২৪ সালের ২ মার্চ দেশে মোট ভোটার ছিল ১২ কোটি ১৮ লাখ ৫০ হাজার ১৬০ জন। বছর শেষে যোগ হয় আরো ১৮ লাখ ৩৩ হাজার ৩৫২ জন।
এ ছাড়া রিভাইজিং অথরিটির যাচাই-বাছাইয়ে যোগ হয় আরো ৪৮ হাজার ৭৬২ জন।
সব মিলিয়ে ভোটারসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি ৩৭ লাখ ৩২ হাজার ২৭৪, যাদের মধ্যে ছয় কোটি ৩৩ লাখ ৬১ হাজার ৬১৫ জন পুরুষ এবং ছয় কোটি তিন লাখ ৬৯ হাজার ৬৬৫ জন নারী। এ ছাড়া হিজড়া বা তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৯৯৪ জন। সব মিলিয়ে এক বছরে ভোটার বেড়েছে ১.৫৪ শতাংশ।
এ ছাড়া ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গত ২০ জানুয়ারি বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম শুরু হয়।
এ কার্যক্রমে গত ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিদ্যমান তালিকা থেকে ১০ লাখ ৩৯ হাজার ২২ জন মৃত ভোটার শনাক্ত করা হয়। আর নতুন ভোটার হবেন এমন ৩৭ লাখ ৪৫ হাজার নাগরিকের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। গত ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে এসব নাগরিকের ছবি তোলা, আঙুলের ছাপ নেয়া ও চোখের আইরিশের প্রতিচ্ছবি সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে। চলবে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত। এরপর খসড়া তালিকা প্রকাশসহ অন্যান্য বিধিবদ্ধ কাজ সম্পন্ন করে আগামী ৩০ জুনের মধ্যে নতুন চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে।
ভোটার দিবস উপলক্ষে গতকাল নির্বাচন ভবনের সামনে শোভাযাত্রা করেন নির্বাচন কমিশনের কর্মীরা। সেখানে সিইসি নাসির উদ্দিন বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে কমিশন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ভোটার দিবসের আলোচনাসভায় সিইসি আরো বলেন, এবার ভিন্ন প্রেক্ষাপটে ভোটার দিবস পালন করা হচ্ছে। আগে ভোট ছিল অধিকার। যে অধিকার অর্জন করতে গিয়ে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে। তবে এবার আমরা নিজেরাই চেষ্টা করছি একটি সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে। তাই এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, তোমার আমার বাংলাদেশে, ভোট দেব মিলেমিশে।
তিনি বলেন, এবার বলতে হবে ভোট আমাদের দায়িত্ব। একটি অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিয়ে জাতির প্রত্যাশা অনেক। রাজনৈতিক নেতারা বিভিন্ন মতামত দিচ্ছেন। এটিই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। তার পরও আমরা আমাদের দায়িত্ব ঠিকভাবে পালনের চেষ্টা করেছি।
নির্বাচন কমিশনার বেগম তামিদা আহমদ বলেন, খোলা মাঠে ব্যালট বাক্স স্থাপন করে ভোট আয়োজন করার প্রস্তাব দিলাম। যদিও এটি আমার ব্যক্তিগত অভিমত। আমি বিশ্বাস করি, এ ব্যবস্থা ভোটের স্বচ্ছতা প্রমাণে সহায়ক হবে। তবে এ ক্ষেত্রে আগে আমাদের দায়িত্বশীল হতে হবে।
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার আবুল ফজল মো. সানাউল্লহ (অব.) বলেন, ভোটার তালিকা হালনাগাদ একটি চলমান প্রক্রিয়া। বিগত দিনে বিভিন্ন কারণে অনেকে ভোটার হতে পারেননি। অথবা কেউ কেউ অনীহার কারণে ভোটার হননি। ভঙ্গুর নির্বাচনী পরিস্থিতিতে গণতন্ত্র উত্তরণের বাস্তব সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ভোটের প্রতি অনেকের আগ্রহ বেড়েছে। তাই ৩০ জুনের মধ্যে আরেক দফা নতুন ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে।
তিনি বলেন, এবারের ভোটার দিবস অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। যাতে কেউ অস্বচ্ছ বা ভুয়া ভোটার তালিকা প্রণয়ন না করতে পারে। রাতের ভোট দেখতে চায় না কমিশন।
অনুষ্ঠানে পঙ্গু হাসপাতাল ও জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ১৩ জনের হাতে স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র তুলে দেন সিইসি। তার আগে ভোটার দিবস উপলক্ষে একটি শোভাযাত্রা বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
সবার দেশ/এনএন